কাফির মুশরিকসৃষ্ট ভয়ঙ্কর বিপদ আপদ ও ঘোর সামাজিক অনাচার এবং অবক্ষয় জনিত অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় এমন সব সূরাহ ও আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয়েছিল যার মধ্যে নিবিড় অথচ আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে ইসলামের মৌলিক নিয়মকানুনের উপর প্রমাণাদি ও দালায়েল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেই সময় উল্লে­খিত নিয়ম কানুনের পাশাপাশি দাওয়াত এবং তাবলীগের কাজও পূর্ণোদ্যমে চলছিল। এ আয়াত সমূহে ইসলামের অনুসারীগণকে এমন সব মৌলিক কাজ কর্ম করতে বলা হচ্ছিল যার উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তা‘আলা মানবগোষ্ঠির সবচাইতে উন্নত সমাজ অর্থাৎ ইসলামী সমাজের নির্মাণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। উল্লেখিত আয়াতসমূহের মাধ্যমে মুসলিমগণের আবেগ ও অনুভূতিকে স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তা দান কল্পে করা হচ্ছিল। আয়াতে কারীমাঃ

‏(‏أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوْا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْاْ مِن قَبْلِكُم مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء وَزُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللهِ أَلا إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيْبٌ‏)‏ ‏[‏البقرة‏:‏214 ‏]‏ ‏

‘‘তোমরা কি এমন ধারণা পোষণ কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে, অথচ এখনও পর্যন্ত তোমাদের আগের লোকেদের মত অবস্থা তোমাদের সামনে আসেনি? তাদেরকে অভাবের তীব্র তাড়না এবং মসীবত স্পর্শ করেছিল এবং তারা এতদূর বিকম্পিত হয়েছিল যে, নাবী ও তার সঙ্গের মু’মিনগণ চিৎকার করে বলেছিল- আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।’ (আল-বাক্বারাহ ২ : ২১৪)

(‏الم أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوْا أَن يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِن قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ‏)‏ ‏[‏العنكبوت‏:‏1‏- 3‏]

‘আলিফ-লাম-মীম। লোকেরা কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম; তারপর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যেবাদী।’ [আল-‘আনকাবূত (২৯) : ১-৩]

আর তাদেরই পাশে পাশে এমনও আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হচ্ছিল যার মধ্যে কাফির ও বিরুদ্ধাচরণকারীদের প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের জন্য কোন প্রকার সুযোগ সুবিধার অবকাশই দেয়া হয় নি। অধিকন্তু, তাদেরকে অত্যন্ত সহজ এবং সুস্পষ্টভাবে এটা বলে দেয়া হয়েছে যে, যদি কেউ আপন ভ্রষ্টতা ও অবাধ্যতায় একগুঁয়েমী ভাব পোষণ করে থাকে তাহলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এর প্রমাণ স্বরূপ বিগত জাতিগুলোর এমন সব ঘটনা এবং ঐতিহাসিক সাক্ষ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে যদ্দ্বারা এটা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, নিজের বন্ধু এবং শত্রুদের ক্ষেত্রে আল্লাহর রীতিনীতি এবং ব্যবস্থাদি কি রয়েছে? তারপর ভয় প্রদর্শনের পাশাপাশি করুণা এবং অনুগ্রহের কথাও বলা হয়েছে। তাছাড়া উপদেশ প্রদান ও গ্রহণ এবং আদেশ ও পথ প্রদর্শনের দায়িত্বও আদায় করা হয়েছে যেন প্রকাশ্য ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ব্যক্তিগণ বিরত হতে চাইলে বিরত হতে পারে।

প্রকৃতই কুরআন মাজীদ মুসলিমগণকে অন্য এক জগতে পরিভ্রমণে রত রেখেছিল এবং তাদিগকে সৃষ্টির বিভিন্ন দৃশ্যপট, প্রভূত্বের পরিপাট্য, লিল্লাহিয়াতের চরমোৎকর্ষ এবং অনুকম্পা অনুগ্রহ, দয়াদাক্ষিণ্য, সন্তুষ্টি ইত্যাদি সম্পর্কিত এমন সব দ্বীপ্তিময় দৃশ্য প্রদর্শন করা হচ্ছিল যে, সেগুলোর আকর্ষণ ও মোহের সামনে কোন প্রতিবন্ধকতাই টিকে থাকতে পারে নি।

উপরন্তু, সে সকল আয়াতে মুসলিমগণকে যে সব সম্বোধন করা হচ্ছিল তা হলো-

يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ

“তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর দয়া ও সন্তুষ্টির, আর জান্নাতের যেখানে তাদের জন্য আছে স্থায়ী সুখ-সামগ্রী”। (তাওবাহ : ২১ আয়াত)

তার মধ্যে এমনও আয়াত রয়েছে যাতে সীমালংঘনকারী কাফিরদের বিরোধীতার পরিণতির চিত্র অংকন করা হয়েছে-আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ

“যেদিন তাদেরকে মুখের ভরে আগুনের মধ্যে হিঁচড়ে টেনে আনা হবে (তখন বলা হবে) ‘জাহান্নামের স্পর্শ আস্বাদন কর”। (ক্বামার : ৪৮ আয়াত)