৬. ইহরামের নিয়ত করার সময় বোরকা ও নেকাব খুলে ফেলবে:

যদি নারী ইহরামের পূর্বে বোরকা ও নিকাব পরিহিতা থাকে তাহলে ইহরামের সময় তা খুলে ফেলবে। বোরকা ও নিকাব নারীর চেহারার এক জাতীয় পর্দা, তাতে চোখ বরাবর দু’টি ছিদ্র থাকে, তা দিয়ে সে দেখে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا تنتقب المحرمة«

“মুহরিম নারী নিকাব পরবে না”।[1]

বোরকা নিকাবের চেয়ে অধিক আচ্ছাদনকারী। অনুরূপ যদি ইহরামের পূর্বে হাতমোজা পরিহিতা থাকে তাও খুলে ফেলবে। বোরকা ও নিকাব ছাড়া নারী স্বীয় চেহারা ঢেকে রাখবে। যেমন, পর-পুরুষ দেখার সময় চেহারার ওপর উড়না বা কাপড় ছেড়ে দেওয়া, অনুরূপভাবে হাতমোজা ছাড়াই পুরুষের দৃষ্টি থেকে হাত ঢেকে রাখা, যেমন হাতের ওপর উড়না বা চাদর ফেলে রাখা। কারণ, চেহারা ও হাত সতর, যা ইহরামের ভেতর ও বাইরে পর-পুরুষ থেকে ঢেকে রাখা ওয়াজিব।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ  রহ. বলেন: “নারী পুরোটাই সতর, তাই ইহরাম অবস্থায় শরীর আচ্ছাদনকারী কাপড় পরিধান করা তার পক্ষে বৈধ, আরো বৈধ পালকি/বাহনের ছায়া গ্রহণ করা, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে নিকাব ও মোজা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। যদি নারী এমন বস্তু দ্বারা চেহারা আবৃত করে, যা তার চেহারাকে স্পর্শ করে না তাহলে সবার নিকট বৈধ, যদি স্পর্শ করে তবুও বিশুদ্ধ মতে সহীহ। তবে নারী স্বীয় চেহারা থেকে নেকাব বা আচ্ছাদনের কাপড় পৃথক রাখার জন্য কোনো বস্তুর সাহায্য গ্রহণ করবে না, যেমন কাঠ, হাত বা এ জাতীয় বস্তু দ্বারা পৃথক রাখবে না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দার ক্ষেত্রে হাত ও চেহারাকে বরাবর গণ্য করেছেন। নারীর হাত ও চেহারা পুরুষের শরীরের মতো, মাথার মতো নয় যা সর্বদা খোলা রাখা জরুরি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তাদের চেহারার ওপর মাথার কাপড় ছেড়ে দিতেন, চেহারা তা স্পর্শ করছে না বিচ্ছিন্ন আছে ভ্রুক্ষেপ করতেন না। ‘নারীর ইহরাম তার চেহারায়’ এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নেই। এটি কোনো পূর্বসূরির কথা”। সমাপ্ত।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম  রহ. ‘তাহযীবুস সুনান’: (২/৩৫০) গ্রন্থে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হরফও বর্ণিত নেই, যা প্রমাণ করে ইহরামের সময় নারীর চেহারা খুলে রাখা ফরয, শুধু চেহারায় নিকাব ব্যবহার করার নিষেধাজ্ঞা ব্যতীত... অতঃপর তিনি বলেন: আসমা থেকে বর্ণিত, ইহরাম অবস্থায় তিনি স্বীয় চেহারা ঢেকে রাখতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:

»كان الركبان يمرون بنا ونحن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم محرمات، فإذا حاذوا بنا سدلت إحدانا جلبابها من رأسها على وجهها؛ فإذا جاوزنا كشفناه«

“আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম আরোহীরা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত, যখন তারা আমাদের বরবার হত আমাদের প্রত্যেকে তার আঁচল মাথার ওপর থেকে চেহারার ওপর ঝুলিয়ে দিত, যখন তারা আমাদের অতিক্রম করে যেত আমরা তা চেহারা থেকে সরিয়ে ফেলতাম”।[2] সমাপ্ত।

হে মুহরিম মুসলিম নারী, তুমি জেনে রাখ যে, এমন কাপড় দিয়ে চেহারা ঢাকা নিষেধ, যা একমাত্র শরীর ঢাকার জন্য সেলাই করে তৈরি করা, যেমন নিকাব ও হাতমোজা। এ ছাড়া তোমার চেহারা ও হাত উড়না, কাপড় ও এ জাতীয় বস্তু দ্বারা পর-পুরুষ থেকে ঢেকে রাখা ওয়াজিব। কাপড় যেন চেহারা স্পর্শ না করে এ জন্য মুখের ওপর (খাঁচা জাতীয়) কোনো বস্তু রাখার ভিত্তি নেই, না লাকড়ি, না পাগড়ি, না কোনো বস্তু।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৪১; তিরমিযী, হাদীস নং ৮৩৩; নাসাঈ, হাদীস নং ২৬৮১; আহমদ (২/১১৯)
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮৩৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৩৫; আহমদ (৬/৩০)