পানি বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। তবে তা নিম্নোক্ত দু’প্রকারের বাইরে নয়। যথা:

১। সাধারণ পানি (পবিত্র পানি):

এ প্রকার পানি তার সৃষ্টিগত মৌলিকতার উপর বজায় থাকে। এটা ঐ সমস্ত পানি যা ভূমি থেকে উদ্ভূত হয় অথবা আকাশ থেকে বর্ষিত হয়। মহান আল্লাহ্‌ বলেন:

﴿وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ﴾

অর্থাৎ: তিনি আকাশ হতে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন। (সূরা আনফাল-১১)

এ প্রকার পানির অন্তর্ভুক্ত হলো: নদীর পানি, বরফগলা পানি, তুষারের পানি ও কুপের পানি। এমনকি তাতে পানি দীর্ঘ সময় থাকার কারণে যদি তার পরিবর্তন ঘটে অথবা এমন পবিত্র বস্ত্ত মিশে যায় যা তা থেকে দূর করা সম্ভব নয় তবুও তা এ প্রকার পানির অন্তর্ভুক্ত হবে।

অনুরূপভাবে সাগরের পানি। মহানাবী (ﷺ) কে সাগরের পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ

অর্থাৎ: সাগরের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) খাওয়া হালাল।[1]

আলিমদের ঐকমত্যে: এ প্রকার পানি দ্বারা ওযূ, গোসল করা বৈধ। যদি তাতে পবিত্র বস্ত্ত মিশ্রিত হয়, তাহলে পানি পদবাচ্য থাকা পর্যন্ত তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ হবে। উম্মে হানী (রা.) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أُمِّ هَانِئٍ رَضِيَ اللَّهِ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ اغْتَسَلَ هُوَ وَمَيْمُونَةُ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ فِي قَصْعَةٍ فِيهَا أَثَرُ الْعَجِينِ

উম্মে হানী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও মায়মূনা (রা.) একই পাত্রে গোসল করতেন, তা এমন পাত্র ছিল যাতে আটার খামিরের চিহ্ন ছিল।[2]

যে সমস্ত মহিলারা মহানাবী (ﷺ) এর কন্যা যায়নাব (রা.) কে গোসল করিয়েছিলেন, তাদেরকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন:

اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا، أَوْ خَمْسًا، أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ، بِمَاءٍ وَسِدْرٍ، وَاجْعَلْنَ فِي الآخِرَةِ كَافُورًا

তোমরা তাকে তিনবার, পাঁচবার কিংবা চাইলে এরচেয়ে অধিকবার বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও এবং শেষবার কর্পুর ব্যবহার করবে।[3]

আর পানিতে পবিত্র বস্ত্ত মিশ্রিত হওয়ার ফলে যদি পানি নাম থেকে অন্য কোন নামে পরিচিতি লাভ করে যেমন চা, তাহলে এ দ্বারা পবিত্রতা অর্জন বৈধ হবে না। অনুরূপভাবে অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন বৈধ হবে না সে বস্ত্ত দ্বারা, যে বস্ত্ত অন্য কোন পবিত্র বস্ত্ত থেকে প্রস্ত্ততকৃত। যেমন: গোলাপের পানি, ইত্যাদি। কেননা এগুলো প্রকৃত পক্ষে পানি নয়। ইবনুল মুনযির বলেন,[4] আমি বিদ্বানগণের অভিমত তদন্ত করে দেখেছি যে, সর্বাধিক অভিমত হলো: গোলাপের পানি, গাছের পানি ও স্প্রে থেকে নির্গত সুগন্ধিযুক্ত তরল পানি দ্বারা ওযূ জায়েয নয়। সাধারণ পানি পদবাচ্য ছাড়া পবিত্রতা অর্জন বৈধ নয়।

২। নাপাক পানি:

এটা এমন পানি যাতে নাপাক জিনিসের মিশ্রণ ঘটে এবং তার কোন একটি বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে যায়, ফলে তার রং গন্ধ অথবা স্বাদের পরিবর্তন ঘটে এবং ব্যবহারকারী ধারণা করে যে, সে নাপাক পানি ব্যবহার করছে। এ প্রকার পানি দ্বারা ওযূ করা বৈধ নয়। কেননা এটা নিজেই নাপাক।

[1] সহীহ; আবূ দাউদ (৮৩), তিরমিযী (৬৯), নাসাঈ (১/১৭৬) ইবনে মাজাহ (৩৮৬)।

[2] সহীহ; নাসাঈ (২৪০), ইবনে মাজাহ (৩৭৮)।

[3] সহীহ; বুখারী (১২৫৩), মুসলিম (৯৩৯)।

[4] আল-মুগনী (১/১১), আল মুহালস্না (১/১৯৯)।