সফরে চার রাকআত বিশিষ্ট সলাতগুলো তিনি কসর করে পড়তেন। উমাইয়া বিন খালেদ ইবনে উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন- আমরা তো কুরআনে নিজ দেশে বা বাড়ীতে অবস্থান করার সময় সলাত পড়ার বর্ণনা দেখতে পাচ্ছি এবং ভয়ের সময় সলাত পড়ার পদ্ধতির কথা জানতে পারছি। সফর অবস্থায় সলাত পড়ার বিষয়টি তো কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি। ইবনে উমার (রাঃ) তখন বললেন- ‘‘হে ভাই! আল্লাহ্ তা‘আলা মুহাম্মাদ (ﷺ) কে আমাদের নিকট এমন সময় প্রেরণ করেছেন, যখন আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা মুহাম্মাদ (ﷺ) কে যা করতে দেখেছি এখন আমরাও তাই করছি’’।

সফর অবস্থায় তিনি কেবল ফরয সলাতগুলো পড়তেন। ফরযের পূর্বে বা পরে সুন্নাত পড়ার কথা বর্ণিত হয়নি। তবে ফজরের সুনণাত ও বিতর সলাত পড়তেন। কিন্তু ফরয সলাতের পূর্বে বা পরে সাধারণ নফল সলাত পড়তে নিষেধও করেন নি। আর সফর অবস্থায় তা পড়লে বাড়ীতে অবস্থান কালীন সময়ের ন্যায় সাধারণ নফল হিসেবেই গণ্য হবে। সুন্নাতে মুআক্কাদাহ হিসাবে নয়। অর্থাৎ সফর অবস্থায় আদায়কৃত নফল সুন্নাতের স্থলাভিষিক্ত হবেনা এবং তা সুন্নাতে রাতেবা হিসাবেও গণ্য হবেনা। বাড়ীতে থাকাকালে যেমন সুন্নাতে রাতেবা (মুআক্কাদাহ) পড়ার পর নফল ও তাহাজ্জুদ পড়া তার ইচ্ছাধীন ছিল, তেমনি সফর অবস্থায় সুন্নাতে রাতেবা (মুআক্কাদাহ) বাদ দেয়ার পরও নফল পড়াটি বান্দার ইচ্ছাধীনই থেকে গেল।

সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মক্কা বিজয়ের দিন চাশতের সময় আট রাকআত সলাত পড়েছেন।

ভ্রমণকালে তিনি বাহনের উপর বসেই নফল সলাত পড়তেন। বাহন তাকে নিয়ে যেদিকেই যেত, তাতে কোন অসুবিধা মনে করতেন না। ইঙ্গিতের মাধ্যমে রুকু-সিজদা করতেন। তবে রুকুর তুলনায় সিজদাতে কম সময় অবস্থান করতেন।

তিনি যদি সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্বে যাত্রা শুরু করতেন তাহলে যোহরের সলাতকে বিলম্বে আসরের সলাতের সাথে আদায় করতেন। আর যদি সূর্য ঢলার পর যাত্রা শুরু করতেন তাহলে যোহর ও আসর একসাথে পড়েই যাত্রা শুরু করতেন। আর দ্রুত পথ চলার ইচ্ছা করলে মাগরিবের সলাতকে ইশার সময় পর্যন্ত দেরী করে আদায় করতেন এবং উভয় সলাতকে একত্রিত করে পড়তেন।

বাহনের উপর বসে চলন্ত অবস্থায় কিংবা কোন স্থানে নেমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে চাইলে তিনি সাধারণত দুই সলাত একত্রে আদায় করতেন না।

আর তিনি তাঁর উম্মাতের জন্য সলাত কসর করার ক্ষেত্রে এবং সিয়াম ভাঙ্গার অনুমতির বিষয়ে সফরের দূরত্ব নির্ধারণ করে যান নি। বরং তিনি শুধু সফর (ভ্রমণ) বা ভূপৃষ্ঠে বিচরণ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সুতরাং পরিভাষায় যাকে সফর বলা হয় তাতেই সলাত কসর করা ও সিয়াম ভাঙ্গা জায়েয আছে।

আর কোন স্থানে সফর করে নির্দিষ্টভাবে এক দিন বা দুই দিন অথবা তিন দিন অবস্থান করলে সলাত কসর করা যাবে বলে যে সমস্ত হাদীস বর্ণনা করা হয় তার কোনটিই সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়।[1]

[1]. অন্যান্য মুহাদ্দিছদের নিকট সহীহভাবে তা সাব্যস্ত। ফলে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ঠিকানা তথা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত যত দিন অবস্থান করবে তা সফর হিসাবে গণ্য হবে এবং সলাত কসর করাও চলবে।