ব্যাংকের সুদ কি হালাল সূচি ও বিবরন শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী ১ টি

কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় সুদকে (ربا) ‘রিবা’ বলা হয়। এই শব্দের মূল ধাতু হল (ر ب و ) যার আভিধানিক অর্থ হল, বাড়, বৃদ্ধি, আধিক্য, স্ফীতি প্রভৃতি। رَبَاঅর্থাৎ বেড়েছে বা বৃদ্ধি পেয়েছে। ربا السويق অর্থাৎ ছাতু ঘোলার পর ফেঁপে উঠেছে। ربا في حجره অর্থাৎ সে তার কোলে প্রতিপালিত (বড়) হয়েছে। أربى الشيء সে জিনিসটাকে বাড়িয়েছে ইত্যাদি অর্থ অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।

কুরআন মাজীদেও উক্ত শব্দ ‘বৃদ্ধি’র অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿يَمْحَقُ اللهُ الرِّبا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ﴾

অর্থাৎ, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাহকে বৃদ্ধি দেন।[1]

শরীয়তের ফিক্হবিদ্দের পরিভাষায় সুদের সংজ্ঞা হল,

هو زيادة أحد البدلين المتجانسين من غير أن يقابل هذه الزيادة عوض.

অর্থাৎ, একই শ্রেণীভুক্ত দুটি জিনিসের পরস্পর আদান-প্রদান করার সময় একজনের অপরজনের নিকট এমন বেশী নেওয়া যাতে এ বেশী অংশের বিনিময়ে কোন জিনিস থাকে না। (আল বুনূকুল ইসলামিয়্যাহ বাইনান নাযারিয়্যাতি অত্তাত্ববীক্ব ৪৪ পৃঃ)

ফতোয়া আলামগীরীতে সুদের নিম্নরূপ সংজ্ঞা করা হয়েছে;

الربا عبارة عن فضل مال لا يقابله عوض في معاوضة ما بمال.

অর্থাৎ, এক মালের বদলে অন্য মালের আদান-প্রদানকালে সেই অতিরিক্ত (নেওয়া) মালকে সূদ বলা হয়; যার কোন বিনিমেয় থাকে না।

হেদায়াতে সুদের সংজ্ঞা এইভাবে করা হয়েছে;

الربا هو الفض المستحق لأحد المتعاقدين في المعاوضة الخالي من عوض شرط فيه

অর্থাৎ, লেন-দেন করার সময় সেই অতিরিক্ত মালকে সুদ বলা হয়; যা কোন একপক্ষ শর্ত অনুসারে কোন বিনিময় ছাড়াই লাভ করে থাকে।

বুঝা এই গেল যে, মূল থেকে যে পরিমাণ অংশ বেশী নেওয়া বা দেওয়া হবে সেটাকেই সুদ বলা হবে। সুতরাং সুদের সংজ্ঞা হল এইরূপ; ‘‘ঋণে দেওয়া মূল অর্থের চেয়ে সময়ের বিনিময়ে যে অতিরিক্ত অর্থ শর্ত ও নির্দিষ্টরূপে নেওয়া হয় তার নাম হল সুদ।’’

মূল অর্থ থেকে কিছু বৃদ্ধি, সময়ের দৈর্ঘ্য অনুসারে বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ধারণ এবং এই লেন-দেনে বৃদ্ধি শর্ত হওয়া---এই তিন উপাদানে গঠিত বস্ত্তর নাম সুদ হবে। আর প্রত্যেক সেই ঋণের আদান-প্রদান যার মধ্যে উক্ত তিন প্রকার উপাদান পাওয়া যাবে তাকে সুদী আদান-প্রদান বা কারবার বলা হবে। এখানে দেখার বিষয় এ নয় যে, সে ঋণ ব্যবসার জন্য নেওয়া হয়েছে অথবা ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা অভাব পূরণ করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এবং সেই ঋণ-গ্রহীতা ব্যক্তি গরীব নাকি ধনী, কোম্পানী নাকি সরকার। সে যাই হোক না কেন অনুরূপ ঋণের কারবার সুদের কারবার।

[1] (সূরা বাক্বারাহ ২৭৬ আয়াত)