হাদীসের নামে জালিয়াতি আহল বাইত, সাহাবী-তাবিয়ী ও উম্মাত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৭. উমারের (রা) ইসলাম গ্রহণের দিনে কাবাঘরে আযান শুরু

প্রচলিত আছে যে, উমার (রা) যেদিন ইসলাম গ্রহণ করেন, সে দিন থেকে কাবাঘরে প্রথম আযান শুরু হয়। কথাটি ভুল। উমার (রা) হিজরতের ৫ বৎসর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর আযানের প্রচলন হয় হিজরতের পরে মদীনায়। উমারের (রা) ইসলাম গ্রহণের সময় এবং পরবর্তী প্রায় ৬ বছর যাবৎ আযানের কোনো প্রচলন ছিল না। তবে উমারের (রা) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মক্কায় মুসলিমগণ কাবা ঘরের পাশে নামায আদায় করতে পারতেন না। মক্কার কাফিরগণ তাতে বাধা দিত। উমারের (রা) ইসলাম গ্রহণের পরে তিনি কাফিরদের বাধা প্রতিহত করে নিজে কাবার পাশে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেন এবং তাঁর সাথে অন্যান্য মুসলিমও সেখানে নামায আদায় করেন।[1]

এ তথ্যটি কিভাবে ক্রমান্বয়ে বিকৃত হয়েছে তার একটি নমুনা দেখুন। খাজা নিজামউদ্দীন আউলিয়ার (রাহ) নামে প্রচলিত ‘রাহাতিল কুলূব’ গ্রন্থে রয়েছে তাঁর মুর্শিদ ফরীদ উদ্দীন গঞ্জে শক্কর (রহ) বলেন: ‘‘যতদিন পর্যন্ত হযরত আমিরুল মো'মেনীন ওমর এবনে খাত্তাব (রা) ইসলামে ঈমান আনেন নি ততদিন পর্যন্ত নামাজের আযান গুহায় গহবরে দেয়া হতো। কিন্তু যে দিন আমিরুল মো'মেনীন হযরত ওমর ফারুক (রা) ঈমান আনলেন সে দিন তিনি তলোয়ার মুক্ত করে দাঁড়িয়ে হযরত বেলাল (রা)-কে বললেন, কা’বা ঘরের মেম্বারে উঠে আজান দাও। হযরত বেলাল তার নির্দেশ মতো কাজ করলেন।’’[2]

আমরা জানি যে, এ কথাগুলো সঠিক নয়। উমার (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের আগে বা পরে কখনোই মক্কায় গুহায়, গহবরে বা কাবাঘরে কোথাও আযান দেয়া হয় নি। এ ছাড়া কাবা ঘরের কোনো মিম্বার ছিল না। আমরা দেখেছি যে, এ পুস্তকটি সম্ভবত খাজা নিযামউদ্দীনের নামে জাল করে লেখা। অথবা সরলতার কারণে তাঁরা যা শুনেছেন সহজেই বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন।

[1] ইবনু হিশাম, আস-সীরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ ১/৩৬৯।

[2] হযরত খাজা নিজামউদ্দীন আউলিয়া, রাহাতিল কুলূব, পৃ. ৭১ (১২ মজলিস)।