সাহাবী এবং বন্ধুদের সাথে নাবী (সাঃ) এর আচরণ

আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নাবীকে আদেশ দিয়েছেন, তিনি যেন তাঁর সাথীদের সাথেই থাকেন এবং তাদের পক্ষ হতে কোন দুঃখ-কষ্ট আসলে তিনি যেন তা বরদাশত করেন। বিশেষ করে ঐ সমস্ত লোকদের সাথে তিনি যেন ধৈর্য ধারণ করেন, যারা সকাল-বিকাল আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। আরও আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তিনি তাদের থেকে দৃষ্টি না উঠান, তাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তাদের সাথে পরামর্শ করেন এবং তাদের জন্য দু’আ করতে থাকেন। আর যারা তাঁর কথা অমান্য করে এবং জিহাদে যাওয়া থেকে পিছিয়ে থাকে তাদের তাওবা কবুল না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে পরিত্যাগ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি তাঁকে আরও আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন মুসলমানদের সম্ভ্রান্ত ও নিম্ন শ্রেণীর সকল লোকের উপরই শরীয়তের দন্ডবিধি কায়েম করেন।

মানব শয়তানদের মধ্যে তাঁর যে সমস্ত দুশমন রয়েছে, তাদেরকে উত্তম পন্থায় প্রতিহত করতে বলা হয়েছে। সুতরাং তারা খারাপ আচরণ করলে তার মুকাবেলায় তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে, মূর্খতার মুকাবেলায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে, জুলুমের মুকাবেলায় ক্ষমা করা এবং যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, তার সাথে তা বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেছেন- যদি এরূপ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।

জিন শয়তান থেকে বাঁচার জন্য তিনি ইস্তিআযা পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন তথা আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শাইতানির রাজীম পাঠ করতে বলেছেন। এই দুইটি বিষয় অর্থাৎ মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনের তিন স্থানে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা আরাফে বলেন-

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

‘‘আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক। আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর শরনাপন্ন হও। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী’’।[1]

সুতরাং জাহেলদের ক্ষতি হতে বাঁচার জন্য তাদের থেকে মুখ ফিরানোর আদেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান থেকে বাঁচার জন্য আউযুবিল্লাহ্ পাঠ করতে বলা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা সৎচরিত্রের সকল বৈশিষ্টই একত্রিত করেছেন। কেননা শাসকের সাথে প্রজাদের তিন রকমের অবস্থা হতে পারে। (১) তাদের উপর শাসকের একটি হক রয়েছে, যা পালন করা তাদের জন্য আবশ্যক। শাসক নিজেই তা পালন করার হুকুম দিবেন। আর এ ব্যাপারে যেহেতু প্রজাদের ত্রুটি ও অলসতা করার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই আল্লাহ্ তা‘আলা শাসককে আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন তার হক আদায় করে নেয়ার সময় প্রজাদের সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখেন এবং তাদের উপর সহজ করেন। কঠোরতা আরোপ করা থেকে যেন বিরত থাকেন। ক্ষমা করে দেয়ার এটিই অর্থ। এরূপ করলে তাদের কোন ক্ষতি ও কষ্ট হবেনা। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রসূলকে হুকুম দিয়েছেন যে, তিনি যেন লোকদেরকে ভাল কাজের আদেশ দেন। সুস্থ বিবেক ও অবিকৃত স্বভাব যাকে সমর্থন করে এবং যাকে সুন্দর ও উপকারী হিসাবে স্বীকৃত দেয়, তাই ভাল। তাঁকে আরও আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তিনি যেন নরম-ভদ্রভাবে ভাল কাজের আদেশ দেন এবং কঠোরতা পরিহার করেন। সাহাবীগণ তাঁর সাথে মূর্খতা সুলভ আচরণ করলে তিনি যেন তা পরিহার করে চলেন এবং মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এই ছিল জিন, ইনসান, মুমিন, কাফের তথা পৃথিবীবাসীদের সকল শ্রেণীর সাথে তাঁর চিরসুন্দর আচরণ।

[1]. সূরা আরাফ-৭: ১৯৯-২০০