হাদীসের নামে জালিয়াতি ২. মিথ্যা ও ওহীর নামে মিথ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
২. ৪. ১. আল্লাহর নামে মিথ্যা ও আন্দায কথার নিষেধাজ্ঞা

কুরআন বারবার আল্লাহর নামে মিথ্যা বলতে কঠিনভাবে নিষেধ করেছে। অনুরূপভাবে না-জেনে, আন্দাজে, ধারণা বা অনুমানের উপর নির্ভর করে আল্লাহর নামে কিছু বলতে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ -এর নামে মিথ্যা বলার অর্থ আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা। কারণ রাসূলুল্লাহ আল্লাহর পক্ষ থেকেই কথা বলেন। কুরআনের মত হাদীসও আল্লাহর ওহী। কুরআন ও হাদীস, উভয় প্রকারের ওহীই একমাত্র রাসূলুল্লাহ -এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী পেয়েছে। কাজেই রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে কোনো প্রকারের মিথ্যা, বানোয়াট, আন্দাজ বা অনুমান নির্ভর কথা বলার অর্থই আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা বা না-জেনে আল্লাহর নামে কিছু বলা। কুরআন কারীমে এ বিষয়ে বারংবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।[1] এখানে কয়েকটি বাণী উল্লেখ করছি।

১. কুরআন কারীমে বারংবার বলা হয়েছে:

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا

‘‘আল্লাহর নামে বা আল্লাহর সম্পর্কে যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তার চেয়ে বড় জালিম আর কে?’’[2]

২. অন্যত্র বলা হয়েছে:

وَيْلَكُمْ لا تَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَيُسْحِتَكُمْ بِعَذَابٍ وَقَدْ خَابَ مَنِ افْتَرَى

‘‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। করলে, তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দ্বারা সমূলে ধ্বংস করবেন। যে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’’[3]

৩. কুরআন কারীমে বারংবার না-জেনে, আন্দাজে বা অনুমান নির্ভর করে আল্লাহ, আল্লাহর দীন, বিধান ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন একস্থানে বলা করা হয়েছে:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلالا طَيِّبًا وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ بِالسُّوءِ وَالْفَحْشَاءِ وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لا تَعْلَمُونَ

হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কার্যের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জান না এমন সব বিষয় বলার নির্দেশ দেয়।[4]

৪. অন্যত্র আল্লাহ-সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা- বলেন:

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لا تَعْلَمُونَ

বল, ‘আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসংগত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরীক করা, যার কোনো সনদ তিনি প্রেরণ করেন নি, এবং আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞান নেই।’[5]

এভাবে কুরআনে ওহীর জ্ঞানকে ভেজাল ও মিথ্যা থেকে রক্ষার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ, তাঁর প্রিয় রাসূল (ﷺ), তাঁর দীন, তাঁর বিধান ইত্যাদি কোনো বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, আন্দাজ বা অনুমান নির্ভর কথা বলা কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

[1] সূরা (২) বাকারা: ৮০, ১৬৯; সূরা (৩) আল-ইমরান: ৯৪; সূরা (৪) নিসা: ১৫৭; সূরা (৬) আন‘আম: ২১, ৯৩, ১১৬, ১৪৪, ১৪৮; সূরা (৭) আ’রাফ: ২৮, ৩৩, ৩৭, ৬২; সূরা (১০) ইউনূস: ১৭, ৩৬, ৬৮, ৬৯; সূরা (১১) হূদ: ১৮; সূরা (১৮) কাহফ: ১৫; সূরা (২৩) মু’মিনূন: ৩৮; সূরা (২৯) আনকাবূত: ৬৮; সূরা (৪২) শূরা: ২৪; সূরা (৫৩) নাজম: ২৮, ৩২; সূরা (৬১) সাফ্ফ: ৭ আয়াত।

[2] সূরা (৬) আন‘আম: ২১, ৯৩, ১৪৪; সূরা (৭) আ’রাফ: ৩৭; সূরা (১০) ইউনূস: ১৭; সূরা (১১) হূদ: ১৮; সূরা (১৮): কাহফ: ১৫; সূরা (২৯) আনকাবূত: ৬৮; সূরা (৬১) সাফ্ফ: ৭।

[3] সূরা (২০) তাহা: ৬১ আয়াত।

[4] সূরা (২) বাকারাহ: ১৬৮-১৬৯ আয়াত।

[5] সূরা (৭) আ’রাফ: ৩৩ আয়াত।