ব্যাংকের সুদ কি হালাল সূচি ও বিবরন শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী ১ টি

পূর্বের পৃষ্ঠাসমূহে ব্যাংকের প্রচলিত নিয়ম-রীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, তার বর্তমান কর্ম- পদ্ধতির ভিত্তিই হল সূদ। এবারে এখানে একটি প্রশ্ন সকলের মনে উঁকি দিতে বাধ্য যে, যদি সূদকে নিশ্চিহ্ন করা হয়, তাহলে ব্যাংকের কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিকল্প পথ কি হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে কিছু প্রস্তাব রাখা আশা করি অপ্রাসঙ্গিক হবে নাঃ-

১- সূদী ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকল্প কোন ব্যবস্থা খোঁজার অর্থ এই যে, ব্যাংকের যে সমস্ত কার্য বর্তমান বাণিজ্যিক পরিস্থিতিতে জরুরী ও উপকারী তা পরিচালনার জন্য এমন কর্ম-পদ্ধতি অবলম্বন করা হোক, যা শরীয়তের মৌলিক নীতিমালার অনুকূল এবং যাতে শরীয়তের আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন হতে পারে। পক্ষান্তরে যে সব কার্যাবলী শরীয়তের মৌলিক নীতিমালার মাপকাঠিতে জরুরী অথবা উপকারী নয় এবং যে সব কার্যাবলীকে শরীয়তের মৌলিক নীতিমালার ছাঁচে ঢালা সম্ভবপর নয়, তা থেকে দূরে থাকা হোক।

২- যেহেতু সূদের আইনসম্মত বিধিনিষেধের প্রভাব সমগ্র অর্থবন্টন সংক্রান্ত ব্যবস্থার উপরই পড়তে বাধ্য, সেহেতু এ ধরনের আশা করাও ভুল হবে যে, সূদী ব্যবসার শরয়ী প্রতিকল্পকে কার্যকর করা হলে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গের মুনাফার হার তা-ই থাকবে, যা সূদী ব্যবস্থায় ছিল; বরং বাস্তব তো এই যে, যদি ইসলামী বিধানসমূহকে সঠিক পর্যায়ে কার্যকর করা যায়, তাহলে উক্ত হারে বড় ধরনের এমন মৌলিক পরিবর্তন পরিদৃষ্ট হবে, যা ইসলামী আদর্শ অর্থনীতির জন্য বাঞ্ছিত।

৩- আজকাল ব্যাংক জনসাধারণের যে সকল সেবা করে থাকে, তার মধ্যে একটা দিক খুবই উপকারী; আর তা হল এই যে, ব্যাংক বিভিন্ন সঞ্চয়ীর পৃথক পৃথক বিক্ষিপ্ত সঞ্চিত অর্থকে একত্রে জমা করে বিভিন্ন শিল্পায়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যের খাতে ব্যবহার করায় মধ্যস্থতা করে থাকে। এ সমস্ত সঞ্চিত অর্থ যদি প্রত্যেক সঞ্চয়ীর সিন্দুকে পড়ে থাকত, তাহলে তার দ্বারা শিল্প ও ব্যবসার কোন উন্নয়ন প্রকল্পে উপকার লাভ সম্ভব হত না। কিন্তু সেই সঞ্চিত অর্থসমূহকে শিল্প ও বাণিজ্যকর্মে বিনিয়োগ করার যে পথ ও পদ্ধতি প্রচলিত ব্যাংকগুলো অবলম্বন করেছে, তা হল ঋণ দেওয়া-নেওয়ার পদ্ধতি।

তাই এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিপতিদেরকে এই বলে আশ্বাস ও উৎসাহ দান করে থাকে যে, তারা যেন অপরের আর্থিক উপকরণসমূহকে নিজেদের মুনাফা ও স্বার্থে এমনভাবে প্রয়োগ করে, যাতে এ উপকরণসমূহ থেকে সৃষ্ট অর্থের অধিক অংশ তাদের নিজেদের আয়ত্তে থাকে এবং পুঁজির আসল মালিকদের পক্ষে মাথা তুলে দাঁড়াবার যথার্থ সুযোগ লাভ না হয়।

অতএব ইসলামী নির্দেশাবলীর ভিত্তিতে ব্যাংককে এমন একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে; যে বহু সংখ্যক সঞ্চয়ী মানুষদের সঞ্চিত অর্থকে জমা করে প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন কারবারে বিনিয়োগ করবে এবং এ সকল সঞ্চয়ীগণ সরাসরিভাবে এ কারবারের অংশীদার হতে পারবে। তাদের লাভ-নোকসান এ কারবারের লাভ-নোকসানের সঙ্গে জড়িত ও সম্পৃক্ত থাকবে; যে কারবার তাদের সঞ্চিত অর্থ দ্বারা করা হচ্ছে।

৪- বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা কোন জরাজীর্ণ নিয়ম-ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন করে তার পরিবর্তে কোন নতুন নিয়ম-ব্যবস্থা চালু করতে সত্যই বহু সমস্যা ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তা বলে সেই সমস্যা ও অসুবিধাকে ভিত্তি করে উক্ত নতুন নিয়ম-ব্যবস্থাকে চলার অযোগ্য মনে করা সঠিক নয়।

এমতাবস্থায় আগত সমস্যার বিশেষ সমাধান বের করতে হবে এবং সেই নিয়ম-ব্যবস্থাকেই কার্যকর রাখতে হবে।