وَالْمُنْكَرُ الْفَرْدُ بِهِ رَاوٍ غَدَا | تَعْدِيْلُهُ لا يَحْمِلُ التَّفَرُّدَا

‘মুনকার’: একজন রাবির বর্ণিত ফার্‌দ, যার আদালত নিঃসঙ্গতা ধারণ করতে পারে না”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের ত্রিংশ প্রকার মুনকার। এ প্রকার যদি লেখক শাযের সাথে উল্লেখ করতেন, তাহলে ভালো হত, কারণ শায হাদিসে যেরূপ মুখালিফাত রয়েছে, এখানেও মুখালিফাত আছে। শায হাদিসে সেকাহ বা মাকবুল রাবি তাদের চেয়ে উত্তম রাবির মুখালিফাত করেন; আর মুনকার হাদিসে দ্বা‘ঈফ রাবি সেকাহ রাবির মুখালিফাত করে।

‏ُمنْكَرُ‏‏ কর্মবাচক বিশেষ্য, অর্থ প্রত্যাখ্যাত, অস্বীকৃত ও অপরিচিত।

‘মুনকার’ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “মুনকার সে ফার্‌দ হাদিস, যা শুধু একজন রাবি বর্ণনা করেছে, যার একা আদালত গ্রহণযোগ্য নয়”। উদাহরণত ইব্‌ন মাজাহ বর্ণনা করেন:

قال ابن ماجة القزويني –رحمه الله- حَدَّثَنَا أَبُو بِشْرٍ بَكْرُ بْنُ خَلَفٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ قَيْسٍ الْمَدَنِيُّ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " كُلُوا الْبَلَحَ بِالتَّمْرِ، كُلُوا الْخَلَقَ بِالْجَدِيدِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَغْضَب، وَيَقُولُ: بَقِيَ ابْنُ آدَمَ حَتَّى أَكَلَ الْخَلَقَ بِالْجَدِيدِ "

এ সনদে ইয়াহইয়া ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন কায়েস আল-মাদানি দুর্বল, যার একলা বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।[1] অতএব মুনকার।

ইমাম মুসলিম সহি ‘মুসলিমে’র ভূমিকায় মুনকারের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন:

"وَعَلَامَةُ الْمُنْكَرِ فِي حَدِيثِ الْمُحَدِّثِ، إِذَا مَا عُرِضَتْ رِوَايَتُهُ لِلْحَدِيثِ عَلَى رِوَايَةِ غَيْرِهِ مِنْ أَهْلِ الْحِفْظِ وَالرِّضَا، خَالَفَتْ رِوَايَتُهُ رِوَايَتَهُمْ، أَوْ لَمْ تَكَدْ تُوَافِقُهَا، فَإِذَا كَانَ الأَغْلَبُ مِنْ حَدِيثِهِ كَذَلِكَ، كَانَ مَهْجُورَ الْحَدِيثِ غَيْرَ مَقْبُولِهِ وَلَا مُسْتَعْمَلِهِ".

“আর মুহাদ্দিসের হাদিসে মুনকারের নিদর্শন: যখন তার বর্ণিত হাদিসটি অধিক স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ও গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসের বর্ণিত হাদিসের সামনে রাখা হয়, তার বর্ণনা তাদের বর্ণনার বিপরীত সাব্যস্ত হয়, অথবা তাদের বর্ণনার সাদৃশ্য হয় না, যদি তার অধিকাংশ হাদিস এরূপ হয়, তাহলে হাদিসের ক্ষেত্রে সে পরিত্যক্ত, অগ্রহণযোগ্য ও তার হাদিস আমল যোগ্য নয়”।[2]

ইব্‌নুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “মুনকার দু’প্রকার: ক. সেকাহ রাবির বিপরীত দুর্বল রাবির বর্ণনা। খ. এমন [দুর্বল] রাবির ফার্‌দ হাদিস, যার একলা বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়”।

হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “দুর্বল রাবি যদি সেকাহ রাবির বিরোধিতা করে, তাহলে সেকাহ রাবির হাদিসকে মারূফ ও দুর্বল রাবির হাদিসকে মুনকার বলা হয়...”[3] অতএব হাফেয মুনকারের জন্য দু’টি শর্তারোপ করেন: ১. রাবির দুর্বল হওয়া এবং ২. অধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করা। এ দু’শর্ত যুক্ত হাদিস মুনকার।

হাফেয রাহিমাহুল্লাহ্ অন্যত্র বলেন: “মাজহুল রাবির একলা বর্ণনা, অথবা দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন রাবির একলা বর্ণনা, অথবা এক শায়খের ক্ষেত্রে দুর্বল অপর শায়খের ক্ষেত্রে দুর্বল নয় রাবির একলা বর্ণনা, যার পক্ষে মুতাবে‘ বা শাহেদ নেই, এ জাতীয় হাদিসও একপ্রকার মুনকার, যা অনেক মুহাদ্দিসের লিখনিতে পাওয়া যায়”।[4]

সারাংশ: মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন অর্থে ‘মুনকার’ প্রয়োগ করেন, যেমন:

১. কেউ বলেন: মাতরুক রাবির মুফরাদ বর্ণনা মুনকার।

২. কেউ বলেন: সেকাহ রাবির বিপরীত দুর্বল রাবির হাদিস মুনকার।

৩. কেউ বলেন: দুর্বল রাবির একা বর্ণিত হাদিস মুনকার।

৪. কেউ বলেন: যারা হাফেযে হাদিস নয়, তাদের মুফরাদ বর্ণনা মুনকার।

৫. কেউ বলেন: শরীয়তের প্রসিদ্ধ বিধান কিংবা অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিষয়ের মুখালিফ বর্ণনা মুনকার।৬. কেউ বলেন: জাল হাদিস মুনকার, ইত্যাদি।

>
[1] ইব্‌ন মাজাহ: (৩৩৩০), সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি: (৬৬৮৭)

[2] মুকাদ্দামাতু মুসলিম: (১/৭)

[3] আন-নুযহাহ্‌: (পৃ.৯৮)

[4] আন-নুকাত: (২/৬৭৫)