‘‘ঐ দেখ, আমার গোলাম (my servant), আমি তাঁকে ধারণ করি (whom I uphold); তিনি আমার মনোনীত (KJV: elect; RSV: chosen), আমার প্রাণ তাঁতে প্রীত, আমি তাঁর উপরে নিজের রূহ্ (my spirit) স্থাপন করলাম; তিনি জাতিদের (Gentiles পরজাতিদের/ অ-ইহুদিদের) কাছে ন্যায়বিচার উপস্থিত করবেন। তিনি চিৎকার করবেন না, উচ্চশব্দ করবেন না, পথে তাঁর স্বর শোনাবেন না। তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গবেন না; ধোঁয়াযুক্ত সলতে নিভিয়ে ফেলবেন না; সত্যে তিনি ন্যায়বিচার প্রচলিত করবেন। তিনি নিসেত্মজ হবেন না, নিরুৎসাহ হবেন না, যে পর্যন্ত না দুনিয়াতে ন্যায়বিচার স্থাপন করেন; আর উপকূলগুলো তাঁর ব্যবস্থার (law শরীয়তের) অপেক্ষায় থাকবে।’’ (মো.-১৩)

‘‘মাবুদ বলছেন, দেখ, আমার গোলাম, যাকে আমি সাহায্য করি; আমার বাছাই করা বান্দা, যার উপর আমি সন্তুষ্ট। আমি তাঁর উপরে আমার রূহ দেব আর তিনি জাতিদের (পরজাতিদের/ অ-ইহুদিদের) কাছে ন্যায় বিচার নিয়ে আসবেন। তিনি চিৎকার করবেন না বা জোরে কথা বলবেন না; তিনি রাস্তায় রাস্তায় তাঁর গলার স্বর শোনাবেন না। তিনি থেঁৎলে যাওয়া নল ভাঙ্গবেন না আর মিটমিট করে জ্বলতে থাকা সলতে নিভাবেন না। তিনি সততার সাথে ন্যায়বিচার করবেন। দুনিয়াতে ন্যায়বিচার স্থাপন না করা পর্যন্ত তিনি দুর্বল হবেন না বা ভেঙ্গে পড়বেন না। দূরের লোকের তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে।’’ (মো.-০৬)

মুসলিম পন্ডিতরা যিশাইয় পুস্তকের এ বক্তব্যটাকে মুহাম্মাদ (ﷺ) বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী বলে গণ্য করেছেন। মমতাপূর্ণ আচরণ, চিৎকার না করা, জোরে কথা না বলা, সততার সাথে ন্যায়বিচার করা, দুনিয়াতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত দুর্বল না হওয়া, বিশেষত অ-ইহুদিদ, পরজাতি বা উম্মীদের মধ্যে ন্যায় বিচার নিয়ে আসার বিষয়টা মুহাম্মাদ (ﷺ) ছাড়া আর কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

এ প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়া লেখেছে:

“Isaiah 42 is among the earliest and the most common prophecies referred to by Muslims. Since the time of Muhammad, Muslims believed that it was fulfilled by no one other than him. The Hebrew word which was translated to ‘whom I uphold’ is "אתמך"(Atmc). This word never appears anywhere in the entire Bible except here. Muslim authors, pointing to the similarity between the writing of "אתמך"(Atmc) and the writing of "אחמד" which is the name Ahmad, suggested that an intended distortion might had been done by the scribes of Scripture in the first verse of this chapter in order to hide the name of the Chosen Servant of God which is "אחמד"(Ahmad). Muhammad is believed by Muslims to be the Chosen Servant of God and his Light, while Christians believe that Jesus was God, begotten of God, not the servant of God. Thus, some Muslim writers argue Christians have no right to call Isaiah 42 a prophecy of Jesus. Qur'an 3:159, Qur'an 9:128 and Qur'an 68:4 shed a light on the gentle character of Muhammad, and from the time they knew him, Muslims looked at Muhammad as the mercy sent by God to all the creation.”

‘‘মুসলিমদের মধ্যে প্রাচীন যুগ থেকে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মুহাম্মাদ (ﷺ) বিষয়ক বাইবেলীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর একটা যিশাইয় ৪২। মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর যুগ থেকেই মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, এ ভবিষ্যদ্বাণীটা মুহাম্মাদ (ﷺ) দ্বারা পূর্ণ হয়েছে, অন্য কারো দ্বারাই নয়। প্রথম শ্লোক বলছে: ‘‘দেখ, আমার গোলাম, যাকে আমি সাহায্য করি/ আমি তাঁকে ধারণ করি; আমার বাছাই করা বান্দা...।’’ ‘‘আমি তাঁকে ধারণ করি’’ কথাটির হিব্রু (אתמך: Atmc)। পুরো বাইবেলের মধ্যে এই একটা স্থান ছাড়া আর কোথাও এ শব্দটা নেই। মুসলিম লেখকরা বলেন, হিব্রু লেখনিতে এ শব্দের মতই লেখা হয় আরেকটা শব্দ: (אחמד), যা হচ্ছে ‘আহমদ’ নাম। এ থেকে তারা দাবি করেন যে, সম্ভবত বাইবেলের লিপিকাররা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকের লেখনিতে সামান্য পরিবর্তন করেছেন। ‘আল্লাহর মনোনীত বাছাইকৃত বান্দা’-র নাম যে ‘আহমদ’ তা গোপন করার উদ্দেশ্যে তারা তা করেছেন।

মুসলিম বিশ্বাসে মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর মনোনীত বান্দা বা গোলাম এবং তাঁর আলো। পক্ষান্তরে খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন যে, যীশু ঈশ্বর এবং ঈশ্বরের জন্ম দেওয়া বা জাত পুত্র। তিনি ঈশ্বরের বান্দা বা গোলাম নন। এজন্য কোনো কোনো মুসলিম লেখক যুক্তি প্রদান করেন যে, যিশাইয় ৪২ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণীকে যীশু বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী বলে দাবি করার কোনো অধিকার খ্রিষ্টানদের নেই। কুরআন ৩: ১৫৯, কুরআন ৯: ১২৮ এবং কুরআন ৬৪: ৪ আলোকপাত করে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) বিনম্র ব্যবহার ও আচরণের অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর সাথে পরিচয়ের শুরু থেকেই মুসলিমরা তাকে সকল সৃষ্টির জন্য করুণা ও মমতা হিসেবে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত বলেই বিশ্বাস করতেন।’’