ঈদের নামাযের পদ্ধতি অন্যান্য (ফজরের) নামাযের মতই। অবশ্য এ নামাযে অতিরিক্ত কিছু তকবীর রয়েছে। সুতরাং নামাযী কানের উপরি ভাগ পর্যন্ত দুই হাত তুলে তাহরীমার তাকবীর দিয়ে বুকের উপরে রাখবে। অতঃপর ইস্তিফতাহর দুআ পাঠ করে পরপর ৬বার তকবীর বলবে। ইস্তিফতাহর দুআ তকবীরগুলোর পরে এবং সূরা ফাতিহা পড়ার আগে পড়লেও চলে।[1]

মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও আযহার নামাযের প্রথম রাকআতে সাত এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচ তকবীর দিতেন।’[2] অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘রুকূর দুই তকবীর ছাড়া।’[3]

আব্দুল্লাহ বিন আম্র বিন আস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘ঈদুল ফিতরের (নামাযের) প্রথম রাকআতে তকবীর সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি। আর উভয় রাকআতেই তকবীরের পরে হবে ক্বিরাআত।’’[4] অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আম্র বিন আওফ (রাঃ)।[5]

উপরোক্ত বর্ণনাগুলি একটি অন্যকে শক্তিশালী করে এবং সব মিলে ‘সহীহ’ বা বিশুদ্ধ হাদীসের মান লাভ করে।[6]

উল্লেখিত আমল ছিল সাহাবী আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর।[7] ইবনে আববাস (রাঃ) ঈদের নামাযের প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা সহ ৭ তকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে রুকূর তকবীর সহ ৬ তকবীর দিতেন। আর সকল তকবীর দিতেন ক্বিরাআতের পূর্বে।[8]

পক্ষান্তরে ইবনে আম্র ও আয়েশার হাদীসে[9] ‘‘তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া (৭ তকবীর)’’ অতিরিক্ত শব্দগুলি যয়ীফ হওয়ার সাথে সাথে আবূ দাঊদ ও ইবনে মাজার বর্ণনায় উল্লেখ হয় নি। অল্লাহু আ’লাম।

ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে ৯+৪ তকবীর বর্ণিত হয়েছে। যেমন তাঁর উক্তি, ‘যার ইচ্ছা সে ৭, যার ইচ্ছা সে ৯, যার ইচ্ছা সে ১১ এবং যার ইচ্ছা সে ১৩ তকবীর দিবে।’ তবে ৭+৫ তকবীরের বর্ণনাই সব চাইতে বেশী শুদ্ধ। সুতরাং বলা যায় যে, এ ব্যাপারে ইবনে আববাস (রাঃ)-এর নিকট প্রশস্ততা ছিল। আর সহীহ সূত্রে যা বর্ণিত, তাই তিনি বৈধ মনে করেন। অল্লাহু আ’লাম।[10]

অতিরিক্ত এই তকবীরগুলো বলা কিন্তু সুন্নত। কেউ বললে তার সওয়াব পাবে এবং না বললে তার কোন পাপ হবে না। অবশ্য এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে তা ত্যাগ করা উচিত নয়। যাতে অন্যান্য নামায থেকে ঈদের নামায পৃথক বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত হয়।[11]

এই ভিত্তিতে যদি কেউ ভুলে গিয়ে তকবীরগুলো ছেড়ে দিয়ে ক্বিরাআত শুরু করে ফেলে, তাহলে তা আর ফিরিয়ে বলতে হবে না। কারণ, তা সুন্নত এবং তার নির্দিষ্ট স্থান ছুটে গেছে। যেমন যদি কেউ ভুলে ইস্তিফতাহর দুআ ছেড়ে ক্বিরাআত শুরু করে দেয়, তাহলে তারও কোন ক্ষতি হয় না। আর এর জন্য সহু সিজদাও লাগবে না।[12]

উক্ত তকবীর দেওয়ার সময় প্রত্যেক বারে হাত তোলার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই; না (মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) থেকে) মারফূ এবং না (কোন সাহাবী থেকে) মাওকূফ।[13] তবে কোন কোন আহলে ইল্ম বলেন যে, ঐ সময় হাত তুলতে হবে। আত্বা বলেন, ‘প্রত্যেক তকবীরের সময় রফ্য়ে য়্যাদাইন করবে।’[14] ইমাম মালেক বলেন, ‘প্রত্যেক তকবীরের সময় রফ্য়ে য়্যাদাইন কর। তবে এ ব্যাপারে আমি কিছু শুনি নি।’[15]

অবশ্য তকবীর দেওয়ার সময় রফ্য়ে য়্যাদাইনের ব্যাপারে ওয়াইল বিন হুজ্র কর্তৃক বর্ণিত একটি ব্যাপক হাদীস রয়েছে। তিনি বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তকবীরের সাথে তাঁর হাত দুটিকে তুলতেন।’[16] ইমাম আহমাদ বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এগুলিও ঐ হাদীসের আওতায় পড়বে।’[17]

মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করে নিঃশব্দে তকবীর বলবে; সশব্দে নয়। কারণ, মুক্তাদীর সশব্দে তকবীর বলা বিদআত।[18]

পক্ষান্তরে প্রত্যেক তকবীরের পরে কোন যিক্র বা দুআ পাঠের ব্যাপারে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক কিছু বর্ণিত হয় নি। তবে ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর মত হল যে, তকবীরগুলোর মাঝে আল্লাহর প্রশংসা ও স্ত্ততি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে হয়।[19]

[1] (আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী সবলাতিল ঈদাঈন ২৯পৃঃ দ্রঃ)

[2] (সহীহ আবূ দাঊদ ১০১৮, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/২৯৮, বাইহাকী ৩/২৮৬)

[3] (সহীহ আবূ দাঊদ ১০১৯, সহীহ ইবনে মাজাহ, আলবানী ১০৫৮, দারাকুত্বনী, সুনান ১৭১০, বাইহাকী ৩/২৮৭)

[4] (আহমাদ, মুসনাদ ২/১৮০, সহীহ আবূ দাঊদ ১০২০, সহীহ ইবনে মাজাহ, আলবানী ১০৫৫-১০৫৬নং, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ)

[5] (সহীহ তিরমিযী, আলবানী ৪৪২, সহীহ ইবনে মাজাহ, আলবানী ১০৫৭, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ১৪৩৮-১৪৩৯নং, দারাকুত্বনী, সুনান, বাইহাকী)

[6] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/১০৬-১১১ দ্রঃ)

[7] (মাঃ, বাইহাকী ৩/২৮৮, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ)

[8] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৫৭০৩)

[9] (দারাকুত্বনী, সুনান ১৭০৪, ১৭১২, ১৭১৪, বাইহাকী ৩/২৮৫)

[10] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/১১১-১১২ দ্রঃ)

[11] (আল-মুগনী ৩/২৭৫, আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী সবলাতিল ঈদাঈন ৬পৃঃ)

[12] (আযকার, নওবী ১৫৬পৃঃ, নাইলুল আওতার, ইমাম শওকানী ৩/৩০০, আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী সবলাতিল ঈদাঈন ১১পৃঃ)

[13] (তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা আলবানী ৩৪৯, কারহুল উমদাহ ১৪৭পৃঃ টীকা)

[14] (বাইহাকী ৩/২৯৩)

[15] (ফিরয়্যাবী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/১১৩)

[16] (আহমাদ, মুসনাদ ৪/৩১৬, দারেমী, সুনান ১২৩২, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৬৪১নং)

[17] (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/১১৪)

[18] (মু’জামুল বিদা’ ৩৩২পৃঃ)

[19] (বাইহাকী ৩/২৯১, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৬৪২, তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা ৩৫০পৃঃ)