কোন প্রকার জুলুম ও অন্যায়ভাবে দখলকৃত জায়গার উপর মসজিদ নির্মাণ এবং জেনে-শুনে তাতে নামায পড়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৭/৫৩)

মসজিদের কোন সম্পত্তি বা অন্য কোন জিনিস ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার কারো জন্য বৈধ নয়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু৩১১পৃ:)

কোনও বিষয় নিয়ে কারো সাথে বিরোধ ঘটলে তাকে মসজিদে আসতে বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ (যিক্‌র) করতে বাধা দেয় ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?” (কুরআন মাজীদ ২/১১৪)

কোন অমুসলিম যদি বাহ্যিক পবিত্র অবস্থায় আদবের সাথে মসজিদ প্রবেশ করতে চায়, তবে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। অবশ্য মক্কা (ও মদ্বীনার) হারাম ও মসজিদে তারা প্রবেশ করতে পারে না। (কুরআন মাজীদ ৯/২৮, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২১/২০, ৩২/৯৪, ১০৫)

মসজিদের উপর দিয়ে রাস্তা করায় মসজিদের সম্মানহানি হয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যিক্‌র ও নামায ছাড়া অন্য কিছুর জন্য মসজিদসমূহকে রাস্তা করে নিও না।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, জামে ৭২১৫ নং) মসজিদকে রাস্তায় পরিণত করে তার সম্মান নষ্ট করা কিয়ামতের অন্যতম পূর্বলক্ষণ। (ত্বাবারানী, মু’জাম আউসাত্ব, জামে ৫৮৯৯ নং)

প্রকাশ যে, মসজিদের প্রতি তা’যীম প্রদর্শনের অর্থ এই নয় যে, মসজিদকে সালাম (প্রণাম) করতে হবে বা তার ধুলো খেতে হবে অথবা তার মেঝে ধুয়ে পানি খেতে হবে। কারণ এসব কাজ শির্কের পর্যায়ভুক্ত।

মসজিদে কোন প্রকার খেলাও বৈধ নয়। অবশ্য যে খেলা জিহাদ বিষয়ক অথবা জিহাদের সহায়ক (অস্ত্রচালনার খেলা) তা বৈধ। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘একদা হাবশী দল মসজিদে তাদের যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। আর আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর পশ্চাতে আড়ালে হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে তাদের খেলা দেখছিলাম।’ (বুখারী ৪৫৪, ৪৫৫নং, প্রমুখ)

প্রয়োজনে কোন রোগীর জন্য মসজিদে তাঁবু লাগিয়ে বা অন্য স্থানে স্থান দেওয়া দূষণীয় নয়। এতে রক্ত পড়লেও ক্ষতি নেই, যা পরে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। খন্দকের যুদ্ধে হযরত সা’দ (রাঃ) আহত হলে তাঁকে মসজিদে নববীতে রাখা হয়েছিল এবং সেখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়েছিল। (বুখারী ৪৬৩নং, প্রমুখ)

যে পত্র-পত্রিকায় মানুষ বা পশু-পক্ষীর ছবি থাকে, তা মসজিদে পড়া বা রাখা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কালি দ্বারা প্রাণীর মাথা নষ্ট করে রাখা যায়। অশ্লীল ছবি ও পত্রিকা তো কোন স্থানেই দেখা ও পড়া বৈধ নয়। মসজিদে আরো বেশী নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২২/১০১)

বাড়ির কোন একটা কামরা বা নির্দিষ্ট জায়গাকে মসজিদ বানানো চলে। যাতে নফল নামায এবং মসজিদে যেতে না পারলে ফরয নামাযও পড়া যাবে। ইতবান বিন মালেক (রাঃ) এই রকমই একটি আবেদন আল্লাহর রসূল (ﷺ)কে জানালেন। তিনি তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁর পছন্দমত এক স্থানে ২ রাকআত নামায পড়লেন। অনুরুপ বারা’ বিন আযেব (রাঃ) নিজ বাড়িতে (বাড়ির লোকদের নিয়ে) জামাআত করে নামায পড়তেন। (বুখারী ৪২৫নং)

নূতন মসজিদ অপেক্ষা পুরাতন মসজিদের অধিক কোন ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য বা অধিক সওয়াব আছে -এর কোন দলীল নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাযীরিয়্যাহ্‌ ১/৩৫৯) তবে অপ্রয়োজনে যেহেতু একই মহ্‌ল্লায় একাধিক মসজিদ বিদআত, সেহেতু এর ফলে যেখানে ‘যিরার’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেখানে নূতন ছেড়ে পুরাতন মসজিদে নামায পড়া উত্তম। কিছু সাহাবা ও সলফ এই আশঙ্কাতেই কোন কোন স্থানে পুরাতন মসজিদে নামায পড়েছেন। অবশ্য সেই মসজিদে নামায পড়া উত্তম, যে মসজিদ বিদআতশূন্য, যার জামাআত সংখ্যা অধিক (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৩) এবং যার ইমাম ফাসেক বা বিদআতী বলে আশঙ্কা নেই।

আল্লাহর রসূল (ﷺ) ও তাঁর সাহাবাবর্গের যুগে কোন মসজিদকে তালাবদ্ধ করা হ্‌তো না। তবে সে যুগে মসজিদের ভিতর এমন কোন মূল্যবান আসবাব-পত্র থাকত না, যা চুরি বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা যেত। পরন্তু সে যুগের লোকেরাও এমন হৃদয়বিশিষ্ট ছিলেন যে, তাঁদের দ্বারা মসজিদের কোন প্রকার ক্ষতি হবে, সে আশঙ্কাই ছিল না। কিন্তু বর্তমান যুগের অবস্থা তার বিপরীত। সুতরাং আসবাব-পত্র ও সম্মান রক্ষার্থে মসজিদকে তালাবদ্ধ করা দূষণীয় নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৩/৭৯, ১৭/৭০)