৬. ২. ৭. ৫. মোশি ও বনি-ইসরাইলদের মিথ্যাচার

বাইবেলের বর্ণনায় বনি-ইসরাইলদের মিসর থেকে বের করে নেওয়ার জন্য মোশি ফেরাউনকে মিথ্যা বলেন। ঈশ্বর নিজেই মিথ্যা বলতে নির্দেশ দেন: ‘‘তখন তুমি ও ইসরাইলের প্রাচীন লোকেরা মিসরের বাদশাহ্র কাছে যাবে, তাকে বলবে ইবরানীদের মাবুদ আল্লাহ আমাদেরকে দেখা দিয়েছেন; অতএব আরজ করি, আমাদেরকে অনুমতি দিন যাতে আমরা মরুভুমির মধ্যে তিন দিনের পথ গিয়ে আমাদের আল্লাহ মাবুদের উদ্দেশে পশু করবানী করতে পারি। কিন্তু আমি জানি, পরাক্রান্ত হাত দেখালেও মিসরের বাদশাহ তোমাদের যেতে দেবে না।  ... এর পর আমি হাত বাড়িয়ে দেবো এবং দেশের মধ্যে যে সমস্ত অলৌকিক কাজ করবো তা দিয়ে মিসরকে আঘাত করবো। এর পরে সে তোমাদেরকে যেতে দেবে।’’ (যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ৩/১৮-২০, মো.-১৩)

বিষয়টা বিস্ময়কর। ঈশ্বর নিজেই বলছেন যে, মিথ্যা বলে কোনোই লাভ হবে না। তাহলে মিথ্যা বলার প্রয়োজন কী? মোশি বলতে পারতেন: ‘‘ইবরানীদের মাবুদ আমাদেরকে দেখা দিয়েছেন; কাজেই তাঁর সেবার জন্য আমাদেরকে ছেড়ে দিন, এ দেশ থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিন’’। মিথ্যা ও সত্য উভয়ের ফলাফল একই হত। মিসর রাজ তাদেরকে ছাড়ত না এবং ঈশ্বর হস্তবিস্তার করতেন।

উল্লেখ্য, ঈশ্বরের নির্দেশে মোশি ও বনি-ইসরাইলরা এ মিথ্যার চর্চা করেন এবং ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে তা কোনো কাজে লাগে না। (যাত্রাপুস্তক ৫ অধ্যায়)

অন্যত্র ইশ্বরের প্রেরণায় মোশি প্রত্যেক ইসরাইলীয় পুরুষ ও নারীকে নির্দেশ দেন, তার মিসরীয় প্রতিবেশী পুরুষ ও নারীর নিকট থেকে সোনা ও রুপার অলঙ্কার হাতিয়ে নিতে। ঈশ্বর বলেন: ‘‘তাহাতে তোমরা খালি হাতে যাইবে না; কিন্তু প্রত্যেক স্ত্রী আপন আপন প্রতিবাসিনীর কিম্বা গৃহে প্রবাসিনী স্ত্রীর কাছে রৌপ্যালঙ্কার, স্বর্ণালঙ্কার ও বস্ত্র চাহিবে; এবং তোমরা তাহা আপন আপন পুত্রদের ও কন্যাদের গাত্রে পরাইবে; এইরূপে তোমরা মিস্রীয়দের দ্রব্য হরণ (লুণ্ঠন: spoil) করিবে।’’

কি. মো.-২০০৬: ‘‘বনি-ইসরাইলদের প্রতি মিসরীয়দের মনে আমি এমন একটা দয়ার মনোভাব সষ্টি করব যাতে মিসর থেকে তোমাদের খালি হাতে যেতে না হয়। প্রতেক ইবরানী স্ত্রীলোক তার প্রতিবেশী এবং তার ঘরে আসে এমন সব মিসরীয় স্ত্রীলোকদের কাছ থেকে সোনা ও রূপার জিনিস আর কাপড় চোপড় চেয়ে নেবে..।’’ (যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ৩/২১-২২। পুনশ্চ: ১১/২-৩; ১২/৩৫)।

বাইবেল এখানে কী নৈতিকতা শেখাল? মিসরীয়দের জুলুম থেকে বনি-ইসরাইলদের মুক্তি দান খুবই ভাল কাজ। কিন্তু সেজন্য কি প্রতারণা ও লুণ্ঠন বৈধ হয়ে গেল? ঈশ্বর লুণ্ঠনের সময় মিসরীয়দের মনে বনি-ইসরাইলের প্রতি দয়ার ভাব জাগিয়ে দিয়ে লুণ্ঠনে সাহায্য করলেন। অথচ এরূপ দয়ার ভাব শুরুতেই জাগিয়ে দিলে আর মিসরের সকল প্রথমজাত মানুষ ও প্রাণীকে হত্যা করা ও অন্যান্য নির্বিচার হত্যাকাণ্ড-র প্রয়োজন হত না!