পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ২. ১০. তালুত দাউদকে চিনতেন অথবা চিনতেন না?

পুরাতন নিয়মের অন্যতম পুস্তক শমূয়েল/ সামুয়েল ভাববাদী বা শামুয়েল নবীর পুস্তক (১ম ও ২য় খণ্ড)। ইহুদি বাইবেলে এটা ৮ম (৮ম ও ৯ম) পুস্তক। খ্রিষ্টান বাইবেলে ৯ম ও ১০ম পুস্তক। এ পুস্তকের মূল আলোচ্য বিষয় ইহুদিদের প্রথম রাজা শৌল (Saul) বা তালুত এবং দ্বিতীয় রাজা ডেভিড (David) বা দাউদ। শৌল ও দাউদ উভয়েই প্রসিদ্ধ রাজা, নবী ও ঈশ্বরের মসীহ বা খ্রিষ্ট ছিলেন। দাউদের পিতার নাম ইংরেজিতে Jesse। বাংলা উচ্চারণ কেরি ও অন্যান্য অনুবাদে ‘যিশয়’ এবং ‘কিতাবুল মোকাদ্দসে’ ‘ইয়াসি’ এবং ‘ইয়াসির’ লেখা হয়েছে। তিনি ‘বেথলেহম’, বেথেলহেম বা বৈৎলেহম (Bethlehem) শহরের অধিবাসী ছিলেন।

শমূয়েল লেখেছেন: ‘‘এই কথা শুনে তালুত ইয়াসিরের কাছে লোক পাঠিয়ে বললেন যেন তিনি তাঁর রাখাল ছেলে দাউদকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। ইয়াসি তখন কিছু রুটি, চামড়ার থলিতে করে এক থলি আংগুর-রস (wine: মদ) ও একটা ছাগলের বাচ্চা একটা গাধার পিঠে চাপালেন এবং সেটা তার ছেলে দাউদকে দিয়ে তালুতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। দাউদ তালুতের কাছে এসে তাঁর কাজে বহাল হলেন। তালুত তাঁকে খুব ভালবাসতে লাগলেন এবং তিনি তালুতের একজন অস্ত্র বহনকারী হলেন। পরে তালুত ইয়াসিকে বলে পাঠালেন, দাউদকে আমার কাজে বহাল থাকতে দাও, কারণ তাকে আমার ভাল লেগেছে। আল্লাহর কাছ থেকে যখন সেই খারাপ রূহ তালুতের উপর আসত তখন দাউদ তাঁর বীণা বাজাতেন। এতে তালুতের ভাল লাগত এবং তিনি শান্তি পেতেন...।’’ (১ শামুয়েল ১৬/১৯-২২: কি. মো.-০৬)

কিন্তু ঠিক পরের ১৭ অধ্যায়ে শমূয়েল নবী ভিন্ন কথা লেখেছেন। এ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে, দাউদ যখন ফিলিস্তিনি বীর গলিয়ত (Goliath) বা জালুতকে হত্যা করে তার মস্তক নিয়ে রাজা তালুতের কাছে আগমন করেন তখন: ‘‘তালুত তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, যুবক, তুমি কার ছেলে? দাউদ বললেন, ‘আমি বেথলেহেম গ্রামের আপনার গোলাম ইয়াসিরের ছেলে।’’ (১ শামুয়েল ১৭/৫৮, মো.-০৬)

একই নবীর লেখা একই পুস্তকে এরূপ বৈপরীত্য! যে যুবক তাঁর কাছে আগে থেকেই কর্ম করতেন, অস্ত্র বহন করতেন ও কাছে বসে বীণা বাজাতেন, যে তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন এবং যাকে বহাল রাখার জন্য তালুত তাঁর পিতার কাছে সংবাদ পাঠালেন, সেই যুবককেই তিনি পরের অধ্যায়ে মোটেও চেনেন না! তাঁর পিতার নামও জানেন না!