আবূ মূসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“আল্লাহ তাআলা আমাকে যে হিদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তার দৃষ্টান্ত এমন এক বৃষ্টির মতো যা কোনো জমিতে বর্ষিত হলো।
তখন ঐ জমির একটি অংশ ছিল উত্তম — তা পানি গ্রহণ করল, ফলে তাতে প্রচুর ঘাস ও শস্য জন্মাতে লাগল।
আরেক অংশ ছিল অনুর্বর জমিন, যা নিজে কিছু জন্মায়নি, কিন্তু পানি ধরে রেখেছে — ফলে মানুষ সে পানি থেকে উপকৃত হলো, তা পান করল, পশুদের পান করাল, চাষাবাদ করল ও চারণ করল।
আর এক অংশ ছিল এমন জমিন, যা ছিল সমতল, পানিকে ধরে রাখতে পারে না, কিছু জন্মায়ও না।
এই তিনটির উদাহরণ হলো —
যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করল, আল্লাহ তাআলা যেসব বিষয় নিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন, তা থেকে উপকৃত হলো, নিজেও শিখল ও অন্যকেও শিক্ষা দিল — তার দৃষ্টান্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মতো।
আর যে ব্যক্তি এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দিল না, মাথা তুলল না এবং আল্লাহর হিদায়াত গ্রহণ করল না — যা আমি নিয়ে প্রেরিত হয়েছি — তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ অনুর্বর জমিনের মতো।”
* (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৮২)
হাদীসটির অর্থ ও উদ্দেশ্য হলো—
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হিদায়াত নিয়ে এসেছেন, তা বৃষ্টির সঙ্গে উপমা দেওয়া হয়েছে। এর মানে হলো, জমিন তিন প্রকারের হয়—তেমনি মানুষও তিন প্রকারের হয়।
প্রথম প্রকার জমিন:
যে জমিন বৃষ্টির পানি থেকে উপকৃত হয়—অর্থাৎ শুকনো অবস্থায় ছিল, কিন্তু বৃষ্টি পেয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং ঘাস-গাছ জন্মাতে থাকে। ফলে মানুষ, জন্তু, ফসল ইত্যাদি উপকৃত হয়।
তেমনি প্রথম প্রকার মানুষ হলো—যারা হিদায়াত ও জ্ঞান পায়, তা হৃদয়ে ধারণ করে, নিজের অন্তরকে জীবিত করে, সে অনুযায়ী আমল করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। ফলে সে নিজেও উপকৃত হয় এবং অন্যকেও উপকৃত করে।
দ্বিতীয় প্রকার জমিন:
যে নিজে ফলফলাদিতে উপকৃত না হলেও পানি ধরে রাখে, যাতে অন্যরা ও পশুপাখি উপকৃত হতে পারে।
তেমনি দ্বিতীয় প্রকার মানুষ হলো—যাদের হৃদয় জ্ঞান সংরক্ষণ করে, কিন্তু গভীর বোধশক্তি বা প্রখর ফিকহ নেই; তারা নিজেরা বেশি আমল বা ইজতিহাদ করতে পারে না, কিন্তু জ্ঞানটি সংরক্ষণ করে রাখে। পরে যখন কোনো তৃষ্ণার্ত, জ্ঞানপ্রত্যাশী, যোগ্য ব্যক্তি আসে, তখন তারা তা থেকে জ্ঞান নিয়ে উপকৃত হয়। অতএব, এরা নিজেরাও কিছুটা উপকৃত হয় এবং অন্যকেও উপকার করে।
তৃতীয় প্রকার জমিন:
যেমন অনুর্বর, লবণাক্ত জমিন—যা না নিজে কিছু জন্মায়, না পানি ধরে রাখে যাতে অন্য কেউ উপকৃত হয়।
তেমনি তৃতীয় প্রকার মানুষ হলো—যাদের হৃদয়ে না জ্ঞান সংরক্ষণের ক্ষমতা আছে, না বোঝার ও উপলব্ধির ক্ষমতা আছে। তারা যখন জ্ঞান শোনে, তখন না নিজেরা উপকৃত হয়, না অন্যকে কোনো উপকারে আনতে পারে।
আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।
* এই হাদীস থেকে বহু শিক্ষা পাওয়া যায়, যেমন—
• উপমা (দৃষ্টান্ত) দেওয়ার গুরুত্ব ও পদ্ধতি,
• জ্ঞান অর্জন ও প্রচারের ফযীলত,
• জ্ঞান ও শিক্ষার প্রতি প্রবল উৎসাহ,
• এবং জ্ঞান থেকে বিমুখ থাকার নিন্দা।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।