পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৯. ৪৬. পৃথিবী চিরস্থায়ী না অস্থায়ী

পবিত্র বাইবেল এক স্থানে বলছে: ‘‘এক পুরুষ চলিয়া যায়, আর এক পুরুষ আইসে; কিন্তু পৃথিবী নিত্যস্থায়ী (চিরস্থায়ী/ চিরকাল স্থায়ী থাকে: KJV: the earth abideth for ever. RSV: the earth remains for ever)’’। কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘এক পুরুষ চলে যায়, আর এক পুরুষ আসে, কিন্তু দুনিয়া চিরকাল থাকে।’’ (উপদেশক/ হেদায়েতকারী ১/৪)

এ থেকে জানা যায় যে, ‘the earth’ অর্থাৎ পৃথিবী বা দুনিয়া চিরস্থায়ী। কিন্তু অন্যত্র বলা হয়েছে যে, পৃথিবী চিরস্থায়ী নয়; বরং তা এক সময় বিলীন ও ধ্বংস হয়ে যাবে: ‘‘কিন্তু প্রভুর দিন চোরের মত করে আসবে। সেই দিন আসমান হুহু শব্দ করে শেষ হয়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা সবই পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়া (the earth) এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তা সবই পুড়ে যাবে।’’ (২ পিতর ৩/১০, মো.-০৬)

এখানে বৈপরীত্য খুবই স্পষ্ট। পবিত্র পুস্তকের এক স্থানে পৃথিবীকে চিরস্থায়ী বলা হয়েছে এবং অন্যত্র তা চিরস্থায়ী নয় বলে বলা হয়েছে।

স্কট বিডস্ট্রাপ ‘বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির একটা সংক্ষিপ্ত সমীক্ষা’ (A Brief Survey of Biblical Errancy) প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, খ্রিষ্টান প্রচারকরা এ বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘উপদেশক পুস্তকের লেখক (শলোমন বা অন্য কেউ) তাঁর সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখেছেন যে, পৃথিবী চিরস্থায়ী। পিতর সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মূল সত্য হিসেবে বলেছেন যে, পৃথিবী একদিন শেষ হয়ে যাবে। প্রেক্ষাপটের ভিন্নতার কারণে একে বৈপরীত্য বলা যায় না।’ স্কট বলেন: ‘উপদেশক পুস্তকের লেখক শলোমন বা অন্য যে-ই হোন না কেন তিনি তাঁর যুগের প্রেক্ষাপটে পৃথিবীকে চিরস্থায়ী বলে মনে করবেন কেন? তিনি যদি ঈশ্বরের  প্রেরণায় এ কথা লেখে থাকেন তবে তো তাঁর বিষয়টা আরো ভালোভাবে জানার কথা। এ কথা তো মনে করা হয় যে, বাইবেল ঈশ্বরের প্রেরণায় লেখা। তাহলে ঈশ্বর তাঁর দুজন প্রেরণাপ্রাপ্ত লেখককে একই বিষয়ে একই তথ্য ও সমন্বিত কথা বলাতে পারলেন না কেন?’’[1]

[1] http://www.bidstrup.com/bible2.htm