পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৬. ১১. পীলাতের নিকট অভিযোগ ও যীশুর বক্তব্যে বৈপরীত্য

মথির ২৭ অধ্যায়, মার্কের ১৫ অধ্যায়, লূক ২৩ ও যোহন ১৮-১৯ অধ্যায়ে পীলাতের দরবারে যীশুর বিচারের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। পাঠক মনোযোগ সহকারে এ অধ্যায়গুলো পড়লে ঘটনার বর্ণনায় অনেক ভিন্নতা ও বৈপরীত্য দেখবেন। মথি, মার্ক ও লূকের বর্ণনায় যীশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি নিজেকে ‘যিহূদীদের রাজা’ বলে দাবি করতেন। মূলত এজন্যই তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়। আর যোহনের বর্ণনায় ‘যিহূদীদের রাজা’ বলার অভিযোগ যীশু খণ্ডন করার পর তাঁর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ পেশ করা হয় যে, তিনি নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবি করেন।

মথি লেখেছেন: ‘‘শাসনকর্তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি যিহূদীদের রাজা’? যীশু উত্তর দিলেন, ‘আপনি ঠিকই বলছেন (Thou sayest তুমিই বলিলে)।’’ (মথি ২৭/১১)। মার্ক (১৫/২) ও লূক (২৩/৩) প্রায় একই কথা লেখেছেন। মথি নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি আর কোনো কথাই বলেননি: ‘‘তিনি তাঁকে এক কথারও জবাব দিলেন না; এতে শাসনকর্তা অতিশয় আশ্চর্য জ্ঞান করলেন।’’ (মথি ২৭/১৪)

এ তিনজনের বর্ণনা নিশ্চিত করে যে, যীশু পীলাতের প্রশ্নের কোনো বিস্তারিত উত্তর না দিয়ে শুধু বলেন ‘তুমিই বললে’। পক্ষান্তরে যোহন লেখেছেন যে, যীশু পীলাতকে বিস্তারিত উত্তর প্রদান করে জানান যে, রাজত্ব বলতে তিনি দুনিয়ার রাজত্ব বুঝাননি; কাজেই রাষ্ট্রীয় অশান্তির বিষয়ে পীলাতের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

যোহন লেখেছেন: ‘‘তখন পীলাত আবার রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করলেন এবং ঈসাকে ডেকে তাঁকে বললেন, তুমিই কি ইহুদীদের বাদশাহ? ... জবাবে ঈসা বললেন, আমার রাজ্য এই দুনিয়ার নয়... তখন পীলাত তাঁকে বললেন, তবে তুমি কি বাদশাহ? জবাবে ঈসা বললেন, তুমিই বলছো যে, আমি বাদশাহ। আমি এজন্যই জন্মগ্রহণ করেছি ও এজন্য দুনিয়াতে এসেছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। ... পীলাত তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা নিজেরা একে নিয়ে ক্রুশে দাও, কেননা আমি এর কোন দোষ পাচ্ছি না। ইহুদীরা তাঁকে জবাবে বললো, আমাদের একটা ব্যবস্থা আছে, সেই ব্যবস্থা অনুসারে তার প্রাণদ- হওয়া উচিত, কারণ সে নিজেকে ইবনুল্লাহ বলে দাবী করেছে। (পবিত্র বাইবেল: সে নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলেছে।)’’  (যোহন ১৮/৩৩-৩৭; ১৯/৬-৭)

আমরা দেখেছি, নিজেকে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ বলা ইহুদি ধর্মে কোনোই অপরাধই ছিল না। নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড-র কোনো বিধানও তৌরাতে নেই। তবে সর্বাবস্থায়, এখানে মথির ঠিক বিপরীত তথ্য দিলেন যোহন। মথি বললেন, তিনি এক কথারও উত্তর দেননি, আর যোহন বললেন: তিনি সব কথার উত্তর দিয়েছিলেন।