হাদীসের নামে জালিয়াতি ৪. জালিয়াতি প্রতিরোধে মুসলিম উম্মাহ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

মুহাদ্দিসগণ নিরীক্ষামূলক প্রশ্নের মাধ্যমে রাবীর ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত মিথ্যা যাচাই করার চেষ্টা করতেন। এ বিষয়ক ২/১ টি ঘটনা দেখুন:

১. দ্বিতীয় হিজরী শতকের একজন তাবিয়ী উফাইর ইবনু মা’দান বলেন: ‘‘উমর ইবনু মুসা আল-ওয়াজিহী আমাদের কাছে হিমস শহরে করেন আগমন। আমরা হিমসের মসজিদে তার কাছে (হাদীস শিক্ষার্থে) সমবেত হই। তিনি বলতে থাকেন: আপনাদের নেককার শাইখ আমাদেরকে হাদীস বলেছেন। আমরা বললাম: নেককার শাইখ বলতে কাকে বুঝাচ্ছেন? তিনি বলেন: খালিদ ইবনু মাদান। আমি বললাম: আপনি কত সনে তার কাছে থেকে হাদীস শুনেছেন। তিনি বলেন: আমি ১০৮ হিজরীতে তার কাছে হাদীস শিক্ষা করি। আমি বললাম: কোথায় তাঁর সাথে আপনার সাক্ষাত হয়েছিল? তিনি বলেন: আরমিনিয়ায় যুদ্ধের সময়। আমি বললাম: আপনি আল্লাহকে ভয় করুন এবং মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন। খালিদ ইবনু মা’দান ১০৪ হিজরী সনে মৃত্যু বরণ করেছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আপনি তার মৃত্যুর ৪ বছর পরে তার কাছ থেকে হাদীস শিক্ষা করেছেন। অপরদিকে তিনি কখনই আরমিনিয়ায় যুদ্ধে যান নি। তিনি শুধু বাইযান্টাইন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।’’[1]

এভাবে এ রাবীর মিথ্যাবাদিতা প্রমাণিত হওয়ার কারণে মুহাদ্দিসগণ তাকে পরিত্যক্ত ও মিথ্যাবাদী ‘রাবী’ রূপে চিহ্নিত করেছেন। আবু হাতেম রাযী বলেন: উমর ইবনু মূসা পরিত্যক্ত, সে মিথ্যা হাদীস তৈরী করত। বুখারী বলেন: তার বর্ণিত হাদীস আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য। ইবনু মাঈন বলেন: লোকটি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনু আদী বলেন: লোকটি বানোয়াটভাবে হাদীসের সনদ ও মতন তৈরি করত। দারাকুতনী, নাসাঈ প্রমূখ মুহাদ্দিস বলেন: সে পরিত্যক্ত।[2]

২. আবুল ওয়ালীদ তাইয়ালিসী হিশাম ইবনু আব্দুল মালিক (২২৭ হি) বলেন: ‘‘আমি আমির ইবনু আবী আমির আল-খাযযায-এর কাছ থেকে হাদীস লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেছিলাম। একদিন হাদীসের সনদে তিনি বললেন: ‘আমাদেরকে আতা ইবনু আবী রাবাহ (১১৪ হি) বলেছেন’। আমি প্রশ্ন করলাম: আপনি কত সালে আতা থেকে হাদীস শুনেছেন? তিনি বললেন: ১২৪ হি. সালে। আমি বললাম: আতা তো ১১৩/১১৪ সালে ইন্তেকাল করেছেন!’’

এভাবে তার বর্ণনার মিথ্যা ধরা পড়ে। এ মিথ্যা ইচ্ছাকৃত হতে পারে বা অনিচ্ছাকৃত হতে পারে। ইমাম যাহাবী (৭৪৮ হি) বলেন: যদি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে একথা বলে থাকেন তাহলে তিনি একজন মিথ্যাবাদী ও বানোয়াট হাদীস বর্ণনাকারী। আর যদি তিনি ভুলক্রমে আতা ইবনুস সাইব (১৩৬ হি) নামের অন্য তাবিয়ীকে আতা ইবনু আবী রাবাহ বলে ভুল করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে যে, তিনি একজন অত্যন্ত অসতর্ক, জাহিল ও পরিত্যক্ত রাবী।’’[3]

৩. ১ম হিজরী শতকের একজন রাবী সুহাইল ইবনু যাকওয়ান আবু সিনদী ওয়াসিতী। তিনি আয়িশা (রা) থেকে হাদীস শুনেছেন বলে দাবি করতেন। মুহাদ্দিসগণের নিরীক্ষামূলক প্রশ্নের মাধ্যমে তার মিথ্যাচার ধরা পড়েছে। ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বলেন, আমাদেরকে আববাদ বলেছেন: সুহাইল ইবনু যাকওয়ানকে আমরা বললাম: আপনি কি আয়িশা (রা) কে দেখেছেন? তিনি বলেন: হ্যাঁ, দেখেছি। আমরা বললাম: বলুনতো তিনি কেমন দেখতে ছিলেন। তিনি বলেন: তাঁর গায়ের রং কাল ছিল। সুহাইল আরো দাবি করেন যে, তিনি ইবরাহীম নাখয়ীকে দেখেছেন, তাঁর চোখ দুটি ছিল বড় বড়।

সুহাইলের এই বক্তব্য তার মিথ্যা ধরিয়ে দিয়েছে। কারণ আয়েশা (রা) ফর্সা ছিলেন। আর ইবরাহীম নাখয়ীর চোখ নষ্ট ছিল।[4]

[1] ইবনু আবী হাতিম, আল-জারহু ওয়াত তা’দীল ৬/১৩৩, যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ৫/২১৭, ইবনু হাজার আসকালানী, লিসানুল মীযান ৪/৩৩৩।
[2] প্রাগুক্ত।
[3] যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ৪/১৮।
[4] ইবনু আদী, আল-কামিল ৪/৫২১-৫২২।