স্বালাতে মুবাশ্‌শির বিত্‌র আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

মুসলিমদের প্রতি কাফেরদের অত্যাচারের সময় পাঁচ-ওয়াক্ত নামাযের শেষ রাকআতের রুকূ থেকে মাথা তুলে কুনূত পড়া বিধেয়। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১২৯০নং) এই কুনূতকে কুনূতে নাযেলাহ্‌ বলা হয়। এই কুনূতে মুসলিমদের জন্য দুআ এবং অত্যাচারী কাফেরদের বিরুদ্ধে বদ দু’আ করা বিধেয়। দুই হাত তুলে দুআ করবেন ইমাম এবং ‘আমীন-আমীন’ বলবে মুক্তাদীগণ। এই কুনূতের দুআর ভূমিকা নিম্নরুপ:-

اَللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ كُلَّهُ، وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اَللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَ نَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحَقٌ।

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা অ নাসতাগফিরুক, অনুষনী আলাইকাল খায়রা কুল্লাহ্‌, অনাশকুরুকা অলা নাকফরুক, অনাখলাউঅনাতরুকু মাঁই য়্যাফজুরুক, আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না’বুদ, অলাকা নুসাল্লী অনাসজুদ, অইলাইকা নাসআ অ নাহ্‌ফিদ, নারজু রাহ্‌মাতাকা অনাখশা আযা-বাক, ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি মুলহাক্ব।

অর্থ:-হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং ক্ষমা ভিক্ষা করছি, তোমার নিমিত্তে যাবতীয় কল্যাণের প্রশংসা করছি, তোমার কৃতজ্ঞতা করি ও কৃতঘ্নতা করি না, তোমার যে অবাধ্যতা করে তাকে আমরা ত্যাগ করি এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি, তোমার জন্যই নামায পড়ি এবং সিজদা করি, তোমার দিকেই আমরা ছুটে যাই। তোমার রহ্‌মতের আশা রাখি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি, নিশ্চয় তোমার আযাব কাফেরদেরকে পৌঁছবে।

এরপর অত্যাচারিতদের জন্য দুআ এবং অত্যাচারীদের উপর বদদু’আ করতে হয়। যেমন,

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ،
اَللَّهُمَّ عَذِّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ، وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِياَءَكَ، اَللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمْ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِيْ لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ।

উচ্চারণ :- আল্লা-হুম্মাগফির লিল মু’মিনীনা অল মু’মিনা-ত, অলমুসলিমীনা অলমুসলিমাত, অ আল্লিফ বাইনা ক্বুলবিহিম, অ আসলিহ্‌ যা-তা বাইনিহিম, অনসুরহুম আলা আদুউবিকা অ আদুউবিহিম।

আল্লা-হুম্মা আযযিবিল কাফারাতাল্লাযীনা য়্যাসুদ্দূনা আন সাবীলিক, অয়্যুকাযযিবূনা রুসুলাক, অয়্যুক্বা-তিলনা আউলিয়া-আক। আল্লাহুম্মা খা-লিফ বাইনা কালিমাতিহিম, অযালযিল আক্বদামাহুম, অআনযিল বিহিম বা’সাকাল্লাযী লা তারুদ্দুহু আনিল ক্বাউমিল মুজরিমীন।

অর্থ :- হে আল্লাহ! তুমি মুমিন ও মুসলিম নারী-পুরুষদেরকে ক্ষমা করে দাও। তাদের হৃদয়ে হৃদয়ে মিল দাও। তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি কর। তাদেরকে তোমার ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর।

হে আল্লাহ! যে কাফেররা তোমার পথে বাধা সৃষ্টি করছে, তোমার রসূলদেরকে মিথ্যা মনে করছে এবং তোমার বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাদেরকে তুমি আযাব দাও। হে আল্লাহ! তুমি ওদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি কর। ওদেরকে বিক্ষিপ্ত ও বিচলিত কর এবং ওদের উপর তোমার সেই আযাব অবতীর্ণ কর, যা অপরাধী জাতি থেকে তুমি রদ করো না। (বাইহাকী, ২/২১১, ইবনে আবী শাইবাহ্‌ প্রমুখ, ইরওয়াউল গলীল ২/ ১৬৪- ১৭০)

রমযানের কুনূতে উক্ত দুআ, অর্থাৎ কাফেরদের উপর বদদুআ এবং মুমিনদের জন্য দুআ ও ইস্তেগফার করার কথা সাহাবীদের আমলে প্রমাণিত। (সহীহ ইবনে খুযাইমা ১১০০ নং)

যেমন এরুপ দুআও করা বিধেয়:-

اَللّهُمَّ أَنْجِ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ، اَللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى الطُّغَاةِ الظَّالِمِيْنَ، وَاجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ سِنِيْنَ كَسِنِيْ يُوْسُف।

প্রকাশ থাকে যে, সাধারণ দিনসমূহে কেবল ফজরের নামাযে কুনূত বিধেয় নয়; বরং তা বিদআত। আবূ মালেক আশজাঈ বলেন, আমার আব্বা আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর পিছনে এবং আবূ বাক্‌র, উমার ও উসমানের পিছনে নামায পড়েছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁরা কি ফজরে কুনূত পড়তেন? তিনি উত্তরে বললেন, ‘না, বেটা! এটা বিদআত।’ (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, বুলুগুল মারাম ৩০৩নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৭/৬৮)

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) কোন সম্প্রদায়ের জন্য দুআ অথবা বদদু’আ করা ছাড়া ফজরের নামাযে এমনি কুনূত পড়তেন না। (ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, বুলুগুল মারাম ৩০২নং)

পক্ষান্তরে যে হাদীস দ্বারা ফজরের নামাযে কুনূত প্রমাণ করা হয়, তা হয় দুর্বল, না হয় সে কুনূত হল নাযেলার কুনূত; যা ৫ ওয়াক্ত নামাযেই বিধেয়। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৪৩পৃ:)