পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৯. ৫. বিবাহ ঈশ্বরের অনুগ্রহের উৎস না অনুগ্রহে বাধা

বিবাহে উৎসাহ প্রদান করে হিতোপদেশ/ মেসাল ১৮/২২ লেখেছে: ‘‘যে স্ত্রী পায় সে উৎকৃষ্ট বস্ত্ত পায়, এবং মাবুদের কাছে রহমত পায়’’।

কিন্তু অন্যত্র বিবাহকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যীশু তাঁর জন্য স্ত্রী-সন্তানদেরকে পরিত্যাগ করতে ও ঘৃণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন: ‘‘আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, এমন কেউ নেই, যে আল্লাহর রাজ্যের জন্য নিজের বাড়ি বা স্ত্রী বা ভাই-বোন বা পিতা-মাতা বা সন্তান-সন্ততি ত্যাগ করলে, ইহকালে তার বহুগুণ এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন না পাবে।’’ (লূক ১৮/২৯-৩০, মো.-১৩। পুনশ্চ: মার্ক ১০/২৯-৩০)।

যীশু আরো বলেন: ‘‘যদি কেউ আমার কাছে আসে, আর আপন পিতা- মাতা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে, ভাই-বোন, এমন কি নিজ প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান (hate ঘৃণা) না করে তবে সে আমার সাহাবী (শিষ্য) হতে পারে না’’। (লূক ১৪/২৬, মো.-১৩)

যীশু ‘বিয়ে না করা’ এবং ‘বেহেশতী রাজ্যের জন্য’ অবিবাহিত থাকাকে উৎসাহ দিয়েছেন। মথি লেখেছেন: ‘‘তখন তাঁর সাহাবীরা তাঁকে বললেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধ যদি এই রকমেরই হয় তাহলে তো বিয়ে না করাই ভাল’। ঈসা তাঁদের বললেন, ‘সবাই এই কথা মেনে নিতে পারে না; কেবল যাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তারাই তা মেনে নিতে পারে। কেউ কেউ খোজা হয়ে জন্মগ্রহণ করে, সেজন্য তারা বিয়ে করে না। আর কাউকে কাউকে মানুষেই খোজা করে, সেজন্য তারা বিয়ে করে না। আবার এমন কেউ কেউ আছে যারা বেহেশতী রাজ্যের জন্য বিয়ে করবে না বলে মন স্থির করে। যে এই কথা মেনে নিতে পারে সে মেনে নিক।’’ (মথি ১৯/১০-১২, মো.-০৬)

নতুন নিয়ম বারবার নিশ্চিত করছে যে, অবিবাহিত ও অবিবাহিতা থাকাই মুক্তির নিশ্চিত পথ। একান্তই বাধ্য হলে বিবাহ করার অনুমোদন আছে, তবে না করাই ভাল। বিবাহিত নারী ও পুরুষকে স্বামী বা স্ত্রীর সন্তুষ্টির চিন্তা করতে হয়। এটা ঈশ্বরের সন্তুষ্টির চেষ্টার পথে বাধা। অবিবাহিত পুরুষ ও নারী এ বাধা থেকে মুক্ত হয়ে পরিপূর্ণভাবে ঈশ্বরের নিকট নিজেকে সমর্পণ করতে পারে। কাজেই অবিবাহিত থাকাই নাজাতের নিশ্চিত পথ। ঈমানদার খ্রিষ্টান তিন রকমের এক রকম হতে পারেন: বিবাহিত, বিধবা-বিপত্নীক, অবিবাহিত। তিনজনের জন্য বাইবেলের নির্দেশ তিন প্রকার: (ক) যে বিবাহিত সে স্ত্রী পরিত্যাগ না করুক, তবে সে এমনভাবে থাক, যেন সে অবিবাহিত। (খ) যার স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে সে আর বিবাহ না করুক। (গ) যে অবিবাহিত সে বিবাহ না করুক। (ঘ) বিবাহ শুধু পরকালের মুক্তিরই প্রতিবন্ধক নয়, উপরন্তু এ জীবনে কষ্টের মূল কারণ। এজন্য দুনিয়ার কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য ঈমানদার খ্রিষ্টানদের বিবাহ না করা উচিত। (১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়)

খৃস্টধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে যীশু খ্রিষ্ট চিরকুমার ছিলেন। তিনি চিরকুমার বা ‘খোজা’ থাকাকেই উৎসাহ দিয়েছেন। খ্রিষ্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পলও চিরকুমার ছিলেন। তিনিও চিরকুমার বা চিরকুমারী থাকাকেই উত্তম ও ঈশ্বরের সেবার জন্য অধিক উপযোগী বলে বারবার বলেছেন। চিরকুমার থাকতে পারাকে ঈশ্বরের বড় অনুগ্রহ বলে গণ্য করেছেন। ১ করিন্থীয় ৭ অধ্যায়ে তাঁর বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে: ‘‘(১) স্ত্রীলোককে স্পর্শ না করা পুরুষের ভাল; (২) কিন্তু জেনা নিবারণের জন্য প্রত্যেক পুরুষের নিজ নিজ স্ত্রী থাকুক এবং প্রত্যেক স্ত্রীর নিজ নিজ স্বামী থাকুক।... (৬) কিন্তু এটা আমার হুকুম নয়, কেবল অনুমতি দিয়েই এই কথা বলছি। আর আমার ইচ্ছা এই যে, সকল মানুষই আমার মত (চিরকুমার/চিরকুমারী) হয়। ... (৮) অবিবাহিত লোকদের ও বিধবাদের কাছে আমার কথা এই, তারা যদি আমার মত (চিরকুমার/চিরকুমারী) থাকতে পারে, তবে তাদের পক্ষে তা-ই ভাল।’’

অন্যত্র বলা হয়েছে যে, যীশুর সাথে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার মানুষ স্বর্গে থাকবেন, যারা সকলেই অবিবাহিত, অমৈথুন, রমণীদের সংসর্গে কলুষিত না হওয়া পুরুষ (not defiled with women)। এরা ছাড়া কেউ স্বর্গের গান গাইতে পারবে না। (প্রকাশিত বাক্য ১৪/১-৪) এ থেকে জানা যায় যে, বিবাহ ও রমণী সংসর্গে মানুষ কলুষিত, দূষিত বা নোংরা (defiled) হয় এবং বিবাহ স্বর্গলাভের পথে বাধা।