পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৬. ৫. ঈষ্করিয়োতীয় এহুদার মৃত্যুর বর্ণনায় বৈপরীত্য

যীশুর গ্রেফতার, ক্রুশারোহণ ও মৃত্যুর মূল খলনায়ক ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা বা এহুদা। তার মৃত্যু কিভাবে হল? যীশুর বিচারের আগে না পরে? নতুন নিয়ম এ বিষয়ে সাংঘর্ষিক তথ্য প্রদান করেছে। মথির লেখক ২৭ অধ্যায়ে যিহূদার/ এহুদার মৃত্যুর কাহিনী উদ্ধৃত করেছেন। আর প্রেরিত পুস্তকের লেখক পিতরের জবানীতে তা উদ্ধৃত করেছেন। উভয় বর্ণনার মধ্যে দু’ দিক থেকে বৈপরীত্য দেখা যায়:

প্রথমত: মথি লেখেছেন যে, এহুদা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল: ‘‘তখন সে ঐ মুদ্রাগুলো বায়তুল মোকাদ্দসের (মন্দিরের: the temple) মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেল এবং গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেল।’’ (মথি ২৭/৫) কিন্তু পিতর বলছেন যে, সে মাটিতে পড়ে পেট ফেটে মরে যায়: ‘‘এবং সেই ভূমিতে অধোমুখে পড়ে তার পেট ফেটে গেল এবং নাড়িভুঁড়িগুলো বের হয়ে পড়লো।’’ (প্রেরিত ১/১৮, মো.-১৩)

দ্বিতীয়ত: মথির বিবরণ থেকে জানা যায় যে, যীশুকে ধরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে যে ত্রিশটা রৌপ্যমুদ্রা এহুদা পেয়েছিল, সে মুদ্রাগুলোকে পরদিন প্রভাতেই অনুশোচনা করে প্রধান যাজক (ইমাম) ও প্রাচীনবর্গের নিকটে ফেরৎ দেয়। তারা তা না নিলে সে মুদ্রাগুলো মন্দিরের মধ্যে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা করে। তখন প্রধান যাজকেরা বা ইমামেরা সে মুদ্রাগুলো নিয়ে সেগুলো দিয়ে বিদেশীদের কবর দেওয়ার জন্য ‘কুম্ভকারের ক্ষেত্র’ ক্রয় করেন, যে ক্ষেত্রকে ‘রক্তক্ষেত্র’ বলা হত। (মথি ২৭/১-৯) পিতরের জবানীতে প্রেরিত পুস্তকে বলা হয়েছে যে, যিহূদা নিজেই তার এ ‘অধর্মের বেতন’ দিয়ে একটা ক্ষেত্র ক্রয় করে (purchased a field কেরি: একখানা ক্ষেত্র লাভ করিল), যে ক্ষেত্রটা ‘রক্তক্ষেত্র’ নামে পরিচিত ছিল (প্রেরিত ১/১৮-১৯)।

পিতর বলেছেন: ‘‘যিরূশালেম নিবাসী সকল লোকে তাহা জানিতে পারিয়াছিল।’’ এ থেকে এবং নিম্নের বিষয়গুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মথির বক্তব্য ভুল:

  1. মথি লেখেছেন যে, এ সময়ে যীশুর বিচার হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁকে শাস্তি প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কথাটা ভুল। মথির বিবরণ মতই দেখা যায় যে, এ সময়ে প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনবর্গ তাঁকে বেঁধে নিয়ে দেশাধ্যক্ষ (Governor) পীলাতের নিকট সমর্পণ করে।
  2. মথি লেখেছেন যে, যিহূদা মন্দিরের মধ্যেই তার ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রা প্রধান যাজক ও প্রাচীনবর্গের নিকট ফেরৎ দেয়। এই কথাটাও ভুল। কারণ, এ সময় প্রধান যাজক ও প্রাচীনবর্গ গভর্নর পীলাতের নিকট যেয়ে যীশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছিলেন। তারা এ সময়ে মন্দিরের মধ্যে ছিলেন না।
  3. মথির ২৭ অধ্যায়টা ভালভাবে পড়লে স্পষ্ট হয় যে, এ অধ্যায়ের ১ম শ্লোক ও ১১ শ্লোকের মাঝখানে এ কাহিনীটাকে পরবর্তীকালে সংযোজন করা হয়েছে।