দাম্পত্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলে নারীর করণীয়:

স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ দু’প্রকার:

ক. জীবিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হওয়া।

খ. মৃত্যু দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়া।

উভয় অবস্থাতেই নারীর ওপর ইদ্দত ওয়াজিব, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

ইদ্দতের হিকমত: একটি পরিপূর্ণ বিয়ে ভাঙ্গার পর তার শেষ সীমা নির্ধারণ করাই ইদ্দতের হিকমত। দ্বিতীয়ত গর্ভ থেকে রেহেম মুক্ত করা, যেন বিবাহ বিচ্ছিন্নকারী ব্যতীত অন্য কারও সহবাসের বিষয়টি তার সাথে সম্পৃক্ত না থাকে, যদি এটা না করা হয় তবে গর্ভের সন্তানে মিশ্রণ ঘটবে ও বংশ বিনষ্ট হবে। ইদ্দত দ্বারা স্ত্রী সাবেক বিয়ে-বন্ধনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনসহ, তালাকদাতা স্বামীর হকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বিচ্ছেদের কারণে শোক প্রকাশ করে।

ইদ্দত চার প্রকার:

প্রথম প্রকার: গর্ভবতীর ইদ্দত। গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করলে ইদ্দত শেষ হবে, তালাকে বায়েন প্রাপ্তা হোক বা তালাকে রাজ‘ঈ প্রাপ্তা হোক। জীবিত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হোক বা মৃত্যুর কারণে বিচ্ছিন্ন হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]

“আর গর্ভধারিণীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪]

দ্বিতীয় প্রকার: ঋতু হয় তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত। এ জাতীয় নারীর ইদ্দত তিন কুরু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَٱلۡمُطَلَّقَٰتُ يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَٰثَةَ قُرُوٓءٖۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]

“আর তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন কুরু পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮] অর্থাৎ তিন ঋতু বা হায়েয পর্যন্ত।

তৃতীয় প্রকার: ঋতু তথা হায়েয হয় না এমন তালাক প্রাপ্তা নারীর ইদ্দত। এরা দু’প্রকার: ছোট যার ঋতু আরম্ভ হয় নি এবং বড় যার ঋতু আশার সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ তা‘আলা উভয়ের ইদ্দত সম্পর্কে বলেন:

﴿وَٱلَّٰٓـِٔي يَئِسۡنَ مِنَ ٱلۡمَحِيضِ مِن نِّسَآئِكُمۡ إِنِ ٱرۡتَبۡتُمۡ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَٰثَةُ أَشۡهُرٖ وَٱلَّٰٓـِٔي لَمۡ يَحِضۡنَۚ﴾ [الطلاق: ٤]

“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুমতী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছে নি তাদের ইদ্দকালও হবে তিন মাস”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪] অর্থাৎ এটিই তাদের ইদ্দত।

চতুর্থ প্রকার: স্বামী-মৃত বা বিধবা নারীর ইদ্দত। আল্লাহ তা‘আলা তার ইদ্দত সম্পর্কে বলেন:

﴿وَٱلَّذِينَ يُتَوَفَّوۡنَ مِنكُمۡ وَيَذَرُونَ أَزۡوَٰجٗا يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرۡبَعَةَ أَشۡهُرٖ وَعَشۡرٗاۖ﴾ [البقرة: ٢٣٤]

“আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৪]

বিয়ের পর স্ত্রীগমন করুক বা না করুক, স্ত্রী ছোট হোক বা বড় হোক সকল প্রকার বিধবা নারী (যাদের স্বামী মারা গেছে), এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত, তবে গর্ভবতী বিধবা নারী এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ, তার বিধান নিম্নোক্ত আয়াতে পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]

“আর গর্ভধারিণীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত”। [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৪]

ইবনুল কাইয়্যিম রচিত ‘আল-হাদইউন নববী’: (৫/৫৯৪ ও ৫৯৫) গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি সমাপ্ত হলো।