নাবী (ﷺ) ক্রোধান্বিত ব্যক্তিকে ক্রোধের আগুন নির্বাপন করার জন্য ওযূ করার আদেশ করেছেন।[1] আর যদি ক্রোধান্বিত ব্যক্তি দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে বসার আদেশ দিয়েছেন। আর বসা থাকলে শয়ন করতে বলেছেন আর শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ক্রোধ ও লোভ (নারী, সম্পদ, নের্তৃত্ব ইত্যাদির প্রতি আসক্তি ও লোভ) যেহেতু মানুষের অন্তরে আগুনের জ্বলন্ত অঙ্গার তাই উপরোক্ত পদ্ধতিতে নিবারন করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلا تَعْقِلُونَ

‘‘তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না’’? (সূরা বাকারা-২:৪৪)

সকল প্রকার পাপ যেহেতু রসূ ও প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণেই হয়ে থাকে আর রাগের বশবর্তী হয়েই যেহেতু মানুষ খুন-খারাবীতে লিপ্ত হয় এবং প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করার জন্যই ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাই আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা আনআম, বনী ইসরাঈল ও সূরা ফুরকানে হত্যা এবং ব্যভিচারের বিষয়টি একসাথে উল্লেখ করেছেন এবং তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ مِنْ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلا بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

‘‘তুমি বলোঃ এসো, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবেনা, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করবে, দারিদ্রের ভয়ে স্বীয় সন্তানদেরকে হত্যা করবেনা আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই। আর নির্লজ্জতার (ব্যভিচারের) কাছেও যেয়োনা, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ্ হারাম করেছেন, ন্যায় সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করোনা। তিনি তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা ভেবে-চিমেত্ম কাজ কর’’। (সূরা আনআম-৬:১৫১) আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন-

وَالَّذِينَ لا يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ وَلا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلا بِالْحَقِّ وَلا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا إِلا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيمًا

‘‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করেনা, আল্লাহ্ যাকে হত্যা হারাম করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করেনা এবং ব্যভিচার করেনা। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তাওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদের গোনাহকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন’’।[2] নাবী (ﷺ) কোন পছন্দনীয় বিষয় দেখলে বলতেন-

الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِى بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ

‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যার নেয়ামতেই সকল ভাল কাজ পরিপূর্ণ হয়’’। আর অপছন্দনীয় কিছু দেখলে বলতেন-

الْحَمْدُ لِلهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ

‘‘সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য’’। কেউ কোন ভাল জিনিষ তাঁর সামনে রাখলে বা তাঁর খেদমত করলে তিনি তার জন্য দু’আ করতেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) যখন তাঁর সামনে ওযূর পানি রাখলেন তখন তিনি তার জন্য দু’আ করলেন-

اللّٰهُمَّ فَقِّهْهُ فِى الدِّينِ وَعَلِّمْهُ التَّأْوِيْلَ

‘‘হে আল্লাহ্! তুমি তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান কর এবং কুরআনের তাফসীর শিক্ষা দাও’’। রাত্রে পথ চলার সময় ঘুমের কারণে তিনি যখন উট থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন তখন আবু কাতাদা (রাঃ) তাঁকে সাহায্য করলে তিনি বললেন- আল্লাহর নাবীকে হেফাজত করার কারণে আল্লাহ্ তোমাকেও হেফাজত করুন। নাবী (ﷺ) বলেন- কোন ব্যক্তির উপকার করা হলে সে যদি উপকারী জন্য বলেঃ جَزَاكَ الله خَيْرًا আল্লাহ্ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন, তাহলে সে উপকারীর খুব ভাল প্রশংসা করল। যে ব্যক্তি তাঁকে ঋণ দিয়েছিলেন তিনি তা পরিশোধ করার সময় বলেছিলেন-

بَارَكَ اللهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالْأَدَاءُ

‘‘আল্লাহ্ তোমার সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের (সন্তানদের) মধ্যে বরকত দান করুন’’। নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রশংসা ও সময় মত পরিশোধ করে দেয়াই ঋণের একমাত্র বদলা। নাবী (ﷺ)-এর জন্য কেউ হাদীয়া পাঠালে তিনি তা গ্রহণ করতেন এবং তার চেয়ে বেশী বদলা দিতেন। আর কারও হাদীয়া ফেরত দিলে তিনি ফেরত দেয়ার কারণ বলে দিতেন। সা’ব বিন জাছ্ছামা (রাঃ) যখন তাঁকে বন্য গাধা শিকার করে মাংস হাদীয়া দিলেন তখন তিনি তাকে বলেছেন- তোমার হাদীয়া এই জন্য ফেরত দিচ্ছি যে, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি।[3]

[1]. এ বিষয়ে হাদীসটি দুর্বল। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে তা স্বীকৃত। এমন কি পুরানোকালে মানসিক রোগের চিকিৎসা হিসাবে গোসল ছিল অন্যতম একটি ব্যবস্থা। তা ছাড়া রাগে রয়েছে গরম আর পানিতে রয়েছে ঠান্ডা। ফলে বিষয়টি বুঝানোর জন্যে আর বিশেষ কিছু বলার প্রয়োজন হয়না। আর কোন বিষয় বাস্তবসম্মত হলেই তা হাদীছ হয়ে যায়না।

[2]. সূরা আল-ফুরকান-২৫: ৬৮

[3]. তাই আমার জন্য এই গোশত খাওয়া হালাল নয়। তাই ফেরত দিচ্ছি। আসল কথা হচ্ছে, ইহরাম অবস্থায় শিকার করা নিষেধ। কেউ মুহরিমের জন্য শিকার করলে তা থেকে খাওয়াও নিষেধ। সা’ব বিন জুসামা যেহেতু মুহরিমদের জন্য শিকার করেছিল বা এরূপ করার সন্দেহ ছিল তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদীয়া ফেরত দিয়েছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।