কাজী অফিসের শর্টকাট, ঘরে আগুন: ব্যাভিচারের উন্মুক্ত পথ

সমাজে এখন মুখরোচক একটি স্লোগান শোনা যায়—“বিয়ে সহজ করুন, যেনা–ব্যাভিচারের রাস্তা বন্ধ করুন।” শুনতে সুন্দর; কিন্তু বাস্তবে “সহজ বিয়ে”র নামে যে ব্যবস্থা দাঁড় করানো হয়েছে, তা উল্টোভাবে যেনা–ব্যাভিচারের রাস্তা আরও চওড়া করে দিয়েছে।

সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ ও অনৈতিকতার বিস্তার নিয়ে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্চকিত; কিন্তু শিকড়ের রোগটা কি দেখছি? মুসলিম বিবাহ ব্যবস্থার সেই মৌলিক জায়গাটিই—অভিভাবকের (ওয়ালি) সম্মতি ও উপস্থিতি—ব্যবস্থাগতভাবে “অপ্রয়োজনীয়” করে দেওয়া হয়েছে।

বাস্তবতা এমন যে কেবল প্রাপ্তবয়স্কতার কাগজ ও দুইজন সাক্ষী থাকলেই বিবাহ “সম্পন্ন”—বিশেষ করে মেয়ের ওয়ালির সম্মতি বা উপস্থিতি থাকুক বা না-ই থাকুক।
নিয়ম–নীতি এভাবে “সহজীকরণে” ঢলে পড়লে পরিবারের ভূমিকা, দায়বদ্ধতা ও সামাজিক জবাবদিহি ক্ষয়ে যায়; আর সেখান থেকেই যেনা–ব্যাভিচারের স্রোত জোরদার হয়।

ফল কী? সন্তান আপনার, দায়িত্ব আপনার—কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি একটি মানুষের জীবনে অর্থাৎ বিয়ের বিষয়ে অবিভাবকের মতামতকে মূল্যহীন করে দেওয়া হয়েছে।
“তরুণ–তরুণীর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তই সব”—এমন এক পরিবেশে পরিবার ও শরয়ি বিধানের কণ্ঠ নীরব হয়ে পড়ে। ডালপালা ছাঁটাই করে লাভ নেই, যখন গোড়াতেই কোপ লেগেছে: ওয়ালির মর্যাদা সরিয়ে দিলে পাপের পথে বাঁধ ভাঙে।

⦿ এখন পথ কী?

  • ওয়ালি–কেন্দ্রিক বিবাহে ফেরা: ওয়ালির সম্মতি ও উপস্থিতিকে নথিভুক্ত ও যাচাইকৃত বাধ্যতামূলক ধাপে পরিণত করা।
  • রেজিস্ট্রেশনের শুদ্ধতা: “শর্টকাট” বন্ধ করে দায়িত্বশীল যাচাই চালু করা।
  • পরিবার–আলিম–সমাজের সমন্বয়: বিবাহকে পারিবারিক তত্ত্বাবধান ও আলিমদের পরামর্শের সঙ্গে বাস্তবে পুনঃসংযুক্ত করা।

চোখ বুজে থাকা সমাধান নয়। পরিবারের মর্যাদা, শরয়ি বিধান ও সামাজিক সুবিচার—এই তিনটিকে একসাথে দাঁড় করাতে না পারলে, আওয়াজ যতই তুলি, ভাঙনটা ততই নীরবে গভীর হবে।

ওয়ালি/অভিভাবকের মর্যাদা ফিরলে—তবেই যেনা–ব্যাভিচারের স্রোত ঠেকানোর বাস্তব বাঁধ দাঁড়াবে।


⦿ সতর্ক আহ্বান: এখনই আলিম সমাজকে অগ্রণী ও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে—শরয়ি বিবাহের গার্ডরেল পুনঃস্থাপনে কণ্ঠস্বর উঁচু করে সংগঠিত হতে হবে; নইলে অনৈতিকতা ও পারিবারিক ধসের এক ভয়ংকর কালো অধ্যায় আমাদের সামনে খুলে যাবে।


⦿ আইনি উদ্যোগের প্রয়োজন: জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে রিট করা জরুরি। আলিম সমাজ, সচেতন আইনজীবী ও নাগরিক সংগঠনগুলো—প্রাসঙ্গিক আইন, শরয়ি দলিল, সামাজিক ক্ষয়ের তথ্য–প্রমাণ ও তুলনামূলক দৃষ্টান্ত সংযুক্ত করে—বিয়েতে ওয়ালির সম্মতি/উপস্থিতিকে বাধ্যতামূলক করার স্পষ্ট ব্যাখ্যা বা প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশনা জরুরী।

আদালতপথের এই উদ্যোগ বিষয়টিকে জনমতের কেন্দ্রে আনবে এবং সরকারকেও আইন পর্যালোচনা ও সংশোধনে সচেষ্ট করবে। এটি কোনো আবেগতাড়িত আহ্বান নয়; শান্ত, আইনসিদ্ধ ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ—কারণ বর্তমান কাঠামো শরিয়া–বিরুদ্ধ বাস্তবতা তৈরি করেছে।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫