‘‘মাজালিসুল আবরার নামক কেতাবে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ () ফরমাইয়াছেন, যেই লোক সময়মত নামায পড়িল না, নামাযের ওয়াক্ত শেষ হইবার পরে কাযা পড়িল, সেই লোকও জাহান্নামে ৮০ হুকবা শাস্তি ভোগ করিবে। ৮০ বছরে এক হুকবা আর ৩৬০ দিনে এক বৎসর। ৩৬০ * ৮০ = ২৮,৮০০ দিন। অতএব তাকে ২৮,৮০০ দিন এক ওয়াক্ত নামায না পড়িবার জন্য দোজখের আগুনে জ্বলিতে হইবে। আর আখেরাতের দিন হইবে দুনিয়ার এক সহস্র বৎসরের তুল্য। এই হিসাবে এক ওয়াক্ত নামায তরককারীকে দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বৎসর জাহান্নামের আগুনে শাস্তি ভোগ করিতে হইবে।’’[1]

শাইখুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া কান্ধালভী (রাহ) এ হাদীসটিকে তার ‘ফাযায়েলে নামায’ গ্রন্থে নিম্নরূপে উদ্ধৃত করেছেন:

مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ حَتَّى مًضًى وًقْتُهَا ثُمَّ قَضَى عُذِّبَ فِيْ النَّارِ حُقْباً، وَالْحُقْبُ ثَمَانُوْنَ سَنَةً، وَالسَّنَةُ ثَلاَثُمِائَةٍ وَسِتُّوْنَ يَوْماً، كُلُّ يَوْمٍ مِقْدَارُهُ أَلْفُ سَنَةٍ.

‘‘যে ব্যক্তি ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করল না, এবং এরপর সে কাযা করল, তাকে জাহান্নামে এক হুক্বা শাস্তি প্রদান করা হবে। এক হুকবা ৮০ বছর এবং এক বৎসর ৩৬০ দিন এবং প্রত্যেক দিনের পরিমাণ এক হাজার বৎসরের সমান।’’ হাদীসটি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন:

كذا في مجالس الأبرار. قلت: لم أجده فيما عندي من كتب الحديث

‘‘মাজালিসুল আবরার নামক গ্রন্থে এভাবে লিখা হয়েছে। আমার বক্তব্য হলো, আমার নিকটে যত হাদীসের পুস্তক রয়েছে সেগুলোর কোনো পুস্তকেই আমি এ হাদীসটি দেখতে পাই নি।...’’[2]

আর তাঁর মত একজন মুহাদ্দিস যে হাদীস কোনো হাদীসের গ্রন্থে খুঁজে পান নি সে হাদীসের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। বস্ত্তত, হাদীসটি ভিত্তিহীন ও সনদহীন একটি বানোয়াট কথামাত্র। কোথাও কোনো প্রকার সহীহ, যয়ীফ বা বানোয়াট সনদেও এ কথাটি সংকলিত হয় নি। জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে শেষ যুগের কোনো কোনো আলিম তা নিজ গ্রন্থে সনদবিহীনভাবে সংকলন করেছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, এ কথাটি যে কোনো হাদীসের গ্রন্থে নেই এবং ‘মাজালিসুল আবরার’-এর লেখক সনদবিহীনভাবে তা উল্লেখ করেছেন, তা জানা সত্ত্বেও অনেক ভাল আলিম ওয়াযে-আলোচনায় এবং লিখনিতে এ ‘হাদীস’ ও অনুরূপ অনেক জাল ও দুর্বল হাদীস উল্লেখ করেন। মানুষের হেদায়েতের আগ্রহেই তাঁরা তা করেন। মনে হয়, তাঁরা চিন্তা করেন, কুরআন কারীমের হাজার হাজার আয়াত এবং প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থসমূহে সংকলিত হাজার হাজার সহীহ হাদীস মানুষদের হেদায়াত করতে আর সক্ষম নয়। কাজেই এগুলোর পাশাপাশি কিছু দুর্বল (!) হাদীসও আমাদের না বলে উপায় নেই!! অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে, জাল বলে সন্দেহকৃত হাদীস উল্লেখ করাও হাদীস জালিয়াতির মতই কঠিনতম পাপ। আমরা কি অন্যের হেদায়তের আগ্রহে নিজেদের জন্য জাহান্নাম ক্রয় করব?!

[1] মুফতী হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত, পৃ. ১৩১।

[2] শাইখুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধালভী, ফাযায়েলে নামায, পৃ. ৫৭-৫৮।