হাদীসের নামে জালিয়াতি আলিমুল গাইব ও হাযির-নাযির প্রসঙ্গ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৪১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাযির-নাযির হওয়া

রাসূলুল্লাহ ()-এর ‘ইলমুল গাইব’ ও মীলাদে উপস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত আরেকটি প্রচলিত বানোয়াট কথা যে, তিনি ‘হাযির-নাযির’। হাযির-নাযির দুটি আরবী শব্দ। (حاضر) হাযির অর্থ উপস্থিত ও (ناظر) নাযির অর্থ দর্শক, পর্যবেক্ষক বা সংরক্ষক। ‘হাযির-নাযির’ বলতে বোঝান হয় ‘সর্বত্র বিরাজমান ও সবকিছুর দর্শক’। অর্থাৎ তিনি সদা-সর্বদা সর্বত্র উপস্থিত বা বিরাজমান এবং তিনি সদা সর্বদা সবকিছুর দর্শক। স্বভাবতই যিনি সদাসর্বত্র বিরাজমান ও সবকিছুর দর্শক তিনি সর্বজ্ঞ ও সকল যুগের সকল স্থানের সকল গাইবী জ্ঞানের অধিকারী। কাজেই যারা রাসূলুল্লাহ ()-কে ‘হাযির-নাযির’ দাবি করেন, তাঁরা দাবি করেন যে, তিনি শুধু সর্বজ্ঞই নন, উপরন্তু তিনি সর্বত্র বিরাজমান।

সম্মানিত পাঠক, নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন:

প্রথমত: এ গুণটি শুধু আল্লাহর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ আল্লাহ বারংবার বলেছেন যে, বান্দা যেখানেই থাক্ তিনি তার সাথে আছেন, তিনি বান্দার নিকটে আছেন... ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ ()-এর সম্পর্কে কখনোই ঘুণাক্ষরেও কুরআন বা হাদীসে বলা হয় নি যে, তিনি সর্বদা উম্মাতের সাথে আছেন, অথবা সকল মানুষের সাথে আছেন, অথবা কাছে আছেন, অথবা সর্বত্র উপস্থিত আছেন, অথবা সবকিছু দেখছেন। কুরআনের আয়াত তো দূরের কথা একটি যয়ীফ হাদীসও দ্ব্যর্থহীনভাবে এ অর্থে কোথাও বর্ণিত হয় নি। কাজেই যারা এ কথা বলেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ ()-এর নামে মিথ্যা কথা বলেন। কোনো একটি সহীহ, যয়ীফ বা মাউযূ হাদীসেও বর্ণিত হয় নি যে, তিনি বলেছেন ‘আমি হাযির-নাযির’। অথচ তাঁর নামে এ মিথ্যা কথাটি বলা হচ্ছে। এমনকি কোনো সাহাবী, তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ী বা ইমাম কখনোই বলেন নি যে, ‘রাসূলুল্লাহ () হাযির-নাযির’।

দ্বিতীয়ত: কুরআন-হাদীসে বারংবার অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ () ‘ইলমুল গাইব’ বা গোপন জ্ঞানের অধিকারী নন। রাসূলুল্লাহ ()-কে ‘হাযির-নাযির’ বলে দাবি করা উক্ত সকল স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন আয়াত ও হাদীসের সুস্পষ্ট বিরোধিতা করা।[1]

তৃতীয়, আমরা দেখেছি, বিভিন্ন হাদীসে তিনি বলেছেন, উম্মাতের দরুদ-সালাম তাঁর কবরে উপস্থিত করা হয়। রাসূলুল্লাহ ()-কে হাযির-নাযির বলে দাবি করার অর্থ দরুদ-সালাম কবরে পৌঁছানোর হাদীসগুলোকে মিথ্যা বলে গণ্য করা। উম্মাতের দরুদ-সালাম তাঁর কাছে উপস্থিত হয় না, বরং তিনিই উম্মাতের কাছে উপস্থিত হন!! কাজেই যারা এ দাবিটি করছেন, তাঁরা শুধু রাসূলুল্লাহ ()-এর নামে মিথ্যা বলেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। উপরন্তু তাঁরা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ -কে মিথ্যাবাদী বলে দাবি করেন, নাঊযু বিল্লাহ! নাঊযু বিল্লাহ!!

[1] এ বিষয়ক আয়াত ও হাদীসগুলোর জন্য দেখুন গ্রন্থকার রচিত ‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, পৃষ্ঠা ১৯৬-২০৭।