চক্ষু আল্লাহকে দেখতে পারে না বলে কুরআনে বলা হয়েছে:

لاَ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ

‘‘তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত।’’[1]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন: ‘‘কোনো মানুষের জন্যই সম্ভব নয় যে, আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে বা পর্দার আড়াল থেকে ছাড়া তার সাথে কথা বলবেন।’’[2]

মূসা (আঃ) মহান আল্লাহকে দেখতে চেয়েও দেখতে অক্ষম হন। আল্লাহ বলেন: ‘‘মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব। তিনি বলেন: তুমি কখনই আমাকে দেখতে পাবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, তা স্বস্থানে স্থির থাকলে তুমি আমাকে দেখবে। যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চুর্ণ-বিচুর্ণ করল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল...।[3]

এ সকল সুস্পষ্ট নির্দেশনার আলোকে মুসলিম উম্মাহ একমত যে, পৃথিবীতে কেউ আল্লাহকে দেখতে পারে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে একটি সহীহ হাদীসও বর্ণিত হয় নি, যাতে তিনি বলেছেন: ‘‘আমি জাগ্রত অবস্থায় পৃথিবীতে বা মি’রাজে চর্ম চক্ষে বা অন্তরের চক্ষে আল্লাহকে দেখেছি।’’ স্বপ্নের ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ জাগ্রত অবস্থায় অন্তরের দৃষ্টিতে আল্লাহকে দেখেছেন কিনা সে বিষয়ে সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন। আয়েশা (রা) বলেন: ‘‘যে ব্যক্তি বলে যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন, সে ব্যক্তি আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যা কথা বলে।’’[4] ইবনু মাসঊদ (রা) ও অন্যান্য সাহাবীও এ মত পোষণ করেছেন। পক্ষান্তরে ইবনু আববাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মি’রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহকে দেখেছিলেন। আল্লাহ যেমন মূসাকে (আঃ) ‘কথা বলার’ মু’জিযা প্রদান করেন, তেমনি তিনি মুহাম্মাদ ﷺ-কে অন্তরের দৃষ্টিতে দর্শনের মু’জিযা দান করেন।[5]

যারা ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দর্শন দাবি করেছেন, তাঁরা একমত যে, এ দর্শন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য একটি বিশেষ মুজিযা, যা আর কারো জন্য নয় এবং এ দর্শন হৃদয়ের অনুভব, যেখানে কোনো আকৃতির উল্লেখ নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহকে কোনো ‘আকৃতি'তে দেখেছেন, অথবা তিনি ছাড়া কোনো সাহাবী আল্লাহকে দেখেছেন বলে যা কিছু বর্ণিত সবই জাল ও মিথ্যা।

মি’রাজের রত্রিতে বা আরাফার দিনে, বা মিনার দিনে বা অন্য কোনো সময়ে বা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহকে বিশেষ কোনো আকৃতিতে দেখেছেন অর্থে সকল হাদীস জাল। যেমন, তাকে যুবক দেখেছেন, তাজ পরিহিত দেখেছেন, উট বা খচ্চরের পিঠে দেখেছেন... ইত্যাদি সবই জাল ও মিথ্যা।[6]

এজাতীয় ভিত্তিহীন একটি বাক্য:

رَأَيْتُ رَبِّيْ فِيْ صُوْرَةِ شَابٍ أَمْرَدَ

‘‘আমি আমার প্রভুকে একজন দাড়ি-গোঁফ ওঠে নি এমন যুবক রূপে দেখেছি।’’ মুহাদ্দিসগণ বাক্যটিকে জাল বলে ঘোষণা করেছেন।[7]

অনুরূপভাবে উমরের (রা) নামে জালিয়াতগণ বানিয়েছে: ‘‘আমার প্রভুর নূর দ্বারা আমার অন্তর আমার প্রভুকে দেখেছে।’’ আলীর (রা) নামে জালিয়াতগণ বানিয়েছে: ‘‘যে প্রভুকে আমি দেখি না সে প্রভুর ইবাদত করি না।’’[8]

[1] সূরা (৬) আন‘আম: ১০৩ আয়াত।

[2] সূরা (৪২) শূরা: ৫১ আয়াত।

[3] সূরা (৭) আ’রাফ: ১৪৩ আয়াত।

[4] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১১৮১, ৪/১৮৪০, ৬/২৬৮৭; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৫৯।

[5] ইবনু খুযাইমা, কিতাবুত তাওহীদ ২/৪৭৭-৫৬৩।

[6] ইবনু আর্রাক, তানযীহুশ শারীয়াহ ১/১৩৭-১৩৯।

[7] ইবনুল জাওযী, আল-মাওযূ‘আত ১/৮০-৮১, সুয়ূতী, আল- লাআলী ১/২৮-৩১, মোল্লা আলী কারী, আল আসরার, ১২৬ পৃ, আল-মাসনূয়, ৭১-৭৪পৃ।

[8] সিররুল আসরার, পৃ. ৫৭-৫৮।