নবী-রসূলগণের দা'ওয়াতের পদ্ধতি দা'ওয়াত ও তাবলীগ আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল ১ টি

দা'ওয়াত শব্দের অর্থ:

দাওয়াত শব্দটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ একাধিক হতে পারে। যেমন: আহ্বান করা, প্রশ্ন করা, একত্রিত হওয়া ও দু'য়া করা ইত্যাদি।

ইসলামের পরিভাষায় দাওয়াত শব্দের অর্থ দু'টি

(ক) প্রচার-প্রসার ও আহ্বান করা ও (খ) দ্বীন ও রেসালাত।

১. আহ্বান অর্থে:

প্রচার-প্রসার ও আহ্বান ভাল-মন্দ উভয়টির হতে পারে।

পরিভাষায় দাওয়াতের অর্থ হলো:

সকল মানুষের নিকট ইসলামের প্রচার করা এবং তাদেরকে একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর দ্বীন ও পথের দিকে আহ্বান করা। আর তাদেরকে ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা দেয়া এবং তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বীনের বাস্তবায়ন করানো।

২. দ্বীন ও রেসালাত অর্থে:

আল্লাহ তায়ালার মনোনীত দ্বীন ও রেসালাত যা তিনি বিশ্ব জাহানের জন্য পছন্দ করেছেন। আর যার শিক্ষা অহিরূপে তাঁর রসূলের প্রতি নাজিল করেছেন এবং কুরআনুল করীম ও সুন্নাতে রসূলের মধ্যে তার সংরক্ষণ করেছেন।

তাবলীগ শব্দের অর্থ:

তাবলীগ শব্দটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ: প্রচার ও প্রসার করা। আর পরিভাষায় তাবলীগ বলা হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত “অহি মাতলু" তথা কুরআন ও "অহি গাইর মাতলু" তথা রসুলুল্লাহ -এর সহীহ হাদীসসমূহ, উপযুক্ত মাধ্যম ও উত্তম পদ্ধতিতে সকল মানুষের নিকট পৌঁছানো।

আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي   الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ٦٧

“হে রসূল! আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা নাজিল হয়েছে তার প্রচার করুন। আর যদি তার প্রচার না করেন তাহলে তাঁর রেসালাতের তাবলীগ তথা প্রচারই করলে না।"[সূরা মায়েদা: ৬৭]

রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

   بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً رواه البخاري

"তোমরা আমার নিকট থেকে একটি আয়াত হলেও তা তাবলীগ প্রচার কর।” [বুখারী]

এখানে রসূলুল্লাহ ﷺ আয়াতের কথা বলেছেন। অতএব, এ হাদীস উল্লেখ করে ইচ্ছামত যা-তা প্রচার করা নিঃসন্দেহে এ হাদীসের সরাসরি বিপরীত কাজ হবে।

এখানে আমাদের নিকট স্পষ্ট হলো যে, দা'ওয়াত শব্দটি ব্যাপক যা দা'ওয়াত ও তাবলীগ উভয় অর্থে আসে। কিন্তু তাবলীগ শব্দটি নির্দিষ্ট যা শুধুমাত্র প্রচারের অর্থে আসে। অতএব, দাওয়াত বলতে তাবলীগও বুঝায়। কিন্তু তাবলীগ বলতে দাওয়াত বুঝানো হয় না। সুতরাং, দা'ওয়াত বলতে অমুসলিমদের জন্য আর তাবলীগ বলতে মুসলিমদের জন্য এমনটা বলা একান্ত অজ্ঞতার পরিচয়? বরং দাওয়াত ও তাবলীগ মুসলিম ও অমুসলিম। সকলের জন্য প্রযোজ্য।

দা'ওয়াত ও তাবলীগের হুকুম

দা'ওয়াত ও তাবলীগের কাজ প্রতিটি মুসলিম নারী-পুরুষের ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুসারে করা ফরজে 'আইন তথা সবার প্রতি ফরজ। আর মুসলিম উম্মতের উপর ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ- কিছু সংখ্যক মানুষ করলে সবাই পাপমুক্ত হবে। আর যদি কেউ না করে তাহলে সকলে সমান পাপী হবে।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ١٠٤

“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।"[সূরা আল-ইমরান: ১০৪]

   আল্লাহ তা'য়ালার আরো বাণী:

   كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ ١١٠

   “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।”[সূরা আল-ইমরান : ১১০]

আর দেশের রাষ্ট্রপতি ও ক্ষমতাসীনদের প্রতি নির্দিষ্টভাবে দাওয়াতের কাজ করা ফরজে আইন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ ٤١

"তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করবে। আর প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।” [সূরা হাজ্ব: ৪১]

   নবী ﷺ-এর বাণী:

   وَالْإِمَامُ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ متفق عليه

"রাষ্ট্রপ্রধান দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।"

আর আল্লাহর প্রতি দা'ওয়াত করা হলো সবচেয়ে বড় দায়িত্ব যা করা ফরজ এরপর দা'ওয়াত করা ফরজ হলো আলেমদের প্রতি। এঁদের থেকে আল্লাহ তা'য়ালা জ্ঞান প্রচার ও তা গোপন না করার অঙ্গীকার নিয়েছেন।

   আল্লাহ তা'য়ালার বাণী:

   وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ ١٨٧

   “আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল।

   আর তারা কেনাবেচা করল সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচাকেনা।” [সূরা আল-ইমরান : ১৮৭]

   নবী ﷺ বলেন:

   مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ فَكَتَمَهُ أَلْجَمَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صحيح الترغيب والترهيب

“যে ব্যক্তিকে (দ্বীনের) জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে। অতঃপর সে তা গোপন রাখল আল্লাহ তা'য়ালা কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরাবেন।" [হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহুত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, আলবানী- হাঃ নং ১২১]