নববধূ এল শ্বশুর বাড়িতে। বাড়িতে পড়েছে হৈচৈ। এরই ফাঁকে শাশুড়ি বরণডালায় সিঁদুর, ধান, পান, চিনি, দুর্বাঘাস প্রভৃতি নিয়ে দরজায় হাজির। জামাই (নন্দাই) নববধূকে কোলে তুলে নিয়ে এল। ইতিমধ্যে বাড়ির প্রবেশপথে নতুন শাড়ি বিছানো হয়েছে। নববধূ আলতারাঙা পায়ে তার উপর হেঁটে বাড়িতে শুভাগমন করল। শাশুড়ীকে দেখেই বা চিনতে পেরেই বধূ ঝুঁকে তার পায়ে হাত ঠেকিয়ে সালাম (কদমবুসি) জানাল। শাশুড়ী উপর উপর বলল, ‘আল্লাহকে সালাম কর মা। সুখী হও!’ তারপর সিঁথিতে সিঁদুর ও মুখে চিনি দিয়ে, ধান-ঘাস এদিক ওদিক ছড়িয়ে, বধূর গায়ে সস্নেহে হাত রেখে বাড়িতে তুলল। এ শুভক্ষণে মুখে চিনি দিলে নাকি বধূ সংসারে চিনির মত মধুর হয়ে থাকে; যেমন সবজীর বীজ রোপনের সময় মুখে গুড় রেখে রোপন করলে সবজী বা ফল নাকি মিষ্টি হয়!

হয়তো অনেকের বিশ্বাস হবে না যে, মুসলিম পরিবেশেও এমন হয়ে থাকে! কারণ এগুলো নিছক বিজাতীয় আচার।

অতঃপর শরবত-পানির ধুমধাম। কিন্তু প্রথম দিন শ্বশুরবাড়িতে খেতে নেই (?) কোন আত্মীয়র বাড়িতে খেতে হয়! তাই খাবার সময় খাদ্যের সাথে লোহা বা কাঁচা মরিচ রেখে (?) অন্য বাড়ি হতে নিয়ে আসা হয়?

কোন কোন এলাকায় স্বামী-স্ত্রীকে এক পাত্রে আত্মীয়-স্বজন সকলের সামনে ক্ষীর-মালিদা খাওয়ানোর অনুষ্ঠানও পালিত হয়!

এর পূর্বে বা পরে শুরু হয় ‘বধূদর্শন’ বা ‘মুখ দেখা’র ধুম। উপহার-সামগ্রী সহ ছেলে-মেয়ে, বন্ধু-বান্ধব সকলেই এক এক করে বউ দেখে, দুআ দেয়। বন্ধুরা করে কত রকম রসালাপ, ঠাট্টা ও নোংরা প্রশ্নোত্তর। দেওর এলে ভাবীর সাথে রসালাপ করতে সুযোগ দিয়ে বড় ভাই (বর) সরে যায়!

হায়রে পুরুষ! তোমার দ্বীন, ঈর্ষা ও পৌরুষ কোথায়?

বিবাহের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভিডিও ক্যামেরা দ্বারা অথবা ফটোগ্রাফী দ্বারা স্মারক ছবি তুলে রাখায় দুই পাপ; ছবি তোলার পাপ এবং বিভিন্ন মহিলাদেরকে দেখা ও দেখানোর পাপ।

ইসলামী প্রথায় এই (বাসরের) দিন বা রাত্রে বিবাহের প্রচার বিধেয়। ‘দুফ্’ (আটা-চালা চালুনের মত দেখতে ঢপ্ঢপে আওয়াজবিশিষ্ট এক প্রকার ঢোলক) বাজিয়ে ছোট ছোট বালিকা মেয়েরা শ্লীলতাপূর্ণ গীত গাইবে। কিন্তু অন্য বাদ্যযন্ত্র দ্বারা অথবা অশ্লীল, প্রেম-কাহিনীমূলক, অসার, অর্থহীন গীত বা গান গাওয়া ও শোনা হারাম। এই দিনে ইসলামী গজল গেয়ে আনন্দ করাই বিধিসম্মত; তবে তাতেও যেন শির্ক ও বিদ্আতের গন্ধ না থাকে। এই খুশীতে রেকর্ডের গান, মাইকের গান, সিডি বা ভিডিওতে অশ্লীল ছবি প্রদর্শন প্রভৃতি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।[1]

আতশ বা ফটকাবাজীও বৈধ নয়। কারণ, আগুন নিয়ে খেলা অবৈধ, এতে বিপদের আশঙ্কা অনেক, তাছাড়া এতে অপব্যয় হয় অথচ উপকার কিছু হয় না। উল্টে লোককে ভীত-সন্ত্রস্ত ও বিরক্ত করে তোলে। সুতরাং মুসলিম হুশিয়ার!

উল্লাসে নাচলে কোন বালিকা বা মহিলা নাচতে পারে; তবে তা যেন কেবল মহিলার দৃষ্টিতে বিনা ঘুঙুরে পুরুষ-চক্ষুর অন্তরালে হয় এবং অশ্লীল নাচ না হয়।[2] অবশ্য একাজ সেই মেয়েরাই পারে যাদের আত্মমর্যাদা, গাম্ভীর্য ও শালীনতার অভাব আছে। উলুউলু দেওয়াও (আমাদের দেশে) বিজাতীয় আচরণ। মুসলিমদের জন্য সে হর্ষধ্বনি বৈধ নয়।[3]

[1] (আদাবুয যিফাফ ১৭৯-১৮০পৃঃ)

[2] (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৬৫১)

[3] (ঐ ২/৬৫০)