হাদীসের নামে জালিয়াতি ৪. জালিয়াতি প্রতিরোধে মুসলিম উম্মাহ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

যে ‘হাদীসের’ মধ্যে হাসান হাদীসের শর্তগুলোর কোনো একটি শর্ত অবিদ্যমান দেখা যায়, মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় তাকে ‘যয়ীফ’ হাদীস বলা হয়। অর্থাৎ রাবীর বিশ্বস্ততার ঘাটতি, তাঁর বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণনা বা স্মৃতির ঘাটতি, সনদের মধ্যে কোনো একজন রাবী তাঁর উর্ধ্বতন রাবী থেকে সরাসরি ও স্বকর্ণে হাদীসটি শুনেননি বলে প্রমাণিত হওয়া বা দৃঢ় সন্দেহ হওয়া, হাদীসটির মধ্যে ‘শুযূয’ অথবা ‘ইল্লাত’ বিদ্যমান থাকা... ইত্যাদি যে কোনো একটি বিষয় কোনো হাদীসে মধ্যে থাকলে হাদীসটি যয়ীফ বলে গণ্য।[1]

শর্ত পাঁচটির ভিত্তিতে ‘যয়ীফ’ হাদীসকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন মুহাদ্দিসগণ। সেগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা অপ্রাসঙ্গিক। তবে আমরা বুঝতে পারি যে, কোনো হাদীসকে ‘যয়ীফ’ বলে গণ্য করার অর্থ হলো, হাদীসটি ‘রাসূলুল্লাহ ()-এর কথা নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। বর্ণনাকারীগণের দুর্বলতা বুঝাতে মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেমন (ضعيف، ليس بشيء، لا يعرف، منكر الحديث، متروك، كذاب): দুর্বল, কিছুই নয়, মূল্যহীন, অজ্ঞাত পরিচয়, জঘন্য উল্টোপাল্টা হাদীস বর্ণনাকারী, পরিত্যক্ত, মিথ্যাবাদী, ইত্যাদি।

‘‘যয়ীফ’’ বা দুর্বল হাদীসের দুর্বলতার তিনটি পর্যায় রয়েছে:

৪. ৭. ৩. ১. কিছুটা দুর্বল

বর্ণনাকারী ভুল বলেছেন বলেই প্রতীয়মান হয়, কারণ তিনি যতগুলো হাদীস বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে বেশ কিছু ভুল রয়েছে। তবে তিনি ইচ্ছা করে ভুল বলতেন না বলেই প্রমাণিত। এরূপ ‘‘যয়ীফ’’ হাদীস যদি অন্য এক বা একাধিক এ পর্যায়ের ‘‘কিছুটা’’ যয়ীফ সূত্রে বর্ণিত হয় তাহলে তা ‘‘হাসান’’ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বলে গণ্য হয়।

৪. ৭. ৩. ২. অত্যন্ত দুর্বল (যায়ীফ জিদ্দান, ওয়াহী)

এরূপ হাদীসের বর্ণনাকারীর সকল হাদীস তুলনামূলক নিরীক্ষা করে যদি প্রমাণিত হয় যে, তাঁর বর্ণিত অধিকাংশ বা প্রায় সকল হাদীসই অগণিত ভুলে ভরা, যে ধরনের ভুল সাধারণত অনিচ্ছাকৃতভাবে হয় তার চেয়েও মারাত্মক ভুল, তবে তার বর্ণিত হাদীস ‘‘পরিত্যক্ত’’, একেবারে অগ্রহণযোগ্য বা অত্যন্ত দুর্বল বলে গণ্য করা হবে। এরূপ দুর্বল হাদীস অনুরূপ অন্য দুর্বল সুত্রে বর্ণিত হলেও তা গ্রহণযোগ্য হয় না।

৪. ৭. ৩. ৩. মাউযূ বা বানোয়াট হাদীস

যদি প্রমাণিত হয় যে এরূপ দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বানোয়াট কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে সমাজে প্রচার করতেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে হাদীসের সূত্র (সনদ) বা মূল বাক্যের মধ্যে কমবেশি করতেন, তবে তার বর্ণিত হাদীসকে ‘‘মাওযূ’’ বা বানোয়াট হাদীস বলে গণ্য করা হয়। বানোয়াট হাদীস জঘন্যতম দুর্বল হাদীস।[2]

[1] ইরাকী, আত-তাকয়ীদ, পৃ: ৬২; ফাতহুল মুগীস, পৃ: ৪৯; সাখাবী, ফাতহুল মুগীস ১/১১১; সুয়ূতী, তাদরীবুর রাবী ১/১৭৯; মাহমূদ তাহ্হান, তাইসীরু মুসতালাহ, পৃ. ৬২-৬৩।

[2] বিস্তারিত দেখুন: হাকিম নাইসাপূরী (৪০৫হি), মা’রিফাতু উলুমিল হাদীস, পৃ: ১৪-১৭, ৩৬-৪০, ৫২-৬২, ১১২-১৫১, আল-ইরাকী, ফাতহুল মুগীস, পৃ: ৭-৫১, ১৩৮-১৭৮, আত-তাকয়ীদ ওয়াল ঈদাহ, পৃ: ২৩-৬৩, ১৩৩-১৫৭, ৪২০-৪২১, ড. মাহমূদ তাহহান, তাইসীরু মুসতালাহিল হাদীস, পৃ: ৩৩-১২৫, ১৪৪-১৫৫।