৮. ১. ১৭. নারী বৈষম্য বা নারী নির্যাতন / ৮. ১. ১৭. ১. সন্দেহের কারণে স্ত্রীকে নির্যাতন

৮. ১. ১৭. নারী বৈষম্য বা নারী নির্যাতন

বাইবেল বিভিন্ন বিধান বাহ্যত নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক বলে প্রতীয়মান। আমরা ইতোপূর্বে কয়েকটা নমুনা দেখেছি। এখানে আরো কিছু নমুনা উল্লেখ করছি:

৮. ১. ১৭. ১. সন্দেহের কারণে স্ত্রীকে নির্যাতন

দাম্পত্য জীবনে স্বামীর অবিশ্বস্ততা বা ব্যভিচার নিশ্চিত জানলেও স্ত্রীর কিছু করণীয় নেই। কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীর বিষয়ে সন্দেহ করেন তবে সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য স্ত্রীকে জনগণ ও পুরোহিতদের সামনে ‘পানিপড়া’ খাওয়ানোর যে বিধান বাইবেল দিয়েছে তা অসহায় স্ত্রীর প্রতি অমানবিক আচরণ বলেই প্রতীয়মান হয়:

‘‘কিন্তু তবুও যদি স্ত্রীর উপর সন্দেহে স্বামীর মন বিষিয়ে ওঠে তবে সে তাকে ইমামের কাছে নিয়ে যাবে; স্ত্রী যদি অসতী নাও হয় তবুও সন্দেহ হলে স্বামীর তাকে ইমামের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ... ইমাম সেই স্ত্রীলোকটাকে মাবুদের সামনে দাঁড় করাবে। তারপর সে একটা মাটির পাত্রে কিছু পবিত্র পানি নেবে এবং আবাস তাম্বুর  মেঝে থেকে কিছু ধুলা তুলে নিয়ে সেই পানির মাঝে দেবে। স্ত্রীলোকটাকে মাবুদের সামনে দাঁড় করাবার পর ইমাম তার  চুল খুলে দেবে এবং অন্যায় তুলে ধরবার জন্য কোরবানীর জিনিস, অর্থাৎ সন্দেহের দরুন শস্য-কোরবানীর জিনিস তার হাতে দেবে। ইমাম তার নিজের হাতে রাখবে বদদোয়া নিয়ে আসা তেতো পানি। তারপর ইমাম স্ত্রীলোকটাকে কসম খাইয়ে নিয়ে তাকে বলবে, ‘বিয়ের পর যদি কোন লোক তোমার সংগে জেনা না করে থাকে এবং তুমি যদি কুপথে গিয়ে অসতী না হয়ে থাক তবে বদদোয়া আনা এই তেতো পানি যেন তোমার ক্ষতি না করে।  কিন্তু বিয়ের পর কুপথে গিয়ে কারও সংগে জেনা করে যদি তুমি অসতী হয়ে থাক’- এই পর্যন্ত বলে ইমাম সেই স্ত্রীলোকটাকে দিয়ে তার নিজের উপর বদদোয়া ডেকে আনবার একটা কসম খাইয়ে নিয়ে আবার বলবে, ‘তবে মাবুদ এমন করুন যাতে স্ত্রী-অংগ অকেজো হয়ে তোমার পেট ফুলে ওঠে, যার ফলে তোমার লোকেরাই বদদোয়া ও কসমের সময়ে তোমার নাম ব্যবহার করবে। এই বদদোয়ার পানি তোমার শরীরে ঢুকে যেন এমন ভাবে কাজ করে যাতে তোমার পেট ফুলে ওঠে ও তোমার স্ত্রী-অংগ অকেজো হয়ে যায়।’ এর জবাবে স্ত্রীলোকটাকে বলতে হবে, তা-ই হোক।’ ইমাম এই পর্যন্ত বদদোয়া চামড়ার উপর লিখে পানি ঢেলে লেখাটা সেই তেতো পানিতে ফেলবে। বদদোয়ার সেই তেতো পানি সেই স্ত্রীলোকটিকে খাওয়ালে পর সেই পানি তার পেটে গিয়ে তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেবে। ... তারপর সে সেই পানি স্ত্রীলোকটিকে খেতে দেবে। স্ত্রীলোকটি যদি অসতী হয়ে স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে থাকে তবে বদদোয়ার এই পানি তাকে খাওয়াবার পর তা তার পেটে গিয়ে তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেবে। তার পেট ফুলে উঠবে এবং স্ত্রী-অংগ অকেজো হয়ে যাবে আর তার লোকেরা তার নাম বদদোয়া হিসাবে ব্যবহার করবে। কিন্তু স্ত্রীলোকটি যদি অসতী না হয়ে নির্দোষ থাকে তবে তাকে যে দোষ দেওয়া হয়েছিল তা থেকে সে খালাস পাবে এবং সন্তানের মা হবার ক্ষমতা তার থেকেই যাবে....।’’ (গণনা/শুমারী ৫/১১-৩১, কি. মো.-০৬)

সম্মানিত পাঠক, ইসলামে এ জাতীয় কর্মকে কুফরী বলা হয়েছে, এরপরও আমাদের সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের মধ্যে চালপড়া, পানিপড়া ইত্যাদির কথা শোনা যায়। কিন্তু তাদের মধ্যেও ধুলা-বালি মিশ্রিত ময়লা পানি খাওয়ানোর প্রচলন আছে বলে জানা যায় না। সর্বোপরি, এ পদ্ধতিতে স্ত্রী নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরেও ভিত্তিহীন সন্দেহের জন্য স্বামীর শাস্তি বা তিরস্কারের কেনো ব্যবস্থা নেই।