হাদীসের নামে জালিয়াতি ২. মিথ্যা ও ওহীর নামে মিথ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

মিথ্যা সর্বদা ঘৃণিত। তবে তা যদি ওহীর নামে হয় তাহলে তা আরো বেশি ঘৃণিত ও ক্ষতিকর। সাধারণভাবে মিথ্যা ব্যক্তিমানুষের বা মানব সমাজের জন্য জাগতিক ক্ষতি বয়ে আনে। আর ওহীর নামে মিথ্যা মানব সমাজের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক স্থায়ী ধ্বংস ও ক্ষতি করে। মানুষ তখন ধর্মের নামে মানবীয় বুদ্ধি প্রসূত বিভিন্ন কর্মে লিপ্ত হয়ে জাগতিক ও পারলৌকিক ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হয়।

পূর্ববর্তী ধর্মগুলোর দিকে তাকালে আমরা বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই। আমরা আগেই বলেছি যে, মানবীয় জ্ঞান প্রসূত কথাকে ওহীর নামে চালানোই ধর্মের বিকৃতি ও বিলুপ্তির কারণ। সাধারণভাবে এ সকল ধর্মের প্রাজ্ঞ পন্ডিতগণ ধর্মের কল্যাণেই এ সকল কথা ওহীর নামে চালিয়েছেন। তারা মনে করেছেন যে, তাদের এ সকল কথা, ব্যাখ্যা, মতামত ওহীর নামে চালালে মানুষের মধ্যে ‘ধার্মিকতা’, ‘ভক্তি’ ইত্যাদি বাড়বে এবং আল্লাহ খুশি হবেন। আর এভাবে তারা তাদের ধর্মকে বিকৃত ও ধর্মাবলম্বীদেরকে বিভ্রান্ত করেছেন। কিন্তু তারা বুঝেন নি যে, মানুষ যদি মানবীয় প্রজ্ঞায় এ সকল বিষয় বুঝতে পারতো তাহলে ওহীর প্রয়োজন হতো না।

এর অত্যন্ত পরিচিত উদাহরণ খৃস্টধর্ম। প্রচলিত বিকৃত বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী ‘যীশুখৃস্ট’ তাঁর অনুসারীদের একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে, ইহুদী ধর্মের ১০ মূলনির্দেশ পালন করতে, খাতনা করতে, তাওরাতের সকল বিধান পালন করতে, শূকরের মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত থাকতে ও অনরূপ অন্যান্য কর্মের নির্দেশ প্রদান করেন। সাধু পল (পল) ‘খৃস্টধর্মের প্রচার ও মানুষের মধ্যে ভক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে’ প্রচার করতে থাকেন যে, শুধুমাত্র ‘যীশুখৃস্টকে’ বিশ্বাস ও ভক্তি করলেই চলবে, এ সকল কর্ম না করলেও চলবে। প্রচলিত ইঞ্জিল শরীফের বিভিন্ন স্থানে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বীকার করেছেন যে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের পছন্দ মত মিথ্যা বলি, যেন ঈশ্বরের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এক স্থানে তিনি লিখেছেন: "For if the truth of God hath more abounded through my lie unto his glory; why yet am I also judged as a sinner? কিনতু আমার মিথ্যায় যদি ঈশ্বরের সত্য তাঁহার গৌরবার্থে উপচিয়া পড়ে, তবে আমিও বা এখন পাপী বলিয়া আর বিচারিত হইতেছি কেন?’’[1]।

এভাবে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেন। ক্রমান্বয়ে এ পৌলীয় কর্মহীন ভক্তিধর্মই খৃস্টানদের মধ্যে প্রসার লাভ করে। ফলে বিশ্বের কোটি কোটি মানব সন্তান শিরক-কুফর ও পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু বিশ্বাসেই স্বর্গ, সেহেতু কোনোভাবেই ধর্মোপদেশ দিয়ে খৃস্টান সমাজগুলি থেকে মানবতা বিধ্বংসী পাপ, অনাচার ও অপরাধ কমানো যায় না।

ওহীর নামে মিথ্যা সবচেয়ে কঠিন মিথ্যা হওয়ার কারণে কুরআন কারীমে ও হাদীস শরীফে ওহীর নামে বা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের () নামে মিথ্যা বলতে, সন্দেহ জনক কিছু বলতে বা আন্দাজে কিছু বলতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরে অবতীর্ণ উভয় প্রকারের ওহী যেন কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য অবিকৃতভাবে সংরক্ষিত থাকে সেজন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

[1] পবিত্র বাইবেল (কিতাবুল মোকাদ্দস): নতুন নিয়ম (ইঞ্জিল শরীফ) রোমান (রোমীয়) ৩/৭।