দা'য়ীর পরিচয়
দ্বীন ইসলামের সর্বপ্রথম দা'য়ী মুহাম্মদ ﷺ:
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ قُمْ فَأَنْذِرْ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
"হে চাদরাবৃতকারী। উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন, আপন পোশাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দিবেন না এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সবর করুন। [সূরা মুদ্দাসসির: ১-৭]
২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
“আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন। আর আপনার অনুসারী মমিনদের প্রতি সদয় হোন।” [সূরা শু'আরা: ২১৪-২১৫]
৩. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ
"অতএব, আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না।” [সূরা হিজর: ৯৪]
৪. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيْرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيْرًا
“হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। আর আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।”[সূরা আহজাব:৪৫-৪৬]
৫. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَادْعُ إِلىٰ رَبِّكَ إِنَّكَ لَعَلَىٰ هُدًى مُسْتَقِيْمٍ
"আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন।" [সূরা হাজ্জ ৬৭]
৬. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَادْعُ إِلىٰ رَبِّكَ وَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
“আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি দাওয়াত দিন এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।" [সূরা কাসাস ৮৭]
৭. আল্লাহ তায়ালার বাণী:
قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللهَ وَلَا أُشْرِكَ بِهِ إِلَيْهِ أَدْعُوْا وَإِلَيْهِ مَآبِ
"বলুন, আমাকে এরূপ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, আমি আল্লাহর এবাদত করি। আর তাঁর সাথে শরিক না করি। আমি তাঁর দিকেই। দাওয়াত দেই এবং তাঁর কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন।"[সূরা রা'দ:৩৬]
দা'ওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহর দিকে দা'ওয়াত করা সকল নবী-রসূলগণের কাজ:
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
رُسُلًا مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَى اللهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا
“সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা নিসা: ১৬৫]
২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ عَلَىٰ فَتْرَةٍ مِنَ الرُّسُلِ أَنْ تَقُوْلُوا مَا جَاءَنَا مِنْ بَشِيْرٍ وَلَا نَذِيْرٍ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَشِيْرٌ وَنَذِيْرٌ وَاللهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
"হে আহলে কিতাবরা! তোমাদের কাছে আমার রসূল আগমন করেছেন, যিনি রসূলগণের বিরতির পর তোমাদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা একথা বলতে না পার যে, আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শক আগমন করেননি। অতএব, তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শক এসে গেছেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।" [সূরা মায়েদা: ১৯]
৩. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
يَوْمَ يَجْمَعُ اللهُ الرُّسُلَ فَيَقُوْلُ مَاذَا أُجِبْتُمْ قَالُوا لَا عِلْمَ لَنَا إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ
"যেদিন আল্লাহ সকল রসূলগণকে একত্রিত করে বলবেন: তোমরা কি উত্তর পেয়েছিলে? তাঁরা বলবেন। আমরা অবগত নই। আপনিই অদৃশ্য বিষয়ে মহাজ্ঞানী।”[সূরা মায়েদা: ১০৯]
৪. আল্লাহ তা’য়ালার বাণী:
إِذْ جَاءَتْهُمُ الرُّسُلُ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللهَ
“যখন তাদের কাছে রসূলগণ এসেছিলেন সম্মুখ দিক থেকে এবং পেছন দিক থেকে এ কথা বলতে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও এবাদত করো না।” [সূরা হা-মীম সেজদাহ : ১৪]
সকল উম্মত দা'ওয়াতের কাজে রসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে শরিক:
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ
"তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।" [সূরা আল-ইমরান: ১১০]
২. আল্লাহ তা’য়ালার বাণী:
وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَيُطِيْعُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারী একে অপরের সহায়ক। তারা সৎকাজের নির্দেশ করে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করে। এদেরই উপর আল্লাহ দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, সুকৌশলী।" [সূরা তাওবা: ৭১]
ইসলামের দায়ী হলো: প্রতিটি মুসলিম, বিবেকবান ও সাবালক নারী পুরুষ, যিনি সর্বপ্রকার কল্যাণের আহ্বানকারী ও তার প্রতি উৎসাহ দানকারী এবং সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বারণকারী ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী।
দা'ওয়াত কখনো এককভাবে হতে পারে আবার কখনো জামাতবদ্ধভাবে। নবী ﷺ মুস'আব ইবনে উমাইরকে সর্বপ্রথম দায়ী হিসাবে মদিনায় পাঠিয়ে ছিলেন। অনুরূপ তিনি মু'আয ইবনে জাবাল ও মূসা আশআরী [রাঃ] কে ইয়েমেনে দায়ী করে প্রেরেণ করে ছিলেন। আবার বি'রে মাউনায় নবী ﷺ ৭০জন কারী হাফেজ সাহাবী কে কুরআন তথা দ্বীন শিক্ষার জন্য পাঠিয়ে ছিলেন।
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। [সূরা আল-ইমরান:১০৪]
দায়ী সর্বাবস্থায় এবং প্রতিটি মুহূর্তে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাবেন।
দায়ীর কাজ দা'ওয়াত ইলাল্লাহ করা। মানুষ তাঁর দা'ওয়াত কবুল করল কি করল না, ইহা তাঁর দেখার বিষয় নয়। দায়ী দাওয়াতের ফলাফল আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেবেন। তবে দাওয়াত গ্রহণ না করলে মনে ব্যথা অনুভব থাকতে হবে। আর ইহা দায়ী যে দাওয়াতের কাজ পছন্দ করেন তার প্রমাণ।
দায়ীর কাজ হলো দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাওয়া যদিও একজনও দাওয়াত কবুল না করে।
মনে রাখতে হবে যে, দায়ীর মূল পারিশ্রমিক আল্লাহর কাছে কোন মানুষের নিকটে নয়।
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
“দাওয়াতের কাজের বিনিময় তোমাদের নিকট চাই না। বরং আমার প্রতিদান বিশ্ব জাহানের রবের নিকট।" [সূরা শু'আরা: ১০৯]
দা'য়ীর প্রতিদান ও মর্যাদা
১. দায়ী কথা বলার দিক থেকে আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম ব্যক্তি:
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
"ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে দা'ওয়াত ইলাল্লাহ করে ও সৎআমল করে এবং বলে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।" [সূরা হা-মীম সেজদাহ ৩৩]
২. দায়ীর সওয়াব অধিক:
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
فَوَاللهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَكَ حُمُرُ النَّعَمِ
"আল্লাহর কসম! তোমার দ্বারা যদি একজন মানুষও হেদায়েত লাভ করে তবে উহা লাল উটের চেয়েও উত্তম।" [বুখারী ও মুসলিম]
৩. দায়ীর জন্য নবী ﷺ এর বিশেষ দুয়া:
রসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণী:
نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مَقَالَتِيْ فَبَلَّغَهَا فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ غَيْرِ فَقِيْهٍ وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ
"আল্লাহ ঐ ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করবেন যে আমার বাণী শুনে এবং তা প্রচার করে। কিছু ফিকাহ (দ্বীনের সূক্ষ্ম জ্ঞান) বহণকারী ফকীহ (দ্বীনের সূক্ষ্ম জ্ঞানী) নয়। আর কিছু ফিকাহ বহণকারী এমন ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দেয়, যে তার চেয়েও অধিক ফকীহ।” [সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ্ ১/৪৫]
৪. দায়ীর দ্বারা হেদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সমপরিমাণ তাঁর সওয়াব হবে:
নবী ﷺ এর বাণী:
مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
“যে ব্যক্তি কোন কল্যাণের পথ প্রদর্শন করল, তার জন্য কাজটি সম্পাদনকারীর পরিমাণ সওয়াব হবে।” [মুসলিম: হা: ১৮৯৩]
আরো নবী ﷺ বলেন:
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْئًا
"যে ব্যক্তি হেদায়েতের দিকে আহ্বান করে, তার জন্য সওয়াব তাদের সমপরিমাণ যারা এর অনুসরণ করল। এতে কারো কোন সওয়াব কম করা হবে না।” [মুসলিম হা: ২৬৭৪]
৫. দায়ীর জন্য আল্লাহর রহমত ও আসমান-জমিনের সকলের দুয়া:
রসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণী:
إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرَضِيْنَ حَتَّى النَّمْلَةَ فِيْ جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوْتَ لَيُصَلُّوْنَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ
"নিশ্চয় আল্লাহ মানুষদের কল্যাণ শিক্ষাদানকারীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন ও তাঁর ফেরেশতাগণ তার জন্য ক্ষমা চান এবং আসমান ও জমিনবাসীরা এমনকি পিঁপড়া তার গর্তে ও মাছ পানিতে তার জন্য দু'য়া করে।” (সহীহ তিরমিধী হা: ২১৫৯]
৬. মৃত্যুর পরেও দা'য়ীর সওয়াব জারী থাকবে:
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ
"মানুষ মরে গেলে তার তিনটি আমল ব্যতীত সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। সদকা জারিয়া, এমন জ্ঞানদান যার দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় এবং সৎ সন্তান সন্ততি যে তার জন্য দুয়া করে।” [মুসলিম হা: ১৬৩১]
দা'য়ীর মূল পুঁজি
প্রথমত: সূক্ষ্ণ বুঝ
১. আমলের পূর্বে জ্ঞানার্জন এবং কুরআনের অর্থ ও বিধানসমূহের গবেষণা ও সুন্নতের সঠিক বুঝের ভিত্তিতে সূক্ষ্ণ বুঝ। আর এ বুঝ বেশ কিছু জিনিসের উপর কেন্দ্রীভূত যেমন:
(ক) ইসলামী আকীদা কুরআন ও সহীহ হাদীস এবং আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইজমার দলিল ভিত্তিক সঠিক সূক্ষ্ণ বুঝ।
(খ) দায়ী তার জীবনের উদ্দেশ্য ও মানুষ সমাজে তাঁর কেন্দ্র কি তা বুঝা।
(গ) দুনিয়ার ধোঁকা হতে দূরে থেকে আখেরাতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখা।
(ঘ) সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
দ্বিতীয়ত: ফলপ্রসূ গভীর ঈমান
১. দায়ী দৃঢ় ঈমান রাখবেন যে, তিনি ইসলামের হেদায়েত পেয়েছেন এবং যার প্রতি দা'ওয়াত করছেন ইহাই একমাত্র সত্য আর বাকি সব বাতিল ও ভ্রষ্ট।
২. বর্তমানে যখন ইসলামের ঝান্ডা দুর্বল এবং কুফুরের ঝান্ডা শক্তিশালী তখন একজন দায়ীর জন্য মজবুত ঈমান অতীব প্রয়োজন; যাতে করে প্রতিটি অবস্থায় সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারেন।
৩. মজবুত ঈমানের ফলাফল এবং চাহিদা কি? নিম্নে তার বর্ণনা দেয়া হলোঃ
ভালবাসা: দা'য়ী তাঁর রবকে এবং রব তাঁর বান্দা দায়ীকে ভালবাসবেন।
রবকে ভালবাসার দাবি হলো:
১. মুমিনদের প্রতি সহৃদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়া।
২. কাফেরদের প্রতি কঠোর ও শক্ত হওয়া।
৩. আল্লাহর পথে জিহাদ করা।
৪. কোন নিন্দুকের নিন্দায় কর্ণপাত না করা।
৫. জীবনের প্রতিটি বিষয়ে রসূলুল্লাহ ﷺ-এর হেদায়েতের পূর্ণ অনুসরণ করা। [সূরা হাশর ও সূরা আহজাব : ২১ দ্রষ্টব্য]
৬. সর্বদা আল্লাহর জিকিরে জিহবাকে ভিজিয়ে রাখা।
৭. নির্জনে আল্লার সঙ্গে মুনাজাত করা।
৮. আল্লাহর এবাদত করে তাতে স্বাদ-মজা পাওয়া।
৯. আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু হতে বঞ্চিত হলেও কোন আফসোস না করা।
১০. নিজের ভালবাসার জিনিসকে ত্যাগ করে আল্লাহ যা ভালবাসেন সে সমস্ত জিনিসকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
১১. আল্লাহর কোন হারামকৃত বস্তু লঙ্ঘন করা হলে ঈর্ষায় জ্বলে উঠা।
১২. আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে ভালবাসা। তাই মৃত্যুকে সাদরে গ্রহণের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা এবং ঘৃণা না করা।
ভয়-ভীতি: যে আল্লাহকে ভয় করে সে আল্লাহর পরিচয় পায়, আর যে আল্লাহর পরিচয় পায় সে কখনো অন্য কাউকে ভয় করে না।
আশা আকাঙ্ক্ষা: মজবুত ঈমানের ব্যক্তি কখনো নিরাশ হয় না। বরং সর্বদা আল্লাহর প্রতি বিরাট আশা নিয়ে সামনে চলতে থাকে এবং মধ্য পথে থেমে যায় না ও পিছু পা হয় না।
তৃতীয়ত: দৃঢ় সম্পর্ক
দায়ী তার রবের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক এবং প্রতিটি বিষয়ে তাঁর উপর ভরসা রাখবেন। আল্লাহ তায়ালা একমাত্র ভাল-মন্দের মালিক। আল্লাহর উপরে যে ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ ছাড়া কোন মখলুক কারো কোন লাভ-ক্ষতি করতে পারে না এ বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ তা'য়ালা যা চান তাই হয় আর যা চাননা তা হওয়া অসম্ভব। বিপদ থেকে মুক্তির জন্য একমাত্র তাঁরই নিকট প্রার্থনা করা। কথায় ও কাজে এখলাস ও সত্যতা থাকা। আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান সর্বপ্রকার ভয়-ভীতি ও দুঃখ-কষ্ট অন্তর থেকে দূর করে দেয়।
দা'য়ীর গুণাবলী
দায়ীর গুণাবলী অর্থাৎ-ইসলামের গুণাবলি যা আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনে এবং তাঁর রসূল ﷺ বিশুদ্ধ হাদীসে বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রথমত: দাওয়াতের কাজে পূর্ণ সফলতা অর্জনের জন্য যে সকল গুণের প্রয়োজন:
১. জ্ঞানার্জন:
(ক) কুরআন ও সহীহ হাদীসের সঠিক জ্ঞান।
(খ) সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধের নিয়ম-নীতির পূর্ণ জ্ঞান।
(গ) দাওয়াতের পদ্ধতি, মাধ্যম ও মাদউর অবস্থা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান।
(ঘ) সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান।
২. নরম ও সহজ প্রকৃতির হওয়া।
৩. ধৈর্যশীল হওয়া।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেন: দায়ীর জন্য এ তিনটি গুণের অধিকারী হওয়া জরুরি। দাওয়াতের পূর্বে “আমর বিল মা'রূফ ওয়ান্নাহয়ি 'আনিল মুনকার” (সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্ম থেকে নিষেধ)-এর পূর্বে জ্ঞান। এ ছাড়া দাওয়াতের সময় নরম ও সহজ পথ অবলম্বন করা। আর দাওয়াতের পরে ধৈর্যধারণ করা। [আল-হিসবা ফিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া: পৃ-৪৮ মাজমু'য়া ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৮/১৬৭]
৪. এখলাস।
৫. কথায় কাজে মিল।
দ্বিতীয়ত: দাওয়াতের কর্মতৎপরতা প্রাণবন্ত হওয়ার জন্য যে সকল গুণাবলির প্রয়োজন:
১. মজবুত ঈমান।
২. আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পূর্ণ মহব্বত।
৩. আল্লাহর নিকটে যা আছে তা অর্জনের প্রতি উৎসাহ।
৪. আল্লাহর জন্য রাগ ও ঈর্ষান্বিত হওয়া নিজের জন্য নয়।
৫. মজবুত একিন ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থাবান হওয়া।
৬. রসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশের বিপরীত কিছু করার ব্যাপারে পূর্ণ সতর্ক থাকা।
৭. মানুষের হেদায়েতের জন্য আগ্রহী হওয়া।
৮. কল্যাণকর কাজ করার প্রতি উৎসাহিত হওয়া।
৯. 'হুসনুল খাতেমা' তথা শেষ ভালর প্রতি সর্বদা আগ্রহী থাকা।
তৃতীয়ত: দৃঢ় সঙ্কল্প ও অটল সিদ্ধান্তর জন্য যে সকল গুণাবলির প্রয়োজন:
১. বিপদ-আপদ বরদাস্ত ও সহ্য করার ক্ষমতা।
২. মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা।
৩. কল্যাণকর কার্যাদির সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই তার সুযোগ গ্রহণ করা।
৪. দৈহিক ও মানসিক শক্তিশালী হওয়া।
৫. কাজে সুদক্ষ হওয়া।
৬. পূত-পবিত্র ও আত্মিক শক্তিশালী হওয়া।
৭. প্রয়োজন ও মঙ্গলের জন্য কঠিন হওয়া।
৮. আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য হেকমতের সীমায় থেকে রাগ করা।
চতুর্থত: সাধারণ কিছু উত্তম চরিত্র ও গুণাবলি যা দা'য়ীর জন্য খুবই প্রয়োজন:
১. ওয়াদা পূরণ ও আমানতদারী থাকা।
২. অপরকে অগ্রাধিকার দেয়া।
৩. বিচক্ষণতা ও বীরত্ব।
৪. প্রশংসনীয় লজ্জা।
৫. আত্মসম্মান বোধ।
৬. পূর্ণ দৃঢ়তা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও দূরদর্শিতা।
৭. সময় ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা।
৮. সত্যবাদিতা।
৯. দয়াপরশ।
১০. বিনয়ী ও নম্র-ভদ্রতা।
১১. ইনসাফ।
১২. অন্যের প্রতি এহসান।
১৩. তাকওয়া তথা দ্বীনের আদেশ পালন ও নিষেধ ত্যাগ।
১৪. ক্ষমা ও মার্জনা।
১৫. ধীরস্থিরতা।
১৬. আখেরাতকে দুনিয়ার উপর প্রাধান্য দেয়া।
১৭. দানশীলতা ও বদান্যতা।
১৮. সহনশীলতা।
কিছু গুণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
(ক) জ্ঞানার্জন:
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
قُلْ هَذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْا إِلَى اللهِ عَلَىٰ بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
“বলুন, এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দা'ওয়াত দেই-আমি এবং আমার অনুসারীরা। আর আল্লাহ মহা পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।”[সূরা ইউসুফ: ১০৮]
২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
ادْعُ إِلىٰ سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ
“আপনার প্রতিপালকের পথের প্রতি দাওয়াত করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়েও উত্তম উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপানার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন যে, তাঁর পথ থেকে কে ভ্রষ্ট হয়ে গেছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে যারা হেদায়েত লাভ করেছে।” [সূরা নাহল : ১২৫]
৩. নবী ﷺ এর বাণী:
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
“জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের প্রতি ফরজ।" [ইবনে মাজাহ, হাদীসটি সহীহ, সহীহুল জামে'- আলবানী, হা: নং ৩৯১৪]
কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞানার্জন করাই হলো আসল জ্ঞান। কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যা সকল কল্যাণের মূল। কুরআন প্রত্যেক কল্যাণের শিক্ষক ও হেদায়েত দানকারী।
আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيْرًا
"এই কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাবিধ সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহাপুরস্কার রয়েছে।” [সূরার বনী ইসরাঈল:৯]
এ ছাড়া সহীহ বুখারী শরীফ, সহীহ মুসলিম শরীফ ও সুনান গ্রন্থসমূহ যেমন: আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ সালাফে সালেহীনদের বুঝে ভাল করে অধ্যায়ন করবে।
(খ) কথায় কাজে মিল:
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُوْلُوا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ
“মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না,তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।” [সূরা সফ: ২-৩]
২. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
أَتَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
“তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? [সূরা বাকারা: ৪৪]
৩. নবী ﷺ বলেন:
يُؤْتَى بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُ بَطْنِهِ فَيَدُوْرُ بِهَا كَمَا يَدُوْرُ الْحِمَارُ بِالرَّحَى فَيَجْتَمِعُ إِلَيْهِ أَهْلُ النَّارِ، فَيَقُوْلُوْنَ يَا فُلَانُ مَا لَكَ أَلَمْ تَكُنْ تَأْمُرُ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ؟ فَيَقُوْلُ بَلَى، قَدْ كُنْتُ آمُرُ بِالْمَعْرُوْفِ وَلَا آتِيْهِ وَأَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيْهِ
“কিয়ামতের দিন একজন মানুষকে নিয়ে এসে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। তার পেটের নাড়ীভুঁড়ি ঝুলে পড়বে এবং সে তা নিয়ে গাধা যেমন জাঁতাকল নিয়ে ঘুরে সেরূপ ঘুরতে থাকবে। অতঃপর তার নিকটে জাহান্নামবাসীরা জমায়েত হবে। এরপর বলবে: হে অমুক! আপনার কি হয়েছে, আপনি কি আমাদেরকে সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হাঁ, আমি সৎকর্মের আদেশ দিতাম কিন্তু নিজে তা করতাম না এবং অসৎকর্মের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম।” [বুখারী ও মুসলিম]
(গ) সত্যবাদিতা:
সত্যতা যা বাস্তবের সাথে মিল রয়েছে তাকে বলা হয়। ইহা ইচ্ছা, কথা ও কর্মে হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। সত্যবাদী দা'য়ীর সত্যতা তার চেহারায় এবং কথায় ফুটে উঠে। আল্লাহ সত্যবাদীদের সাথে থাকতে বলেছেন।
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” [সূরা তাওবাহ: ১১৯]
২. নবী ﷺ বলেন:
عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ، فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ، وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا
“তোমাদের প্রতি সত্যকে জরুরি করে নাও; নিশ্চয় সত্য কল্যাণের পথ দেখায়। আর কল্যাণ জান্নাতের পথ দেখায়। একজন মানুষ সর্বদা সত্য বলে এবং সত্য বলার চেষ্টা করে। এমনকি আল্লাহর কাছে তার নাম মহাসত্যবাদী বলে লিখিত হয়।" [মুসলিম]
(ঘ) ধৈর্যধারণ: ধৈর্যধারণ ইসলামের একটি ফরজ কাজ ও এবাদত। ইহা ঈমানের অর্ধেক। কুরআনুল কারীমে ধৈর্যের ব্যাপারে ৮০ বারের অধিক নির্দেশ করা হয়েছে। ধৈর্যধারণ তিন প্রকার যথা:
(১) সৎকর্ম করতে ধৈর্যধারণ করা।
(২) অসৎকর্ম ত্যাগ করতে ধৈর্যধারণ করা।
(৩) বিভিন্ন ধরনের বালা-মসিবতে ধৈর্যধারণ করা।
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ إِلَّا الَّذِيْنَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
“কসম যুগের, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকিদ করে সত্যের এবং তাকিদ করে সবরের।” [সূরা আসর:১-৩]
২. আল্লাহ তা’য়ালার বাণী:
وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
“হে বৎস!, সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।” [সূরা লোকমান: ১৭]
৩. নবী ﷺ কে সবচেয়ে মসিবতগ্রস্ত মানুষ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন:
الْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الصَّالِحُوْنَ ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ مِنَ النَّاسِ، يُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِيْنِهِ فَإِنْ كَانَ فِيْ دِيْنِهِ صَلَابَةٌ زِيْدَ فِيْ بَلَائِهِ وَإِنْ كَانَ فِيْ دِيْنِهِ رِقَّةٌ خُفِّفَ عَنْهُ
“ (সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত হলেন) নবীগণ, এরপর সৎব্যক্তিগণ। অতঃপর মানুষের মাঝে যারা যত শ্রেষ্ঠতর তারা ততো বেশি বিপদগ্রস্ত। দ্বীন হিসেবে মানুষ মসিবতগ্রস্ত হয়। যদি তার দ্বীন মজবুত হয় তাহলে তার মসিবত বাড়িয়ে দেয়া হয়। আর যদি তার দ্বীন হালকা হয় তাহলে তার মসিবত সহজ করা হয়।” [আহমাদ, আল-ঈমান-ইবনে তাইমিয়া: ১/৬২ আলবানী (রহ:) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
(ঙ) দয়াপরবশ:
দায়ীকে অবশ্যই দয়াবান হতে হবে। যে মানুষের প্রতি দয়া করে না তার প্রতি আল্লাহও দয়া করেন না। দয়াবানদের প্রতি আল্লাহ দয়া করেন। জমিনবাসীর প্রতি দয়া করলে আসমানবাসী আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন। রসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর উম্মতের প্রতি বড় দয়াপরবশ ছিলেন।
১. আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَحِيْمٌ
"তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।"[সূরা তওবাহ: ১২৮]
দায়ী দয়াবান হলে অজ্ঞ মূর্খদের পক্ষ থেকে যে সব দুর্ব্যবহার পেয়ে থাকে তা সহজভাবে হজম করতে পারবেন। কারণ, কঠোর ব্যবহার হলে মানুষ দূরে সরে যাবে। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর নবী সম্পর্কে এরশাদ করেন:
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
"অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত এবং আপনি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয় হতেন, তবে নিশ্চয়ই তারা আপনার সংসর্গ হতে দূরে সরে যেত। অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন ও তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন”। [সূরা আল-ইমরান: ১৫৯]
(চ) বিনয়ী ও নম্র-ভদ্রতা:
একজন দা'য়ীকে সর্বদা বিনয়ী ও ভদ্র হওয়া জরুরি। স্মরণ রাখতে হবে যে, অহংকার অজ্ঞতা ও মূর্খতা। অহংকার একমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না। দাম্ভিক সত্যগ্রহণ করে না এবং নিজেকে বড় মনে করে ও মানুষকে ঘৃণা করে। যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ তার মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেন। অজ্ঞরা জ্ঞান অথবা সম্পদ কিংবা পদমর্যাদা বা বংশ মর্যাদা ও শক্তির বড়াই করে থাকে। এ ছাড়া নিজের মতামতকে সবার উপরে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, যার ফলে সত্য গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়।
দা'য়ী মানুষকে সত্য ও ইসলামের উত্তম চরিত্রের দিকে আহ্বান করেন আর তিনি নিজেই যদি নম্রতা ও বিনয়ী- এর মত একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ থেকে বঞ্চিত থাকেন তবে কিভাবে কাজ চলাবেন? রসূলুল্লাহ ﷺ উসামা ইবনে জায়েদ [রাঃ] কে এক বিশাল বাহিনীর সেনাপতি নিয়োগ করেছিলেন যার সৈন্যদের মধ্যে অনেক বড় বড় সাহাবা কেরামও উপস্থিত ছিলেন। সাহাবাগণ কোন অহংকার না করে তাকে আমীর হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। স্মরণ রাখতে হবে যে, অহংকারের অনেক ক্ষতি রয়েছে এবং বিনয়ের বহু উপকার রয়েছে।
আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর নবীকে লক্ষ্য করে বলেন
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ
" এবং যারা আপনার অনুসরণ করে সেই সব মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হন।" [সূরা শু'আরা ২১৫]
(ছ) মেলামেশা ও একাকীত্ব:
দায়ী অধিকাংশ সময় মাদউর সংমিশ্রণে থাকবেন এবং প্রয়োজনে নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব গ্রহণ করতে পারেন।