বিংশ প্রশ্ন: কোনো ব্যক্তি এক টুকরা স্বর্ণ দুইশত দিনার মূল্যে ক্রয় করল এবং স্বর্ণের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি হওয়া পর্যন্ত সময় ধরে তা সংরক্ষণ করল, অতঃপর তা তিন হাজার দিনারের বিনিময়ে বিক্রি করল— সুতরাং এ ধরনের বৃদ্ধির বিধান কী হবে?

উত্তর: এই ধরনের বৃদ্ধিতে কোন প্রকার সমস্যা বা অসুবিধা নেই; আর মুসলিমগণ তো তাদের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা এরূপ করেই থাকে, তারা পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে এবং মূল্য বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করে; আবার কখনও কখনও তারা নিজেদের ব্যবহারের জন্য পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে, অতঃপর যখন তার দাম অধিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং তা বিক্রয়ের সুযোগ পেয়ে যায়, তখন তারা তা বিক্রি করে দেয়, যদিও ইতিপূর্বে তা বিক্রি করার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না।

আর তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মূল্য বৃদ্ধি যখন বাজারের অনুগামী, তখন তাতে কোনো ধরনের অসুবিধা নেই, যদিও বৃদ্ধির পরিমাণটা অনেক গুণ বেশি হয়ে যায়। কিন্তু যদি বৃদ্ধির বিষয়টি একটি স্বর্ণের বিনিময়ে অপর আরেকটি স্বর্ণের ক্ষেত্রে হয় এবং অপর স্বর্ণের বেলায় অতিরিক্ত গ্রহণ করা হত, তাহলে তা হারাম হবে। কারণ, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণের ক্রয়-বিক্রয় ওজনে সমান সমান এবং নগদ নগদ না হলে বৈধ হবে না, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত। সুতরাং তুমি যখন স্বর্ণকে স্বর্ণের বিনিময়ে বিক্রি করবে, যদিও তা মানের দিক থেকে ভিন্ন রকম (অর্থাৎ একটি অপরটির চেয়ে উৎকৃষ্ট), তখন সে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হবে না, যতক্ষণ তা ওজনে সমান সমান এবং হাতে হাতে বা নগদ নগদ না হবে। অতএব, তুমি যদি ১৮ কেরেটের দুই মিসকাল স্বর্ণ ২৪ কেরেটের দেড় মিসকাল স্বর্ণের বিনিময়ে গ্রহণ কর, তাহলে তা হারাম ও অবৈধ হবে; কেননা, এ ক্ষেত্রে সমপরিমাণ হওয়া আবশ্যক; আর তুমি যদি দুই মিসকাল স্বর্ণের বিনিময়ে দুই মিসকাল স্বর্ণ গ্রহণ কর, কিন্তু দু’টির যে কোনো একটি গ্রহণে বিলম্ব বা বাকি কর, তাহলে এ ক্রয়-বিক্রয়ও বৈধ হবে না; কেননা, চুক্তি সম্পাদনের মাজলিসেই লেনদেন সম্পন্ন হওয়া জরুরি। আর একই বিধান প্রযোজ্য হবে প্রচলিত কাগজি মুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে (অর্থাৎ বিনিময় নগদ নগদ হতে হবে)। সুতরাং মানুষ যখন কোনো ব্যবসায়ী অথবা স্বর্ণকারের নিকট থেকে কাগজি মুদ্রার বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয় করে, তখন তার জন্য বিক্রেতাকে পুরা মূল্য পরিশোধ না করে তার নিকট থেকে বিচ্ছন্ন হওয়া বৈধ নয়; কেননা, এসব কাগজি মুদ্রা রৌপ্যের মুদ্রার মতই; আর রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদনের মাজলিসে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে পারস্পরিক লেনদেন সম্পন্ন করা আবশ্যক; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« إِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الأَصْنَافُ فَبِيعُوا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ » . ( رواه مسلم ) .

“এই জাতীয় দ্রব্যগুলো যখন এক জাতীয় না হয়ে ভিন্ন রকমের হবে, তখন তোমরা যেভাবে খুশি বিক্রয় করতে পারবে, যদি তা হাতে হাতে তথা নগদ নগদ হয়।”[1]


[1] মুসলিম, অধ্যায়: বাগান বর্গাচাষ বা পানি সিঞ্চন ( كتاب المساقاة ), পরিচ্ছেদ: লেনদেন ও রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণের নগদ বিক্রয় প্রসঙ্গে ( باب الصَّرْفِ وَبَيْعِ الذَّهَبِ بِالْوَرِقِ نَقْدًا), হাদিস নং- ৪১৪৭, ইমাম মুসলিম র. ‘উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।