এই নামাযের ফযীলত :
হযরত আয়েশা رضي الله عنها হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, “ফজরের দুই রাকআত (সুন্নত) পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম।” (মুসলিম ৭২৫নং, তিরমিযী)
মা আয়েশা رضي الله عنها বলেন, ‘নবী (ﷺ) ফজরের সুন্নতের মত অন্য কোন নফল নামাযে তত নিষ্ঠা প্রদর্শন করতেন না।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, সহীহ)

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, “(ফজরের সময়) যে ব্যক্তি (স্বগৃহে) ওযু করে। অতঃপর মসজিদে এসে ফজরের (ফরয) নামাযের পূর্বে দুই রাকআত নামায পড়ে। অতঃপর বসে (অপেক্ষা ক’রে) ফজরের নামায (জামাআতে) পড়ে, সেই ব্যক্তির সেদিনকার নামায নেক লোকদের নামাযরুপে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর তার নাম পরম করুণাময় (আল্লাহর) প্রতিনিধিদলের তালিকাভুক্ত হয়।” (ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সহিহ তারগিব ৪১৩নং)


এ নামাযকে হাল্কা করে পড়া :

হযরতহাফসা (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) ফজরের নামাযের পূর্বে আমার ঘরে দুই রাকআত সুন্নত পড়তেন এবং তা খুবই হাল্কা করে পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, সহীহ)

হযরত আয়েশা رضي الله عنها বলেন, ‘ নবী (ﷺ) ফজরের নামাযের পূর্বে দুই রাকআত নামায পড়তেন এবং তা এত সংক্ষেপে পড়তেন যে, আমি সন্দেহ্‌ করতাম, তিনি তাতে সূরা ফাতিহা পড়লেন কি না।’ (আহমাদ, মুসনাদ)


এ নামাযের ক্বিরাআত :

এই নামাযের প্রথম রাকআতে নবী মুবাশ্‌শির (ﷺ) সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস (ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) পড়তেন। (মুসলিম, সহীহ ৭২৬, আবূদাঊদ, সুনান ১২৫৬, তিরমিযী, সুনান ৪১৭, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১১৪৯নং)

তিনি বলতেন, “উত্তম সূরা সে দুটি, যে দুটি ফজরের পূর্বে দুই রাকআতে পড়া হয়; ‘ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন’ এবং ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ।” (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১১৫০, ইবনে হিব্বান, সহীহ, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬৪৬নং)

কখনো কখনো তিনি এই নামাযের প্রথম রাকআতে সূরা বাক্বারার ১৩৬ নং আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আলে ইমরানের ৬৪নং আয়াত পাঠ করতেন। (মুসলিম, সহীহ ৭২৭নং, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী)

আবার কোন কোন সময়ে প্রথম রাকআতে সূরা বাক্বারার ১৩৬নং আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আলে ইমরানের ৫২ নং আয়াত পড়তেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১২৫৯নং)

এ ছাড়া ফজরের সুন্নত হাল্কা করে পড়া সুন্নত। অতএব তাতে যদি কেবল সূরা ফাতিহা পড়া যায়, তাহলেও বৈধ। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌)

প্রকাশ থাকে যে, ফজরের সুন্নত পড়ার পর নির্দিষ্ট কোন দুআ পড়ার হাদীস সহীহ নয়। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৩৮-২৩৯পৃ:)

এই নামাযের পর ডান কাতে শয়ন :

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) যখন ফজরের সুন্নত পড়ে নিতেন, তখন ডান কাতে শয়ন করতেন।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১৯০নং)

তিনি আরো বলেন, ‘নবী (ﷺ) ফজরের সুন্নত পড়তেন। তারপর যদি আমি ঘুমিয়ে থাকতাম তাহলে তিনি শয়ন করতেন। নচেৎ, আমি জেগে থাকলে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, মুসলিম, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌), মিশকাত ১১৮৯নং)

মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন ফজরের দুই রাকআত সুন্নত পড়ে নেয়, তখন সে যেন ডান কাতে শয়ন করে।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, জামে ৬৪২নং)

সম্ভবত: উক্ত শয়ন যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ পড়বে তার জন্য সুন্নত। যাতে একটানা নামায পড়ার পর ফরয নামায পড়ার আগে একটু জিরিয়ে নিতে পারে। পরন্তু তার জন্য সুন্নত নয়, যে একবার মাটিতে পার্শ্ব রাখলে চট করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার ফলে ফজরের জামাআতই ছুটে যায়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/১০০)

তদনুরুপ উক্ত শয়ন যে ব্যক্তি বাসায় সুন্নত পড়বে তার জন্য সুন্নত ও মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে যে মসজিদে সুন্নত পড়বে তার জন্য মুস্তাহাব নয়। কারণ, মহানবী (ﷺ)-এর শয়নের কথা তাঁর বাসায় থাকা অবস্থায় উল্লেখ হয়েছে। মসজিদে সুন্নত পড়ে যে তিনি শয়ন করতেন, তার উল্লেখ নেই। ইবনে উমার উক্ত মত পোষণ করতেন। তাই মসজিদে কেউ ফজরের সুন্নতের পর শয়ন করলে তাকে কাঁকর ছুঁড়ে উঠিয়ে দিতেন। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার, ইবনে আবী শাইবা, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/১৬৬)

এই জন্যই ফজরের সুন্নতের পর মসজিদে শয়নকে অনেকে বিদআত বলে মন্তব্য করেছেন। (মু’জামুল বিদা’ ৩৩৭পৃ:)

এই নামাযের কাযা :

অন্যান্য সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নামাযের তুলনায় উক্ত নামাযের এত বেশী গুরুত্ব যে, মহানবী (ﷺ) ঘরে-সফরে তা পড়তেন এবং তা ছুটে গেলে কাযা করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।

একদা মহানবী (ﷺ) সাহাবাবর্গের সাথে এক সফরে ছিলেন। ফজরের নামাযের সময় সকলে গভীরভাবে ঘুমিয়ে থাকলে সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেল। সূর্যের ছটা তাঁদের মুখে লাগলে চেতন হলেন। অতঃপর একটু সরে গিয়ে মহানবী (ﷺ) বিলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে বললেন। এরপর ফজরের দুই রাকআত সুন্নত পড়লেন। তারপর ইকামত দিয়ে ফজরের ফরয পড়লেন। (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী,মুসলিম, সহীহ ৬৮১নং)

উক্ত নামায কাযা করার দুটি সময় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ফজরের পর কোন নফল পড়া নিষিদ্ধ হলেও ফজরের আগে ছুটে যাওয়া সুন্নতকে ফরযের পর পড়া যায়। আর এটি হল ব্যতিক্রম নামায। একদা এক ব্যক্তি মসজিদে এসে দেখল আল্লাহর নবী (ﷺ) ফজরের ফরয পড়ছেন। সে সুন্নত না পড়ে জামাআতে শামিল হয়ে গেল। অতঃপর জামাআত শেষে উঠে ফজরের ছুটে যাওয়া দুই রাকআত সুন্নত আদায় করল। মহানবী (ﷺ) তার কাছে এসে বললেন, “এটি আবার কোন্‌ নামায? (ফজরের নামায কি দুইবার?)” লোকটি বলল, ‘ফজরের দুই রাকআত সুন্নত ছুটে গিয়েছিল।’ এ কথা শুনে তিনি আর কিছুই বললেন না (চুপ থাকলেন)। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১২৬৭, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১১৫৪, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ)

আর এক হাদীসে মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের ২ রাকআত (সুন্নত) না পড়ে থাকে, সে যেন তা সূর্য ওঠার পর পড়ে নেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৮৩, জামে ৬৫৪২নং)

এই নামায বিষয়ক আরো কিছু মাসায়েল :

মসজিদে এসে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়লে পৃথক আর তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কেউ যদি তা পড়ে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়ে তাহলেও কোন ক্ষতি হয় না। তবুও ফজরের সময় উত্তম হল তাহিয়্যাতুল মাসজিদ না পড়ে কেবল ফজরের সুন্নত পড়া। কারণ, মহানবী (ﷺ) ফজরের সুন্নতই বড় সংক্ষেপে পড়তেন। (ফাতাওয়া তাতাআল্লাকু বিজামাআতিল মাসজিদ ১৭-১৮পৃ:) তাছাড়া তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে যেন পৌঁছে দেয় যে, ফজরের (আযানের) পর দু’ রাকআত (সুন্নত) ছাড়া আর কোন (নফল) নামায পড়ো না।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১২৭৮ নং) “ফজরের পর দুই রাকআত ছাড়া আর কোন নামায নেই।” (তিরমিযী, সুনান, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৪৭৮, জামে ৭৫১১নং)