‏"مَشْهورٌ‏"‏ এর আভিধানিক অর্থ প্রসিদ্ধ।

‘মাশহূর’ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “তিন থেকে অধিক রাবির বর্ণিত হাদিস মাশহূর”। এ সংজ্ঞা অধিকাংশ মুহাদ্দিসের সংজ্ঞার খিলাফ।

অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মতে ‘তিন বা তার চেয়ে অধিক রাবির বর্ণিত হাদিস মাশহূর, যদি মুতাওয়াতির পর্যায়ে না পৌঁছে’। এ সংজ্ঞা অধিক বিশুদ্ধ, তবে উভয় সংজ্ঞা মোতাবেক মাশহূরের প্রসিদ্ধি মুতাওয়াতির পর্যন্ত না হওয়া জরুরি।

মানুষের শ্রেণীভাগ হিসেবে মাশহূর প্রধানত দু’প্রকার: ক. সাধারণের নিকট মাশহূর ও খ. আলেমদের নিকট মাশহূর।

ক. সাধারণের নিকট হাদিস মাশহূর হওয়ার কোনো মূল্য নেই। তাদের নিকট অনেক জাল হাদিসও মাশহূর, যেমন:

‏«حُبُّ الْوَطَنِ مِنَ الإِيمَانِ»

“দেশ প্রেম ঈমানের অংশ”।

সাধারণ লোকেরা এ হাদিসকে সহি হিসেবে জানে, অথচ সহি নয়। তার অর্থও ভুল, কারণ দেশপ্রেম গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতা। তাই তাদের নিকট মাশহূর হাদিস মূল্যহীন। এ প্রকার হাদিসের উপর অনেক মুহাদ্দিস স্বতন্ত্র কিতাব লিখেছেন, যেমন:

‏"‏تمييز الطيب من الخبيث فيما يدور على ألسنة الناس من الحديث"‏‏.

"المقاصد الحسنة في الأحاديث المشتهرة"‏

"كشف الخفا ومزيل الألباس فيما اشتهر من الأحاديث في ألسنةالناس"

খ. আলেমদের শ্রেণীভাগ হিসেবে তাদের নিকট প্রসিদ্ধ হাদিস বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়: মুহাদ্দিসদের নিকট মাশহূর, ফকিহদের নিকট মাশহূর, ভাষাবিদদের নিকট মাশহূর ইত্যাদি।

আলেমদের নিকট মাশহূর হাদিস কেউ দলিল হিসেবে গ্রহণ করেন, যদিও বিনা সনদে হয়। তারা বলেন: আলেমদের নিকট কোনো হাদিস মাশহূর হওয়া, তার উপর তাদের আমল করা ও তাকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা প্রমাণ করে তার শক্তিশালী ভিত্তি অবশ্যই আছে। যেমন,

«لَا يُقَادُ الْوَالِدُ بِالْوَلَدِ»

“সন্তানের কারণে পিতা থেকে কিসাস নেওয়া হবে না”।[1] এ হাদিস আলেমদের নিকট মাশহূর, তাই অনেকে গ্রহণ করেছেন।

কেউ বলেন: আলেমদের নিকট মাশহূর হাদিস গ্রহণীয় নয়।

কেউ ব্যাখ্যা দেন: আলেমদের নিকট মাশহূর হাদিস কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক হলে গ্রহণীয়, অন্যথায় পরিত্যাজ্য। এ মত সঠিক। কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী হলে পরিত্যাজ্য, যেমন:

«لَا يُقَادُ الْوَالِدُ بِالْوَلَدِ»

“সন্তানের কারণে পিতা থেকে কিসাস নেয়া হবে না”।[2] এ হাদিস কুরআন বিরোধী। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

﴿ وَكَتَبۡنَا عَلَيۡهِمۡ فِيهَآ أَنَّ ٱلنَّفۡسَ بِٱلنَّفۡسِ وَٱلۡعَيۡنَ بِٱلۡعَيۡنِ وَٱلۡأَنفَ بِٱلۡأَنفِ وَٱلۡأُذُنَ بِٱلۡأُذُنِ وَٱلسِّنَّ بِٱلسِّنِّ وَٱلۡجُرُوحَ قِصَاصٞۚ فَمَن تَصَدَّقَ بِهِۦ فَهُوَ كَفَّارَةٞ لَّهُۥۚ وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٥ ﴾ [المائ‍دة: ٤٥]

“আর আমি এতে তাদের উপর অবধারিত করেছি ‎‎যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চোখের বিনিময়ে চোখ, ‎নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান ও ‎‎দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমের বিনিময়ে ‎সমপরিমাণ জখম। অতঃপর যে তা ক্ষমা করে ‎‎দেবে, তার জন্য তা কাফফারা হবে। আর আল্লাহ ‎যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা ‎করবে না, তারাই যালিম”।[3] এ আয়াতে কিসাস থেকে পিতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِصَاصُ فِي ٱلۡقَتۡلَىۖ ٱلۡحُرُّ بِٱلۡحُرِّ وَٱلۡعَبۡدُ بِٱلۡعَبۡدِ وَٱلۡأُنثَىٰ بِٱلۡأُنثَىٰۚ فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ ذَٰلِكَ تَخۡفِيفٞ مِّن رَّبِّكُمۡ وَرَحۡمَةٞۗ فَمَنِ ٱعۡتَدَىٰ بَعۡدَ ذَٰلِكَ فَلَهُۥ عَذَابٌ أَلِيمٞ ١٧٨ ﴾ [البقرة: ١٧٨]

“হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের ‎উপর ‘কিসাস’ ফরয করা হয়েছে। স্বাধীনের ‎বদলে স্বাধীন, দাসের বদলে দাস, নারীর ‎বদলে নারী। তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা ‎হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে ‎সততার অনুসরণ করবে এবং সুন্দরভাবে ‎তাকে আদায় করে দেবে। এটি তোমাদের ‎রবের পক্ষ থেকে হালকাকরণ ও রহমত। ‎সুতরাং এরপর যে সীমালঙ্ঘন করবে, তার ‎জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব”।[4]

এ হাদিস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত অপর সহি হাদিসেরও বিপরীত, যেমন:

«لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: زِنًا بَعْدَ إِحْصَانٍ، أَوِ ارْتِدَادٍ بَعْدَ إِسْلَامٍ، أَوْ قَتْلِ نَفْسٍ بِغَيْرِ حَقٍّ، فَقُتِلَ بِهِ»

“তিনটি অপরাধের কোন একটি ব্যতীত মুসলিমের রক্ত হালাল নয়: বিবাহের পর যেনা করা, অথবা ইসলামের পর মুরতাদ হওয়া, অথবা কাউকে বিনা অপরাধে হত্যা করা, এর বিনিময়ে হত্যা করা হবে”।[5] এখানেও কিসাস থেকে পিতাকে মুক্ত রাখা হয়নি। অতএব মাশহূর হাদিস কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী তাই গ্রহণীয় নয়।

[1] তিরমিযি: (১৪০০), দারা কুতনি: (৩২৫২)

[2] তিরমিযি: (১৪০০), দারা কুতনি: (৩২৫২)

[3] সূরা মায়েদা: (৪৫)

[4] সূরা বাকারা: (১৭৮)

[5] তিরমিযি: (২০৮৪)