ইহুদি-খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা দাবি করেন যে, বিশ্বের বুকে সংঘঠিত অনেক ঘটনার বিষয়েই ভবিষ্যদ্বাণী বাইবেলের মধ্যে লিখিত আছে। কিন্তু মুহাম্মাদ (ﷺ) বিষয়ক কোনো ভবিষ্যদ্বাণী এতে নেই। এর বিপরীতে মুসলিম গবেষকরা, বিশেষত ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণকারী পণ্ডিতরা দাবি করেন যে, বাইবেলের মধ্যে মানবীয় বিকৃতির সাথে বেশ কিছু ঐশ্বরিক বাণীও সংমিশ্রিত রয়েছে। আর এগুলোর মধ্যে মুহাম্মাদ (ﷺ) বিষয়ক কিছু ভবিষ্যদ্বাণীও বিদ্যমান। তারা বাইবেলের যে সকল বক্তব্যকে তাদের মতের পক্ষে পেশ করেন ইহুদি-খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা সেগুলোকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন।

বিষয়টা যীশু বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে ইহুদি-খ্রিষ্টান বিরোধের মতই। খ্রিষ্টানরা দাবি করেন যে, পুরাতন নিয়মের মধ্যে যীশু বিষয়ক অনেক ভবিষ্যদ্বাণী বিদ্যমান। ইহুদি পণ্ডিতরা বিষয়টা পুরোপুরিই অস্বীকার করেন। ইঞ্জিল লেখক বা খ্রিষ্টান প্রচারকদের দাবি-দাওয়াকে তারা বাইবেলের অপব্যাখ্যা বা বিকৃতি বলে দাবি করেন। ইহুদিরা বলেন, খ্রিষ্টান প্রচারকরা বাইবেলের কিছু বক্তব্য পূর্বাপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং কখনো অর্থ পরিবর্তন করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে যীশু বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী বলে দাবি করেন। এ বিষয়ক কিছু নমুনা আমরা দেখেছি। ইহুদি পণ্ডিত রাবিব স্টুয়ার্ট ফেডেরো (Rabbi Stuart Federow) পরিচালিত what jews believe নামক ওয়েবসাইটের ‘খ্রিষ্টীয় প্রমাণাদি এবং ইহুদীয় প্রত্যুত্তর (Christian Prooftexts and the Jewish Response) প্রবন্ধ থেকে (http://www. whatjewsbelieve.org/prooftext.html) পাঠক এ বিষয়ে আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন।

অনুধাবনের জন্য একটা ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করা যায়। আমরা দেখেছি, যিশাইয় ৭/১৪ নিম্নরূপ: ‘‘অতএব প্রভু নিজে তোমাদেরকে একটি চিহ্ন দেবেন; দেখ, এক জন কুমারী কন্যা গর্ভবতী হয়ে পুত্র প্রসব করবে ও তাঁর নাম ইম্মানূয়েল রাখবে’’ (মো.-১৩)। এ বক্তব্যটাকে যীশু বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী বলে দাবি করে মথি লেখেছেন: ‘‘এ সব ঘটলো, যেন নবীর মধ্য দিয়ে প্রভুর এই যে কালাম নাজেল হয়েছিল, তা পূর্ণ হয়, ‘দেখ সেই কন্যা গর্ভবতী হবে এবং পুত্র প্রসব করবে, আর তার নাম ইম্মানূয়েল রাখা হবে।’’ (মথি ১/২২-২৩, মো.-১৩)

পঞ্চম অধ্যায়ে আমরা যিশাইয়ের বক্তব্যের অর্থ পরিবর্তন বিষয়টা দেখেছি। আমরা আরো দেখেছি যে, যিশাইয় পুস্তকে এ ভবিষ্যদ্বাণীটা মসীহ প্রসঙ্গে বলা হয়নি, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ঘটনার আলামত হিসেবে বলা হয়েছে। সর্বোপরি যীশুর নাম কেউ কখনো ‘ইম্মানুয়েল’ রাখেননি। ইম্মানুয়েল শব্দটার অর্থ ‘আমাদের সাথে ঈশ্বর’। আমরা জানি যে, যীশু নিজে কখনো নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেননি, তবে খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাসে যীশু ঈশ্বর। এ অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে খ্রিষ্টানরা এ ভবিষ্যদ্বাণীকে যীশুর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী বলে দাবি করেছেন।

উইকিপিডিয়ায় ‘Muhammad in the Bible’ প্রবন্ধের আলোকে  বাইবেলের এ বিষয়ক কিছু বক্তব্য নিম্নে উদ্ধৃত করছি (https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_in_the_Bible)।