স্বালাতে মুবাশ্‌শির নামায কায়েম আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি
নামাযে সলফদের একাগ্রতার কিছু নমুনা

‘যাতুর রিকা’ অভিযানে মুসলিমদের এক ব্যক্তি এক মুশরিক মহিলাকে হ্‌ত্যা করে ফেললে তার স্বামী প্রতিজ্ঞা করল যে, মুহাম্মাদের সঙ্গীদের মধ্যে কারো রক্ত না বহানো পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হবে না। এই সংকল্প নিয়ে সে মহানবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবাদের খোঁজে বের হয়ে পড়ল। এদিকে মহানবী (ﷺ) এক মঞ্জিলে বিশ্রাম নিতে অবতরণ করলে সাহাবাগণের উদ্দেশ্যে বললেন, “কে আমাদের (নিরাপত্তার) জন্য পাহারা দেবে?” এই আহ্‌বানে সাড়া দিয়ে মুহাজিরদের মধ্যে এক ব্যক্তি এবং আনসারদের মধ্য হতে আর এক ব্যক্তি পাহারা দিতে প্রস্তুত হলেন। তাঁদেরকে মহানবী (ﷺ) বললেন, “তোমরা এই উপত্যকার মুখে অবস্থান কর।”

অতঃপর তাঁরা দু’জন যখন উপত্যকার মুখে পৌঁছলেন, তখন মুহাজেরী (বিশ্রামের জন্য) শয়ন করলেন এবং আনসারী উঠে নামায পড়তে শুরু করলেন। এমতাবস্থায় উক্ত মুশরিক লোকটি কাছাকাছি এসে যখন তাঁর (নামাযীর) আবছা দেহ্‌ দেখতে পেল, তখন সে বুঝল, নিশ্চয় ও মুহাম্মাদের গুপ্তচর। সুতরাং তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করলে তা সঠিক নিশানায় পৌঁছে আনসারীকে আঘাত করল। তিনি তীর দেহ্‌ থেকে বের করে দিয়ে নামাযেই মশগুল থাকলেন। এইভাবে পরপর তিন খানা তীর খেয়ে ও তা বের করে ফেলে রুকু-সিজদাহ করে সম্পন্ন করলেন। অতঃপর তার মুহাজেরী সঙ্গী জেগে উঠলেন। মুশরিকটি তার কথা ওরা জানতে পেরেছেন ভেবে পালিয়ে গেল। এরপর মুহাজেরী যখন আনসারীর রক্তাক্ত দেহের প্রতি লক্ষ্য করলেন, তখন বলে উঠলেন, ‘সুবহানাল্লাহ্‌! প্রথম বারেই যখন তীর মারল, তখনই কেন আমাকে জাগিয়ে দাওনি?’ আনসারী উত্তরে বললেন, ‘আমি এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম, যা শেষ না করে আমি ছাড়তে পছন্দ করলাম না!’ (আবূদাঊদ, সুনান ১৯৮ নং, আহমাদ, মুসনাদ, দারাক্বুত্বনী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক)

আলী বিন হুসাইন (রহঃ) যখন নামাযের জন্য ওযু সম্পন্ন করতেন, তখন তাঁর দেহে কম্পন শুরু হত! এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, ‘ধিক তোমাদের প্রতি! তোমরা জান কি, কার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছি? কার সাথে মুনাজাত (নির্জনে আলাপ) করতে চলেছি?’ (হিলয়্যাতুল আওলিয়া ৩/১৩৩)

মুহাম্মাদ বিন মুনকাদিরের ব্যাপারে কথিত আছে যে, তিনি এক রাত্রে নামায পড়তে দাঁড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলেন এবং এত বেশী কাঁদতে লাগলেন যে, তাঁর ঘরের লোক ভয় পেয়ে গেল। তারা তাঁকে এত কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করল। কিন্তু কোন উত্তর পেল না। অবশেষে তাঁকে চুপ না হতে দেখে তারা আবূহাযেমের নিকট ব্যাপার খুলে বললে তিনি তাঁর নিকট এলেন। দেখলেন, তখনও তিনি কাঁদছেন। আবূহাযেম বললেন, ‘কি হল ভাই? কাঁদছ কেন? তোমার বাড়ির লোকেরা যে ভয় খেয়ে গেছে! কোন অসুখ তো করে নি? অথবা কি হয়েছে তোমার?’

মুহাম্মাদ বললেন, ‘(নামাযে কুরআন মাজীদের) একটি আয়াত পাঠ করে আমি কান্না রুখতে পারছি না।’ আবূহাযেম বললেন, ‘কোন্‌ আয়াত?’ বললেন,

(وَبَدَا لَهُمْ مِنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ)

অর্থাৎ, (সেদিন) আল্লাহর তরফ থেকে ওদের উপর এমন শাস্তি এসে পড়বে, যা ওরা (পূর্বে) কল্পনাও করে নি। (কুরআন মাজীদ ৩৯/৪৭)

এ কথা শুনে আবূহাযেমও তাঁর সাথে কাঁদতে শুরু করে দিলেন এবং কান্নার ধারা আরো বেড়ে গেল! তা দেখে মুহাম্মাদের বাড়ির একটি লোক আবূহাযেমকে বলল, ‘ওর নির্জনতা কাটাবার জন্যই আপনাকে ডেকে আনলাম। (কিন্তু আপনিও যে ওর সাথে কাঁদতে লাগলেন?) অতঃপর তাঁরা তাদেরকে কান্নার কারণ বর্ণনা করলেন। (হিলয়্যাতুল আওলিয়া ৩/১৪৬)

অবশ্য মুনাজাতের এ মিঠf স্বাদ তখনই অনুভূত হবে, যখন নামাযী বুঝবে যে, সে তার নামাযে কাকে ও কি বলছে। নচেৎ গরম পানিতে ঘর পোড়া সম্ভব নয়। যেমন মুখে চিনি চিনি বললে চিনির মিষ্ট স্বাদ অনুভব হবে না।

মাইমূন বিন মিহ্‌রান বলেন, মুহাজেরদের এক ব্যক্তি এক ব্যক্তিকে খুব হাল্কা নামায পড়তে দেখে তাকে ভৎসনা করলেন। কিন্তু লোকটি অজুহাত দেখিয়ে বলল, ‘আমার একটি দামী জিনিস নষ্ট হওয়ার কথা মনে পড়লে নামায তাড়াতাড়ি পড়ে নিলাম।’ মুহাজেরী বললেন, ‘কিন্তু তার চেয়ে অধিক মূল্যবান জিনিস তুমি নষ্ট করে দিলে!’ (ঐ ৪/৮৪)