মাতম হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ওপর অস্থিরতা প্রকাশ করে উচ্চস্বরে বিলাপ করা, কাপড় ছিঁড়ে ফেলা, গাল থাপড়ানো, চুল উঠিয়ে ফেলা, চেহারা কালো করা ও খামচানো, ধ্বংসকে আহ্বান করা ইত্যাদি, যা আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাকদীরের ওপর অসন্তুষ্টি ও অধৈর্যতা প্রমাণ করে। এসব আচরণ হারাম ও কবিরা গুনাহ। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»ليس منا من لطم الخدود، وشق الجيوب، ودعا بدعوى الجاهلية«

“যে গালে আঘাত করে, কাপড় ছিঁড়ে ফেলে ও জাহেলী পরিভাষায় চিল্লাফাল্লা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”।[1] সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আরো রয়েছে:

»أنه صلى الله عليه وسلم بريء من الصالقة والحالقة والشاقة«

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালিকাহ, হালিকাহ ও শাক্কাহ থেকে বিমুক্ত”।

সালিকাহ: সে নারী, যে মুসীবতের সময় উচ্চস্বরে আওয়াজ করে। হালিকাহ: সে নারী, যে মুসীবতের সময় চুল ছিঁড়ে ফেলে। শাক্কাহ: সে নারী, যে মুসীবতের সময় কাপড় ছিড়ে ফেলে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত,

»أنه صلى الله عليه وسلم لعن النائحة والمستمعة«

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতমকারী ও মাতম শ্রবণকারীকে লা‘নত করেছেন”।[2] অর্থাৎ যে স্বেচ্ছায় মাতম শুনে ও তা পছন্দ করে।

হে মুসলিম বোন, মুসীবতের সময় এসব হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি, তুমি ধৈর্য ধারণ কর ও সাওয়াবের আশা রাখ, যেন মুসীবত তোমার পাপের কাফফারা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَيۡهِمۡ صَلَوَٰتٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَرَحۡمَةٞۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُهۡتَدُونَ ١٥٧﴾ [البقرة: ١٥٥،  ١٥٧]

“আর আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াত প্রাপ্ত”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭]

হ্যাঁ, তোমার জন্য কাঁদা বৈধ যদি মাতম, হারাম কর্ম এবং আল্লাহর ফয়সালা ও কুদরতের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ না হয়। কারণ, ক্রন্দন মৃত ব্যক্তির প্রতি রহমত ও অন্তরে নম্রতার আলামত। দ্বিতীয়ত এটাকে প্রতিহত করাও সম্ভব নয়, তাই ক্রন্দন করা বৈধ, বরং মুস্তাহাব। আল্লাহই সাহায্যকারী।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩; তিরমিযী, হাদীস নং ৯৯৯; নাসাঈ, হাদীস নং ১৮৬০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৫৮৪; আহমদ (১/৪৬৫)
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১২৮; আহমদ: (৩/৬৫)