ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম সালাত শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
(২৯৬) জামাআতে নামায আদায় করার বিধান কি?

উলামাগণ একথার উপর একমত হয়েছেন যে, জামাআতে নামায আদায় করা শ্রেষ্ঠতম, গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। বিষয়টি আল্লাহ্‌ তা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং এমনকি ভীতির সময় জামাআতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ বলেনঃ

وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمْ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُمْ مَيْلَةً وَاحِدَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِنْ كَانَ بِكُمْ أَذًى مِنْ مَطَرٍ أَوْ كُنتُمْ مَرْضَى أَنْ تَضَعُوا أَسْلِحَتَكُمْ وَخُذُوا حِذْرَكُمْ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا

“আর যখন আপনি তাদের সাথে থাকেন আর তাদেরকে (জামাআতের সাথে) নামায পড়ান, তবে তা এইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআত পূর্ণ করবে), তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য দল যারা এখনও নামায পড়েনি তারা আসবে এবং আপনার সাথে নামায (অবশিষ্ট এক রাকাআত) পড়ে নিবে। আর এরাও আত্মরক্ষার সরঞ্জাম ও নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। কাফেরগণ এটাই চায় যে, আপনারা যদি নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র ও দ্রব্যসম্ভার থেকে একটু অসতর্ক হন, তবে অমনি তারা একযোগে আপনাদের উপর আক্রমণ চালাবে। আর যদি বৃষ্টির দরুণ আপনাদের কষ্ট হয় অথবা আপনারা পীড়িত হন, তবে নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র খুলে রাখতে কোন পাপ হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে রাখবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাময় শাস্তি প্রস্তত করে রেখেছেন।” (সূরা নিসাঃ ১০২)

রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাতেও অসংখ্য হাদীছ রয়েছে, যা জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব প্রমাণিত করে। যেমন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلَاةِ فَتُقَامَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِي بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَاةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّارِ

“নিশ্চয় আমি ইচ্ছা করছি, নামাযের আদেশ দিব, নামায কায়েম করা হবে। তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ দিব সে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করবে। অতঃপর কাঠের বোঝা বহনকারী কিছু লোক নিয়ে আমি বের হব এমন লোকদের উদ্দেশ্যে যারা নামাযের জামাআতে উপস্থিত হয়নি। তারপর তাদেরকেসহ তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিব।” নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,

مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ فَلَا صَلَاةَ لَهُ إِلَّا مِنْ عُذْرٍ

“যে ব্যক্তি আযান শুনে তার জবাবে সাড়া দিয়ে আসবে না, ওযর ব্যতীত তার নামায হবে না।” জনৈক অন্ধ ব্যক্তি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দরবারে এসে জামাআতে না যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বললেন,

هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاةِ

“তুমি কি আযানের ধ্বনি শুনে থাক?” সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন,

فَأَجِبْ

“তবে অবশ্যই নামাযে হাজির হবে।” আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন,

لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلَّا مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ أو مريض، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤْتَى بِهِ يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ

‘আমরা দেখেছি সুস্পষ্ট মুনাফিক ও অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত রাসূলুল্লাহ্‌র (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীগণ জামাআতের নামায থেকে পশ্চাতে থাকতেন না। আর অসুস্থ ব্যক্তিকে দু’জন ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে এসে কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো।’

সুস্থ দৃষ্টি ভঙ্গিও জামাআতের সাথে নামাযকে ওয়াজিব প্রমাণ করে। ইসলামী উম্মত এক দলভুক্ত জাতি। ইবাদতের একাত্মতা ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যমে একতাবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। আর ইবাদত সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ, সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হচ্ছে ছালাত। তাই মুসলিম জাতির উপর আবশ্যক হচ্ছে, এই ইবাদত আদায় করার সময় তারা একতাবদ্ধ হবে।

বিদ্বানগণ ঐকমত্য হয়েছেন যে, জামাআতবদ্ধ নামায শ্রেষ্ঠ, গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছেন্ত নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জামাআতবদ্ধ হওয়া কি শর্ত? নাকি একাকী নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে, কিন্তু জামাআতের সাথে না পড়ার কারণে সে গুনাহগার হবে?

সঠিক কথা হচ্ছে- জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। নামায বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। তাই শরীয়ত সম্মত কোন কারণ বা ওযর ব্যতিরেকে জামাআত পরিত্যাগ করলে গুনাহগার হবে। একথার দলীল হচ্ছে- রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী নামায পড়ার চাইতে জামাআতবদ্ধ নামাযকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ আখ্যা দিয়েছেন। একথার অর্থ হচ্ছে একাকী নামায আদায় করলে যদি বিশুদ্ধ না হতো, তবে তার চেয়ে জামাআতবদ্ধ নামাযকে প্রাধান্য দেয়া হতো না।

মোটকথা প্রত্যেক মুসলিম, বিবেকবান প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের সাথে নামাযে হাজির হওয়া। চাই সে বাড়িতে অবস্থান করুক বা সফরে থাকুক।