সকল ধর্মেই ব্যভিচার নিষিদ্ধ। বাইবেলেও ব্যভিচার নিষিদ্ধ এবং এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড (লেবীয়: ২০/১০-১৭)। পরনারীর প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাতকেও ব্যভিচার বলে গণ্য করা হয়েছে এবং এজন্য নিজের চক্ষু তুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; নইলে পুরো দেহ নরকের পুড়বে। (মথি ৫/২৮-২৯) এর বিপরীতে নবীদের নামে ব্যভিচারের কাহিনী লেখা হয়েছে। একটা কাহিনী লোটের সাথে তাঁর কন্যাদ্বয়ের ব্যভিচার।

অবরাহাম বা ইবরাহীম (আ.)-এর ভাতিজা লোট বা লূত (আ.) কুরআন ও বাইবেল বর্ণিত একজন প্রসিদ্ধ নবী বা ভাববাদী। তিনি তাঁর জাতির অশ্লীলতার বিরুদ্ধে প্রচার করতেন। কিন্তু মহাপাপাচারীও যে অশ্লীলতাকে ঘৃণা করে অশ্লীলতা বিরোধী এ নবীর নামে বাইবেল সে অশ্লীলতার কাহিনী লেখেছে।

‘‘পরে লূত ও তাঁর দু’টি কন্যা সোয়র থেকে পর্বতে উঠে গিয়ে সেখানে থাকলেন; কেননা তিনি সোয়রে বাস করতে ভয় পেলেন, আর তিনি ও তাঁর সেই দুই কন্যা গুহার মধ্যে বাস করতে লাগলেন। পরে তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা কনিষ্ঠা কন্যাকে বললো, আমাদের পিতা বৃদ্ধ এবং জগৎ-সংসারের ব্যবহার অনুসারে আমাদেরকে বিয়ে করতে এই দেশে কোন পুরুষ নেই; এসো, আমরা পিতাকে আঙ্গুর-রস পান করিয়ে তাঁর সঙ্গে শয়ন করি, এভাবে পিতার বংশ রক্ষা করবো। তাতে তারা সেই রাতে তাদের পিতাকে আঙ্গুর-রস পান করালো, পরে তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা পিতার সঙ্গে শয়ন করতে গেল; কিন্তু তার শয়ন ও উঠে যাওয়া লূত টের পেলেন না। আর পরদিন জ্যেষ্ঠা কন্যা কনিষ্ঠা কন্যাকে বললো, দেখ, গত রাতে আমি পিতার সঙ্গে শয়ন করেছিলাম; এস, আমরা আজ রাতেও পিতাকে আঙ্গুর-রস পান করাই; পরে তুমি গিয়ে তাঁর সঙ্গে শয়ন কর, এভাবে পিতার বংশ রক্ষা করবো। একই ভাবে তারা সেই রাতেও পিতাকে আঙ্গুর-রস পান করাল; পরে কনিষ্ঠা কন্যা তাঁর সঙ্গে শয়ন করলো; কিন্তু তার শয়ন ও উঠে যাওয়া লূত টের পেলেন না। এভাবে লূতের দুই কন্যাই নিজেদের পিতার দ্বারা গর্ভবতী হল। পরে জ্যেষ্ঠা কন্যা পুত্র প্রসব করে তার নাম মোয়াব রাখল; সে এখনকার মোয়াবীয়দের আদিপিতা। আর কনিষ্ঠা কন্যাও পুত্র প্রসব করে তার নাম বিন্-অম্মি রাখল, সে এখনকার অম্মোনীয়দের আদিপিতা।’’ (পয়দায়েশ ১৯/৩০-৩৮, মো.-১৩)

সম্মানিত পাঠক, যে কোনো অতি সাধারণ অধার্মিক পরিবারের ক্ষেত্রে বিষয়টা কল্পনা করুন। এরূপ পরিস্থিতিতে মেয়েরা পিতার সেবা ও স্বাভাবিক জীবন কাটিয়ে দেবেন? না যে কোনো মূল্যে পিতার বংশরক্ষার নামে পিতার সাথে ব্যভিচার করতে অতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন? এরূপ পরিস্থিতিতে শতকরা কতজন কন্যা পিতার সাথে যৌন মিলনের কথা মনে আনতে পারবেন? সে জন্য দু’ বোন সলাপরামর্শ করবেন? দুজনে দুজনের সামনে পিতার সাথে এরূপ কর্ম করবেন? পিতার বংশ রক্ষার জন্য দু বোনকেই পিতা কর্তৃক গর্ভবর্তী হওয়া জরুরি ছিল?

লক্ষণীয় যে, পিতার সাথে ব্যভিচারজাত মোয়াব ও বিন-অম্মিকে ঈশ্বর মেরে ফেলেননি। কিন্তু উরিয়ের স্ত্রীর সাথে দাউদের ব্যভিচারের মাধ্যমে জাত পুত্রটাকে ঈশ্বর হত্যা করেছিলেন (২ শমূয়েল ১২/১-২৩)। এ প্রসঙ্গে একজন গবেষক লেখেছেন:

‘‘সম্ভবত খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস অনুসারে নিজ কন্যার সাথে ব্যভিচার করার চেয়ে পরস্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা অধিক অপরাধ! এজন্যই তাদের ঈশ্বর পরস্ত্রীর সাথে ব্যভিচারের ফসলকে হত্যা করলেন, অথচ নিজ কন্যার সাথে ব্যভিচারের ফসল মোয়াব ও বিন-অম্মিকে হত্যা করেননি। উপরন্তু এরা দুজন ঈশ্বরের নিকট গ্রহণযোগ্য বা ভাল ছিলেন।... কর্মটা এত জঘন্য ও নোংরা যে, সমাজের সবচেয়ে ঘৃণিত পাড় মাতালরাও কখনো এরূপ ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয় না। তারা অধিকাংশ সময় মাতাল হয়ে থাকলেও মাতাল অবস্থাতেই কন্যা ও অনাত্মীয়া মহিলাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। আর যখন কেউ এমন মাতাল হয় যে, কে কন্যা এবং কে অনাত্মীয়া তাও চিনতে পারে না, তখন তার আর যৌন সঙ্গমের ক্ষমতা থাকে না। মদপানে অত্যন্ত আসক্ত ব্যক্তিরা এ কথার সাক্ষ্য দিয়েছেন। হিন্দু ধর্ম অনুসারে অস্পৃশ্য নিম্নশ্রেণির কোনো ভারতীয় পাড় মাতাল মানুষও কখনো মাতাল অবস্থায় তার মায়ের বা মেয়ের সাথে এরূপ ঘৃণ্য আচরণ করেছে বলে আমরা অদ্যাবধি শুনি নি।... অবাক বিষয় যে, তিনি প্রথম রাতে এই ঘৃণ্য পাপে নিপতিত হলেন এবং দ্বিতীয় রাতেও একইভাবে পাপের মধ্যে পতিত হলেন!’’[1]

[1] কিরানবী, আল্লামা রাহমাতুল্লাহ, ইযহারুল হক (খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর অনূদিত) ২/৩৯৬, ৩৯৮।