مُعَنْعَنٌ كَعَنْ سَعِيدٍ عَنْ كَرَمْ |وَمُبْهَمٌ ما فِيهِ رَاوٍ لَمْ يُسَمْ

‘মু‘আন‘আন’: যেমন সাঈদ বর্ণনা করেন ‘কারাম’ থেকে। আর যার সনদে রাবির নাম উল্লেখ করা হয়নি তাই ‘মুবহাম’। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের একাদশ ও দ্বাদশ প্রকার ‘মু‘আন‘আন’ ও ‘মুবহাম’। হাদিসের এ দু’প্রকারের সম্পর্ক সনদের সাথে।

‏معَنْعَنٌ‏ কর্মবাচক বিশেষ্য, যে বাক্যে অধিকহারে عَنْ শব্দ প্রয়োগ করা হয় ‘তাকে মু‘আন‘আন’ বলা হয়। এ থেকে ‘আন’ বিশিষ্ট্য সনদকে ‘মু‘আন‘আন’ বলা হয়।

‘মু‘আন‘আন’ প্রকারের ক্ষেত্রে লেখক শুধু উদাহরণ পেশ করেছেন, সংজ্ঞা দেননি, তবে সংজ্ঞা দ্বারা উদ্দেশ্য বস্তুর পরিচয় দেওয়া, যদি উদাহরণ দ্বারা সে উদ্দেশ্য হাসিল হয় সংজ্ঞার প্রয়োজন নেই। যেমন ‘মু‘আন‘আন’: عَن سَعيدٍ عَنْ كَرَمْ এটাই ‘মু‘আন‘আন’ সনদের উদাহরণ।

হাদিসের পরিভাষায় ‘মু‘আন‘আন’ সে সনদকে বলা হয়, যেখানে রাবি নিজ শায়খ থেকে عَنْ শব্দ দ্বারা হাদিস বর্ণনা করেন। সনদে একবার ‘আন’ শব্দ থাকাই ‘মু‘আন‘আন’ হওয়ার জন্য যথেষ্ট, যেমন রাবি حدثني অথবা أخبرني অথবা سمعت ইত্যাদি শব্দের পরিবর্তে বলল: عن نافع عن ابن عمر - رضي الله عنهما এ জাতীয় সনদকে ‘মু‘আন‘আন’ বলা হয়।

এ পরিচ্ছদে উসুলে হাদিসের কিতাবে অপর একপ্রকার উল্লেখ করা হয় مُؤَنَّنْ ‘মুআন্নান’ বা مُؤَنْأَنْ ‘মুআনআন’ কর্মবাচক বিশেষ্য, আভিধানিক অর্থ أنَّ শব্দ যোগে গঠিত বাক্য। ‏مُعَنْعَنٌও مؤنأن প্রায় সমোচ্চারিত শব্দ ও উভয় কর্মবাচক বিশেষ্য।

হাদিসের পরিভাষায়: “সনদের এক বা একাধিক জায়গায় ‘আন্না’ শব্দ ব্যবহার করে রাবি যদি তার শায়খ থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তাহলে সে সনদকে ‘মুআন্নান’ বা ‘মুআনআন’ বলা হয়, যেমন রাবি বলল: حدثني فلان أن فلاناً قال‏:‏ إلخ‏.

‘মু‘আন‘আন’ ও ‘মুআন্নান’ হাদিসের হুকুম মুত্তাসিল, তবে রাবির তাদলিস করার অভ্যাস থাকলে ইত্তিসালের বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে মুত্তাসিল বলা যাবে না। কারণ, মুদাল্লিস[1] কখনো সনদ মুত্তাসিল বুঝানোর জন্য নিজ শায়খকে বাদ দিয়ে শায়খের শায়খ থেকে ‘আন’ শব্দ প্রয়োগ করে বর্ণনা করে। মুদাল্লিসের বাদ দেওয়া শায়খকে যেহেতু আমরা জানি না, তাই তার দ্বাবত ও আদালত সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। অতএব অপর সনদ বা তার বর্ণিত অপর হাদিস দ্বারা যতক্ষণ না শায়খ থেকে শ্রবণ করেছে প্রমাণিত হবে, আমরা ‘মুআনআন’ হাদিসকে মুত্তাসিল বলব না।

‘মু‘আন‘আন’ তিনটি শর্তে মুত্তাসিল হয়:

১. ‘আন’ প্রয়োগকারী রাবির দ্বাবত ও আদালত থাকা জরুরি।

২. রাবির তাদলিসের স্বভাব মুক্ত হওয়া জরুরি।

৩. রাবি ও শায়খের সাক্ষাত প্রমাণিত হওয়া জরুরি।

১-নং ও ২-নং শর্তের ব্যাখ্যা সবার নিকট এক, তবে রাবি ও শায়খের সাক্ষাতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আলেমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন।

কেউ বলেন: সাক্ষাত অর্থ রাবি ও শায়খের সাথে জীবনে অন্তত একবার সাক্ষাত হওয়া। ইমাম বুখারি এ মতের প্রবক্তা।

কেউ বলেন: সাক্ষাত অর্থ রাবি ও শায়খের সাথে সাক্ষাত সম্ভব হওয়া। এ মতের প্রবক্তা ইমাম মুসলিম।

‘বাইকুনিয়া’র ব্যাখ্যাকার সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আমার নিকট ইমাম মুসলিমের মাযহাব গ্রহণ করা উত্তম, যতক্ষণ না কোনো মুহাদ্দিস সনদে ইল্লতের প্রশ্ন তোলেন।[2]

>
[1] তাদলীস সংক্রান্ত আলোচনা সামনে আসবে। তবে এখানে এটা বোঝা আবশ্যক যে, তাদলীস হচ্ছে বর্ণনাকারী কর্তৃক দোষ-ত্রুটি গোপন করা। তা বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। [সম্পাদক]

[2] জাওয়াহির: (১৭২)