তৃতীয় পন্থা : অতীতকালের ঘটনাবলী এবং উপাখ্যান সমূহ এবং কুরআন কারীমে বর্ণিত বিষয়াদির মধ্যে অর্থহীন বাগড়া বা প্রতিদ্বন্দ্বীতার ধূম্রজাল সৃষ্টি করে জনমনে ধাঁধার সৃষ্টি করা এবং মুক্ত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ না দেয়া (الْحِيْلُوْلَةُ بَيْنَ النَّاسِ وَبَيْنَ سِمَاعِهِمْ الْقُرْآن, وَمُعَارَضَتُهُ بِأَسَاطِيْرِ الْأَوَّلِيْنَ):

উপযুক্ত সন্দেহের বশবর্তী হয়ে মুশরিকগণ মানুষদেরকে তাদের সাধ্যমত কুরআন ও ইসলামের দাওয়াতের কথা শ্রবণ করতে বাধা প্রদান করতো। তারা যখন দেখতে যে, নাবী (ﷺ) লোকেদেরকে দীনের পথে আহবান করছে বা সালাত আদায় করছে, কুরআন তেলাওয়াত করছে তখন তারা মানুষদেরকে সেখান হতে তাড়িয়ে দিত, হৈচৈ-হৈ-হুল্লোড়, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, হট্টগোল পাকিয়ে দিত, গান গাইতো এবং নানা খেল-তামাশায় মেতে উঠত। এ বিষয়ে কুরআনের বাণী,

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوا لِهَٰذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ

“কাফিররা বলে- এ কুরআন শুনো না, আর তা পড়ার কালে শোরগোল কর যাতে তোমরা বিজয়ী হতে পার।” (হা-মীম সাজদাহ ৪১ : ২৬)

অবস্থা এমন করে ফেলতো যে, নবী (ﷺ) সেখানে আর লোকেদের কুরআন তেলাওয়াত শোনাতে পারতেন না। এ অবস্থা পঞ্চম নবুওয়াতী বর্ষের শেষ অবধি চলে। অনেক সময় রাস্তাঘাটে তাঁর তেলাওয়াত করার উদ্দেশ্য না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে মুশরিকরা এরকম হট্টগোল বাধাত।

প্রসঙ্গক্রমে এখানে নাযর বিন হারিসের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। সে ছিল কুরাইশদের মধ্যে অন্যতম শয়তান। নযর বিন হারিস একদা হীরাহ চলে গেলেন। সেখানে রাজা-বাদশাহদের ঘটনাবলী, ইরানের বিখ্যাত বীর রুস্তম ও প্রাচীন গ্ৰীক সম্রাট আলেকজান্ডারের কাহিনী শিখলেন। এ সব শেখার পর তিনি মক্কায় প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘটনাক্রমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন জায়গায় আল্লাহর নির্দেশাবলী নিয়ে আলোচনা করতেন এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করতেন তখন সেই ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলতেন, ‘আল্লাহর শপথ হে কুরাইশগণ! আমার কথা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কথার চেয়ে উত্তম। এরপর তিনি পারস্য সম্রাটদের, রুস্তম এবং সেকান্দার বাদশাহর (আলেকজান্ডার) কাহিনী শোনাতে আরম্ভ করতেন এবং বলতেন, বল, কোনদিক দিয়ে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কথা আমার কথার চেয়ে উত্তম।[1]

ইবনে আব্বাসের বর্ণনা সূত্রে এটাও জানা যায় যে, ইসলাম বৈরিতার চরম পর্যায়ের ব্যবস্থা হিসেবে নাযর একাধিক ক্রীতদাসী রেখেছিলেন। যখন তিনি জানতে পারতেন যে, কোন লোক ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছে করছে তখন সেই লোকের প্রতি এক ক্রীতদাসীকে নিয়োজিত করে দিতেন। ক্রীতদাসীকে বলতো তুমি তাকে খাওয়া দাওয়া করাও এবং তার মনোরঞ্জনের জন্য গীত গাও, বাদ্য বাজাও। মুহাম্মাদ যে বিষয়ের প্রতি আহবান করছে এটা তার চেয়ে উত্তম।[2] এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে :

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ

‘কিছু মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে আর আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে।’ (লুক্বমান ৩১ :৬)

[1] ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ২৯৯-৩০০ পৃঃ, ৩৫৮ পূঃ । শাইখ আবদুল্লাহ মুখতাসারুস সীরাহ পৃঃ ১১৭-১১৮।

[2] ফাতহুল কাদীর, ইমাম শাওকানী, ৪র্থ খণ্ড ২৩৬ পৃঃ ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থসমূহ।