পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৬. ২১. যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তারিখ বর্ণনায় বৈপরীত্য

যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তারিখ বিষয়েও সাংঘর্ষিক তথ্য! প্রথম তিন ইঞ্জিলের বর্ণনায় নিস্তার পর্ব/ উদ্ধার ঈদ/ ঈদুল ফেসাহের কোরবানির পরদিন এপ্রিলের ১৫ তারিখে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। পক্ষান্তরে যোহনের বর্ণনায় নিস্তার পর্বের কোরবানির দিনে ১৪ এপ্রিল তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা লেখেছে: “In John Jesus is crucified on 14 Nisan, the same day that the Jewish Passover lamb is sacrificed; in the Synoptics Jesus is crucified on 15 Nisan.”: ‘‘যোহনের বর্ণনায় ১৪ই এপ্রিল যীশু ক্রশবিদ্ধ হন; যে দিন ইহুদিদের নিস্তার পর্বের মেষ উৎসর্গ করা হয়। আর প্রথম তিন ইঞ্জিলের বর্ণনায় যীশু ক্রশবিদ্ধ হন ১৫ এপ্রিল।’’[1]

আমরা দেখেছি যে, যোহনের ইঞ্জিলে প্রথম থেকেই যীশুকে দেবত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইহুদি ধর্মরীতি অনুসারে নিস্তার পর্বের কোরবানির দিনে মেষ কোরবানি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এতে পাপ ক্ষয় হয় বলে ধারণা করা হয়। যোহনের লেখক শুরু থেকেই যীশুকে ‘ঈশ্বরের মেষ শিশু’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন ( যোহন ১/২৯; ১/৩৬) এবং সর্বশেষ নিস্তার পর্বের কোরবানির দিনে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। নিস্তার পর্বের দিনে যীশুর কোরবানির মাধ্যমে মানব জাতির পাপ ক্ষয়ের তত্ত্ব তিনি এভাবেই সাজিয়েছেন। বাইবেল বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, যোহনের ইঞ্জিলের লেখক মূলত ইতিহাস লেখেননি। তিনি যীশুর নাম ব্যবহার করে বিশেষ একটা ধর্মতত্ত্ব প্রমাণ করার জন্য বইটা লেখেছেন। নিজের তত্ত্ব প্রমাণ করতে যোহনের লেখক এখানে ইতিহাস পরিবর্তন করেছেন।[2]

[1] “biblical literature/form and content of John”; Encyclopædia Britannica. Encyclopædia Britannica 2009 Ultimate Reference Suite. Chicago: Encyclopædia Britannica, 2009.
[2] Sanders, E. P, The Historical Figure of Jesus (1995) Penguin Books, England, p 72; Louay Fatoohi, The Mystery of the Historical Jesus, p 551.