তাওহীদ বান্দার অন্তর প্রশস্ত করার অন্যতম মাধ্যম

তাওহীদের বিশ্বাসই অন্তর প্রশস্ত করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। বান্দার তাওহীদ যত মজবুত ও পরিপূর্ণ হবে তার বক্ষও তত প্রশস্ত হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

أَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِنْ رَبِّهِ فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ مِنْ ذِكْرِ اللهِ أُولَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ

‘‘আল্লাহ্ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর মাঝে রয়েছে,(সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ্ও স্মরনের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দুর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে। (সূরা যুমার:২২)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন-

فَمَنْ يُرِدِ اللهُ أَنْ يَهدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ كَذَلِكَ يَجْعَلُ اللهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ

‘‘অতঃপর আল্লাহ্ যাকে পথ প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে অত্যাধিক সংকীর্ণ করে দেন, যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনিভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেনা, আল্লাহ্ তাদের ওপর আযাব বর্ষণ করেন’’।[1]

বক্ষ প্রশস্ত হওয়ার আরেকটি মাধ্যম হল সেই নূর, যা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দার অন্তরে ঢেলে দেন। আর সেটি হচ্ছে ঈমানের নূর (আলো)। সুনানে তিরমিযীতে মারফু সূত্রে বর্ণিত রয়েছে, ঈমানের আলো যখন অন্তরে প্রবেশ করে তখন অন্তর প্রশস্ত হয় ও তা খুলে যায়।

অন্তর প্রশস্ত হওয়ার আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে ইল্ম (জ্ঞান)। ইলমের মাধ্যমে হৃদয় খুলে যায় এবং উহা প্রশস্ত হয়। তবে সকল প্রকার ইলমের মাধ্যমেই তা হয়না। বরং রসূল (ﷺ) থেকে যে ইলম (নবুওয়াত ও রেসালাতের জ্ঞান) এসেছে তার মাধ্যমেই হৃদয় প্রশস্ত হয়।

অন্তর প্রশস্ত হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং হৃদয় দিয়ে আল্লাহকে ভালবাসা। হৃদয় উন্মুক্ত হওয়া ও আত্মা পবিত্র হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি ভালবাসার বিরাট প্রভাব রয়েছে। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালবাসা যতই মজবুত হবে অন্তর ততই প্রশস্ত হবে। পাপ ও গর্হিত কাজ দেখলে এবং তাতে লিপ্ত হলে অন্তর সংকীর্ণ হয়ে যায়।

সর্বদা আল্লাহর যিকির করা, সৃষ্টির প্রতি দয়া করা, জান ও মাল দিয়ে মানুষের উপকার করা অন্তর প্রশস্ত হওয়ার বিরাট একটি মাধ্যম। বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শন অন্তর প্রশস্ত হওয়ার লক্ষণ। কেননা বাহাদুর ব্যক্তিগণ প্রশস্ত অন্তরের অধিকারী হয়ে থাকেন। আর কৃপণ, কাপুরুষ, আল্লাহর যিকির থেকে বিমুখ, দ্বীনে ইলাহী সম্পর্কে অজ্ঞ ও আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের সাথে অন্তরকে যুক্তকারীগণ হৃদয় প্রশস্ত হওয়ার স্বাদ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়। কোন কারণ বশত এ সমস্ত লোকের অন্তর উন্মুক্ত হওয়া বা সংকোচিত হওয়া মূল্যায়নযোগ্য নয়। কেননা কারণ চলে যাওয়ার সাথে সাথেই তা শেষ হয়ে যায়। মূলত যেই গুণাবলী অন্তরে স্থায়ী হলে অন্তর প্রশস্ত হয় কিংবা সংকোচিত হয়, তাই দেখার বিষয়। এটিই হচ্ছে প্রকৃত মানদন্ড।

অন্তর প্রশস্ত হওয়ার উপরোক্ত সকল গুণাবলী থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিরাট বড় মাধ্যম হচ্ছে সে সকল নিকৃষ্ট গুণাবলী অন্তর থেকে বের করে দেয়া, যা অন্তরকে নষ্ট করে দেয়।

অতিরিক্ত ও অর্থহীন কথা-বার্তা, অন্যায় দৃষ্টি, গান-বাজনা শ্রবণ, নারী-পুরুষের অবৈধ মেলা-মেশা, অধিক আহার এবং মাত্রাতিরিক্ত ঘুম বর্জন করাও হৃদয় প্রশস্ত হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

[1]. সূরা আনআম-৬: ১২৫