পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৫. যীশুর জীবন ও কর্মে ইঞ্জিলীয় বৈপরীত্য - ৩. ৫. ১. পিতার ঔরসে না পাক-রূহের শক্তিতে?

মথি (১/১৮) লেখেছেন: ‘‘তাঁর মা মরিয়ম ইউসুফের প্রতি বাগ্দত্তা হলে তাঁদের সহবাসের আগে জানা গেল, পাক-রূহের শক্তিতে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন।’’ (মো.-১৩) এর বিপরীতে প্রেরিত ২/৩০ বলছে: ‘‘তিনি (দাউদ) ভাববাদী ছিলেন, এবং জানিতেন, ঈশ্বর দিব্যপূর্বক তাঁহার কাছে এই শপথ করিয়াছেন যে, তাঁহার ঔরসজাত (of the fruit of his loins, according to the flesh দৈহিকভাবে তাঁহার কোমরের পশ্চাদভাগের ফল) একজনকে তাঁহার সিংহাসনে বসাইবেন (he would raise up Christ to sit on his throne: তাঁহার সিংহাসনে বসাইবার জন্য খ্রিষ্টকে উঠাইবেন)।’’

সমালোচকরা বলেন, কোনো ব্যক্তি একই সাথে কোনো পুরুষের ঔরসজাত এবং পবিত্র আত্মার জাত হতে পারেন না।[1] এছাড়া মথি ও লূক থেকে আমরা জানি যে, যীশু পিতার ঔরসজাত পুত্র ছিলেন না; তিনি মাতার গর্ভজাত পুত্র ছিলেন।

এছাড়া গালাতীয় ৪/৪-এ পল লেখেছেন: “KJV: Jesus was made of a woman made under the law” Catholic: “Jesus was born of a woman born under the law” অর্থাৎ যীশুকে সৃষ্টি করা হয়েছিল (ক্যাথলিক ভার্শন: যীশু জন্মগ্রহণ করেন) একজন নারীর থেকে, সৃষ্টিকরা হয়েছিল (জন্ম হয়েছিল) আইনসম্মতভাবে।’’ কেরির অনুবাদ: ‘‘তিনি স্ত্রীজাত, ব্যবস্থার অধীনে জাত হইলেন।’’ জুবিলী বাইবেল: ‘‘যিনি নারীগর্ভে জন্ম নিলেন, বিধানের অধীনে জন্ম নিলেন।’’

এখানেও পল নিশ্চিত করছেন যে, যীশু ব্যবস্থা বা মূসার তৌরাত ও শরীয়ত অনুসারে বিবাহের মাধ্যমে নারী গর্ভে জন্ম লাভ করেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, তিনি স্বাভাবিক বিবাহের সন্তান, অলৌকিক জন্মের সন্তান নন।

প্রসিদ্ধ আমেরিকান লেখক সি. ড্যানিস ম্যাককিনসি (Claud Dennis McKinsey) ‘বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তি বিশ্বকোষ’ (The Encyclopedia of Biblical Errancy) নামক গ্রন্থে বলেন: “If Joseph was not the genetic father of Jesus Christ, then Jesus could not have been of King David’s seed; thus, not the Messiah. Ergo, Christians must abandon either "The Virgin Birth" or that Jesus was "The Messiah". If the virgin birth is bogus, is anything else written about Jesus trustworthy?” ‘‘যোষেফ/ ইউসুফ যদি যীশুর জৈবিক পিতা না হন তবে যীশু দাউদের বীজ হতে পারেন না। আর সেক্ষেত্রে তিনি মাসীহ বা খ্রিষ্টও হতে পারেন না। খ্রিষ্টানদেরকে দুটোর একটা বাদ দিতে হবে: হয় ‘কুমারী মাতার জন্ম’ তত্ত্ব বাদ দিতে হবে, অথবা যীশুর খ্রিষ্টত্বের দাবি বাদ দিতে হবে। যদি কুমারী-জন্ম মিথ্যা হয় তবে যীশু বিষয়ে অন্য যা কিছু লেখা হয়েছে তা কিভাবে নির্ভরযোগ্য হবে?’’[2]

ম্যাককিনসির এ কথার উপর মন্তব্য করে গ্যারি ডেভানি বলেন:

“Thank you so much Dennis McKinsey! ... Paul was the biggest NT writer about Jesus. Paul said nothing unusual about the birth of Jesus. Doesn’t ‘born under the law’ mean that Mary had married Joseph, had sex with Joseph and bore Jesus legitimately under the law? ... if Mary did maintain her ‘virginity’ throughout her life, as Catholics claim, then Joseph never had sex with Mary. If Joseph never sexually consummated their marriage, under Judeo-Christian law, Mary and Joseph were never legally married.”

‘‘ড্যানিস ম্যাককিনসি, আপনাকে ধন্যবাদ।... নতুন নিয়মের সবচেয়ে বড় লেখক পল। তিনি যীশুর জন্মের বিষয়ে অলৌকিক কিছু বললেন না। মরিয়ম যোষেফের/ ইউসুফের সাথে বিবাহিত হন, তার সাথে মিলিত হন এবং আইনসম্মতভাবে যীশুকে গর্ভধারণ করেন- ‘ব্যবস্থার অধীনে জাত’ কথার অর্থ কি এটাই নয়? ক্যাথলিকরা দাবি করেন যে, মরিয়ম আজীবন কুমারী ছিলেন। এর অর্থ হল যোশেফ কখনোই তাঁর সাথে মিলিত হননি। আর যদি যোষেফ তাঁর স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলনের মাধ্যমে বিবাহকে বৈধ না করেন তবে ইহুদি-খ্রিষ্টান আইন অনুসারে মরিয়ম ও যোষেফ কখনোই ব্যবস্থার অধীনে বৈধভাবে বিবাহিত হননি।’’[3]

সম্ভবত এ সত্য অস্পষ্ট করতে বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ গালাতীয় ৪/৪-এ (made/born of a woman, made/born under the law) ‘‘সৃষ্ট হলেন একজন নারী থেকে, সৃষ্ট হলেন শরীয়তের অধীনে’’ কথাটার অনুবাদে লেখেছে ‘‘সেই পুত্র স্ত্রীলোকের গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন এবং শরীয়তের অধীনে জীবন কাটালেন।’’

মূল পাঠে ‘সৃষ্ট হলেন’ কথাটা দ্বিতীয়বার উল্লেখ করে বলা হয়েছে ‘সৃষ্ট হলেন শরীয়তের অধীনে’। কিন্তু অনুবাদকরা দ্বিতীয় বারে লেখা ‘সৃষ্টি হলেন’ (made) শব্দটা সম্পূর্ণ বাদ দিয়েছেন এবং ‘জীবন কাটালেন’ (lived) শব্দটা যোগ করেছেন।

[1] http://infidels.org/library/modern/jim_meritt/bible-contradictions.html
[2] http://www.thegodmurders.com/id134.html
[3] http://www.thegodmurders.com/id134.html