ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম কিতাবুল হজ্জ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি
প্রশ্ন: (৫৩১) সঊদী আরবের বাইরে অবস্থান করে এমন জনৈক হাজী হজের কাজ সম্পাদন করেছে। যিলহজের ১৩ তারিখে আসর তথা বিকাল চারটার সময় তার সফরের সময় নির্দিষ্ট। কিন্তু ১২ তারিখ কঙ্কর মারার পর সে মিনা থেকে বের হয় নি। ১৩ তারিখের রাত সেখানেই অবস্থান করেছে। এখন ১৩ তারিখ সকালে কঙ্কর মেরে মিনা থেকে বের হওয়া তার জন্য জায়েয হবে কী? উল্লেখ্য যে, যোহরের পর কঙ্কর মেরে বের হলে নির্ঘাত তার সফর বাতিল হয়ে যাবে, ফলে সে বিরাট অসুবিধায় পড়বে।
এর উত্তর যদি না জায়েয হয়, তবে যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারার ব্যাপারে কি কোনো মত পাওয়া যায় না?

উত্তর: কোনো অবস্থাতেই যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয নয়। জরুরী অবস্থা হিসেবে কঙ্কর নিক্ষেপ করা রহিত হবে না। তবে তার সমাধান হচ্ছে এ অবস্থায় কঙ্কর না মেরেই সে চলে যাবে এবং তার ফিদিয়া প্রদান করবে। আর তা হচ্ছে মক্কা বা মিনায় একটি দম প্রদান করবে অথবা কাউকে এর দায়িত্ব প্রদান করবে এবং উক্ত দম (কুরবানী শুদ্ধ হয় এমন প্রাণী) এর মাংস সেখানকার ফকীরদের মাঝে বিতরণ করে দিবে। এরপর বিদায়ী তাওয়াফ করে মক্কা ত্যাগ করবে।

হ্যাঁ, যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারার বৈধতার ব্যাপারে মত পাওয়া যায়, কিন্তু তা বিশুদ্ধ নয়। সঠিক কথা হচ্ছে, ঈদের পর আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলোতে কোনো অবস্থাতেই যোহরের সময়ের পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার নিকট থেকে ইবাদতের (হজ-উমরার) নিয়ম শিখে নাও।”[1] আর তিনি এ দিনগুলোতে যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারেন নি।

কেউ যদি বলে যে, যোহরের পর নবীজির কঙ্কর নিক্ষেপ তার সাধারণ একটি কর্ম। আর সাধারণ কর্ম দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় না।

জবাবে আমরা বলব, একথা সত্য যে এটি তাঁর সাধারণ কর্ম। তিনি যোহরের পর কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। এরকম বাচনিক নির্দেশ প্রদান করেন নি যে, ‘কঙ্কর নিক্ষেপ যোহরের পরেই হতে হবে’। তাছাড়া এ সময়ের পূর্বে নিক্ষেপের ব্যাপারে কোনো নিষেধও করেন নি। আর তাঁর কর্ম ওয়াজিবের অর্থ বহন করে না। নির্দেশ সূচক শব্দ ছাড়া কোনো কাজ বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব হয় না বা নিষেধ সূচক শব্দ ছাড়া পরিত্যাগ করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয় না। কিন্তু আমি বলব, নবীজির উক্ত কর্ম যে ওয়াজিব তার পক্ষে কারণ আছে। আর তা হচ্ছে, কঙ্কর মারার ব্যাপারে যোহরের সময় পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপেক্ষা করাটাই প্রমাণ করে যে এটা ওয়াজিব। কেননা যোহরের পূর্বে কঙ্কর মারা যদি জায়েয হত, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাই করতেন। কারণ, উম্মতের জন্য এটাই সহজ। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন দু’টি বিষয়ের মাঝে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখন তিনি উভয়টির মধ্য থেকে সহজটি গ্রহণ করতেন- যদি তাতে কোনো পাপ না থাকত। সুতরাং এখানে যখন তিনি সহজ অবস্থাটি গ্রহণ করেন নি অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার পূর্বে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন নি, তখন বুঝা যায় এতে পাপ আছে। অতএব, যোহরের সময় হওয়ার পরই কঙ্কর মারা ওয়াজিব।এ কাজটি ওয়াজিব হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার সাথে সাথে যোহরের সালাত আদায় করার পূর্বেই কঙ্কর মেরেছেন। যেন তিনি অধির আগ্রহে সূর্য ঢলার অপেক্ষা করছিলেন। যাতে করে দ্রুত কঙ্কর মারতে পারেন। আর এ কারণেই যোহর সালাত দেরী করে আদায় করেছেন। অথচ প্রথম সময়ে অর্থাৎ সময় হওয়ার সাথে সাথেই সালাত আদায় করা উত্তম। এ থেকেই বুঝা যায় যে, যোহরের সময় হওয়ার পূর্বে কঙ্কর মারা জায়েয হবে না।

[1] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইলম বা জ্ঞান, অনুচ্ছেদ: পশুর পিঠে থাকাবস্থায় মানুষকে ফাতওয়া দেওয়া; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: হজ, অনুচ্ছেদ: কুরবানীর পূর্বে যে মাথা মুণ্ডন করেছে।