১. ২. ৩. খ্রিষ্টধর্মীয় পুরাতন নিয়ম বনাম ইহুদি বাইবেল

উপরের কয়েক প্রকার বাইবেলের আলোচনার জন্য প্রথমে ইহুদি বাইবেলের আলোচনা প্রয়োজন। আমরা দেখেছি যে, ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ইহুদি বাইবেল (Jewish Bible) এবং হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) নামে পরিচিত। ইহুদি বাইবেলই খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, তবে ইহুদি বাইবেল ও খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ও বিন্যাসে পার্থক্য রয়েছে।

খৃস্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি ইহুদি বাইবেলের ‘গ্রীক অনুবাদ’ বা গ্রিক সংস্করণ। ইহুদি বাইবেলের গ্রিক সংস্করণকে সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint) বা সত্তরের কর্ম বলা হয়।

ইহুদিদের ধর্মীয় ও ব্যবহারিক ভাষা হিব্রু। পুরাতন নিয়মের গ্রন্থগুলো হিব্রু ভাষায়  লেখা ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্ডার প্যালেস্টাইন দখল করেন এবং তা গ্রিক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ইহুদিরা গ্রিক নাগরিকে পরিণত হয় এবং ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে গ্রিক ভাষার কিছু প্রচলন শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী পরে, খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৫-২৪৫ সালের দিকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থগুলো গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। কথিত আছে যে, মিসরের শাসক ২য় টলেমি: টলেমি ফিলাডেলফাস (Ptolemy Philadelphus)- এর রাজত্বকালে (খ্রি. পূ. ২৮৫-২৪৬) তাঁর নির্দেশে ৭০/৭২ জন পণ্ডিত তা ‘আলেকজান্ড্রীয় গ্রিক ভাষায়’ অনুবাদ করেন। এই গ্রিক অনুবাদটাই the Septuagint (LXX) বা সত্তরের অনুবাদ বলে প্রসিদ্ধ। একে গ্রিক পুরাতন নিয়মও (Greek Old Testament) বলা হয়। যীশুর সময়ে এ অনুবাদটা প্রচলিত ছিল।

বাহ্যত প্রজাদের মধ্যে প্রচলিত প্রসিদ্ধ ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্ত্ত জানার উদ্দেশ্যে শাসকরা এ অনুবাদ তৈরি করেন। যেমন মুসলিম শাসকদের অনুরোধে সর্বপ্রথম রামায়ণের বাংলা অনুবাদ করা হয়। তবে ক্রমান্বয়ে এ গ্রিক সংস্করণের ব্যবহার ইহুদিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইহুদিরা, বিশেষত ফিলিস্তিনের বাইরে, আলেকজান্দ্রিয়া ও অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী ইহুদিরা হিব্রু ভাষায় দুর্বল হয়ে পড়েন। তারা গ্রিক ভাষা ব্যবহারে অধিক অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। তারা এ গ্রিক বাইবেলের উপর নির্ভর করতে থাকেন। প্রথম প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা এটার উপরেই নির্ভর করতেন। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত প্রায় তিনশত বছর ইহুদিরা এ গ্রিক বাইবেলের উপরেই নির্ভর করতেন। ইহুদি পণ্ডিতরা ইহুদি বাইবেলের হিব্রু সংস্করণ ও গ্রিক সংস্করণকে একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন। উইকিপিডিয়া ‘Septuagint’ প্রবন্ধের ‘Jewish use’ অনুচ্ছেদে লেখেছে: “Pre-Christian Jews, Philo and Josephus considered the Septuagint on equal standing with the Hebrew text.” অর্থাৎ ‘‘খ্রিষ্টপূর্ব ইহুদি ফিলো (মৃত্যু ৫০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং যোসেফাস (মৃত্যু ১০০ খ্রিষ্টাব্দ) সেপ্টুআজিন্ট বা সত্তরের অনুবাদকে হিব্রু ভাষ্যের মত একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন।’’

পঞ্চম খ্রিষ্টীয় শতকের শেষ দিক থেকে ইহুদিরা গ্রিক পাণ্ডুলিপি পরিত্যাগ করে হিব্রু পাণ্ডুলিপির দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে খ্রিষ্টানরা গ্রিক নির্ভরতা অব্যাহত রাখেন। প্রথম খ্রিষ্টীয় শতাব্দী থেকে পরবর্তী প্রায় দেড় হাজার বছর সকল খ্রিষ্টানই গ্রিক পুরাতন নিয়মের উপর নির্ভর করেন। প্রাচীন সকল খ্রিষ্টীয় বাইবেলের ভিত্তি এ ‘সত্তরের অনুবাদ’। উইকিপিডিয়ার ভাষায়: ‘‘The Septuagint is the basis for the Old Latin, Slavonic, Syriac, Old Armenian, Old Georgian and Coptic versions of the Christian Old Testament.’’: ‘‘সেপ্টুআজিন্ট-ই প্রাচীন ল্যাটিন, সস্নাভোনিক, সিরীয়, প্রাচীন আর্মেনিয়ান, প্রাচীন জর্জিয়ান ও কপ্টিক সকল খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ভিত্তি’’ (উইকিপিডিয়া: Septuagint)। সপ্তদশ শতক থেকে প্রটেস্ট্যান্টরা হিব্রু ভাষ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করেন।[1]

এভাবে আমরা দেখছি যে, পুরাতন নিয়মের ক্ষেত্রে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের ভিত্তি হিব্রু সংস্করণ। অবশিষ্ট সকল খ্রিষ্টান বাইবেলের ভিত্তি সেপ্টুআজিন্ট। তবে বাস্তবে আমরা দেখি যে, গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট-এর সাথে ক্যাথলিক ও অন্যান্য বাইবেলের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা নিম্নে হিব্রু ইহুদি বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর পাশাপাশি গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট, ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ স্বীকৃত ‘ক্যানন’ বা বিধিসম্মত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলোর তালিকা প্রদান করছি। উল্লেখ্য যে, মিসরীয়, কপ্টিক, ইথিওপীয়, আর্মেনীয় ইত্যাদি খ্রিষ্টধর্মীয় চার্চের নিকট স্বীকৃত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকাদির ক্ষেত্রে আরো কিছু ভিন্নতা রয়েছে। বিস্তারিত জানতে পাঠক এনকার্টার Bible/Books of the Bible এবং উইকিপিডিয়ার Books of the Bible  ও Septuagint প্রবন্ধগুলো পাঠ করুন:

 

ক্রমিক

ইহুদি বাইবেল

(২৪ পুস্তকে ৩৯)

প্রটেস্ট্যান্ট

৩৯ পুস্তক

ক্যাথলিক

৪৬ পুস্তক

অর্থোডক্স

৫১ পুস্তক

সেপ্টুআজিন্ট

৫৩ পুস্তক

1

Genesis

Genesis

Genesis

Genesis

Genesis

2

Exodus

Exodus

Exodus

Exodus

Exodus

3

Leviticus

Leviticus

Leviticus

Leviticus

Leviticus

4

Numbers

Numbers

Numbers

Numbers

Numbers

5

Deuteronomy

Deuteronomy

Deuteronomy

Deuteronomy

Deuteronomy

6

Joshua

Joshua

Joshua

Joshua (Iesous)

Joshua

7

Judges

Judges

Judges

Judges

Judges

8

1 Samuel

Ruth

Ruth

Ruth

Ruth

9

2 Samuel

1 Samuel

1 Samuel

1 Samuel 

I Samuel

10

1 Kings

2 Samuel

2 Samuel

2 Samuel 

II Samuel

11

2 Kings

1 Kings

1 Kings

1 Kings

I Kings

12

Isaiah

2 Kings

2 Kings

2 Kings

II Kings

13

Jeremiah

1 Chronicles

1 Chronicles

1 Chronicles

I Chronicles

14

Ezekiel

2 Chronicles

2 Chronicles

2 Chronicles

II Chronicles

15

Hosea

Ezra

Ezra

1 Esdras

1 Esdras

16

Joel

Nehemiah

Nehemiah

Ezra (2 Esdras)

Ezra

17

Amos

Esther

Tobit

Nehemiah

Nehemiah (2 books as one)

18

Obadiah

Job

Judith

Tobit (Tobias)

Tobit/ Tobias

19

Jonah

Psalms

Esther

Judith

Judith

20

Micah

Proverbs

1 Maccabees

Esther

Esther with additions

21

Nahum

Ecclesiastes

2 Maccabees

1 Maccabees

1 Maccabees

22

Habakkuk

Song of Solomon

Job

2 Maccabees

2 Maccabees

23

Zephaniah

Isaiah

Psalms

3 Maccabees

3 Maccabees

24

Haggai

Jeremiah

Proverbs

4 Maccabees

Psalms

25

Zechariah

Lamentations

Ecclesiastes

Job

Psalm 151

26

Malachi

Ezekiel

Song of Songs

Psalms

Prayer of Manasseh

27

Psalms

Daniel

Wisdom

Prayer of Manasseh

Job

28

Proverbs

Hosea

Sirach

Proverbs

Proverbs

29

Job

Joel

Isaiah

Ecclesiastes

Ecclesiastes

30

Song of Songs

Amos

Jeremiah

Song of Songs

Song of Solomon

31

Ruth

Obadiah

Lamentations

Wisdom

Wisdom

32

Lamentations

Jonah

Baruch

Sirach

Sirach/ Ecclesiasticus

33

Ecclesiastes

Micah

Ezekiel

Isaiah

Psalms of Solomon

34

Esther

Nahum

Daniel

Jeremiah

Hosea

35

Daniel

Habakkuk

Hosea

Lamentations

Amos

36

Ezra

Zephaniah

Joel

Baruch

Micah

37

Nehemiah

Haggai

Amos

Letter of Jeremiah

Joel

38

1 Chronicles

Zechariah

Obadiah

Ezekiel

Obadiah

39

2 Chronicles

Malachi

Jonah

Daniel

Jonah

40

 

 

Micah

Hosea

Nahum

41

 

 

Nahum

Joel

Habakkuk

42

 

 

Habakkuk

Amos

Zephaniah

43

 

 

Zephaniah

Obadiah

Haggai

44

 

 

Haggai

Jonah

Zachariah

45

 

 

Zechariah

Micah

Malachi

46

 

 

Malachi

Nahum

Isaiah

47

 

 

 

Habakkuk

Jeremiah

48

 

 

 

Zephaniah

Baruch

49

 

 

 

Haggai

Lamentations

50

 

 

 

Zechariah

Letter of Jeremiah

51

 

 

 

Malachi

Ezekiel

52

 

 

 

 

Daniel with additions

53

 

 

 

 

4 Maccabees

 

মিসরীয়-আফ্রিকান কপ্টিক অর্থোডক্স খৃস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম অংশ ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ার অর্থোডক্স টেওয়াহিদো (Orthodox Tewahedo) খৃস্টমণ্ডলী। এ সম্প্রদায় স্বীকৃত ও ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ায় বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলকে অর্থোডক্স টেওয়াহিদো বাইবেল (the Orthodox Tewahedo Bible) বলা হয়। এ বাইবেলের মধ্যে অর্থোডক্স বাইবেলের উপরের ৫১ পুস্তক ছাড়াও নিম্নের অতিরিক্ত পুস্তকগুলো বিদ্যমান: (১) Jubilees, (২) Enoch, (৩) Ezra 2nd, (৪)  Ezra Sutuel, (৫) 4 Baruch, (৬) Josippon,। এছাড়া এ বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান মাকাবীয় পুস্তকগুলো অর্থোডক্স বাইবেলের মাকাবীয় চারটা পুস্তক থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন। ইথিওপীয় বাইবেল বা আবিসিনিয়ান ক্যানন (Abyssinian canon)-এর বিভিন্ন সংস্করণ বা পাণ্ডুলিপির মধ্যে Ascension of Isaiah নামক আরো একটা পুস্তক বিদ্যমান। পাঠক বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়ায়: Orthodox Tewahedo biblical canon, Ascension of Isaiah, Book of Jubilees, Book of Enoch, 1 Esdras, 4 Baruch, Josippon প্রবন্ধগুলো পাঠ করুন।

সুপ্রিয় পাঠক, এখানে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:

প্রথমত: ইহুদি বাইবেল বা তানাখ/তানাক (Tanakh/Tenak)-এর পুস্তকসংখ্যা ২৪, যেগুলোর মধ্যে উপরের ৩৯টা পুস্তক বিদ্যমান। তালিকাটা নিম্নরূপ:

 

(১-৭)

১ থেকে ৭ নং পুস্তক: ৭টা পৃথক পুস্তক।

(৮)

৮ ও ৯ নং পুস্তক: ১ শমূয়েল ও ২ শমূয়েল একটা পুস্তক।

(৯)

১০ ও ১১ নং পুস্তক: ১ রাজাবলি ও ২ রাজাবলি একটা পুস্তক।

(১০-১২)

১২ থেকে ১৪ নং তিনটা পৃথক পুস্তক (যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল)

(১৩)

১৫ থেকে ২৬ নং পর্যন্ত ১২টা পুস্তক একত্রে ‘দ্বাদশ’ (The Twelve/ Trei Asar) (বারজন গৌণ নবী) নামে একটা পুস্তক।

(১৪-২২)

২৭ থেকে ৩৫ নং পর্যন্ত ৯টা পৃথক পুস্তক।

(২৩)

৩৬ ও ৩৭ নং পুস্তকদ্বয় (ইযরা ও নহিমিয়) একত্রে একটা পুস্তক।

(২৪)

৩৮ ও ৩৯ নং পুস্তকদ্বয় (১ বংশাবলি ও ২ বংশাবলি)

 

দ্বিতীয়ত: ইহুদিদের একটা সম্প্রদায় শমরীয় (Samaritan) ইহুদিরা পুরাতন নিয়মের শুধু প্রথম ৫টা গ্রন্থ বিশুদ্ধ ও পালনীয় বলে স্বীকার করেন, যা শমরীয় তৌরাত, শমরীয় পঞ্চপুস্তক বা শমরীয় বৈধ বাইবেল (The Samaritan Pentateuch/ the Samaritan Torah/ The Samaritan canon) নামে প্রসিদ্ধ। বাইবেলের অন্য সকল পুস্তকের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা তারা অস্বীকার করেন। তারা মূল হিব্রু পাণ্ডুলিপির অনুসরণ করেন। এনকার্টায় শমরীয় তৌরাতকে তৌরাতের প্রাচীনতর ভাষ্য (an older text of the first five books of the Bible) বলা হয়েছে। আধুনিক ইহুদি তৌরাত এবং গ্রিক তৌরাতের সাথে শমরীয় তৌরাতের প্রায় ৬ হাজার পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক যুগে আবিষ্কৃত মৃত সাগরের পাণ্ডুলিপি (Dead Sea Scrolls) আবিষ্কারের পর পাশ্চাত্য গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে, ইহুদি বাইবেল ও খ্রিষ্টান বাইবেলের চেয়ে শমরীয় বাইবেল প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোর সাথে অধিক মিল-সম্পন্ন।[2]

তৃতীয়ত: ইহুদি বাইবেল ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের পুস্তকগুলোর সংখ্যা একই। তবে পুস্তকগুলোর ক্রমবিন্যাসে অনেক পার্থক্য। ধর্মগ্রন্থের সূরা বা পুস্তকগুলোর মধ্যে এরূপ অমিল মুসলিম পাঠকের কাছে খুবই অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য বিষয়। ধর্মগ্রন্থের সূরা, অধ্যায় বা পুস্তকগুলোকে এভাবে ইচ্ছামত আগে পরে করা যায় বলে মুসলিমরা ভাবতেও পারেন না। এমনকি কোনো সাধারণ লেখকের সংকলিত ও সম্পাদিত একটা গ্রন্থমালার বইগুলো পরবর্তীকালে কেউ আগে পিছে করলে তা সকল গবেষক ও সমালোচকের নিকট অগ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা বিষয়টাকে হাল্কা হিসেবেই দেখেন।

চতুর্থত: আমরা দেখলাম যে, পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint)-এর মধ্যে ৫৩টা পুস্তক, অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মে ৫১টা পুস্তক, ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মে ৪৬টি পুস্তক এবং প্রটেস্ট্যান্ট পুরাতন নিয়মে ৩৯টা পুস্তক বিদ্যমান। একই ধর্মের একই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে এত পার্থক্য পৃথিবীর আর কোনো প্রসিদ্ধ ধর্মের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আছে বলে জানা যায় না।

‘বাইবেলের বৈধ-বিশুদ্ধ গ্রন্থাবলি: এক গোঁড়া বাইবেল বিশ্বাসী প্রেক্ষাপট:The Canon of the Bible A conservative, bible believing perspective’ নামক আর্টিকেলে (দেখুন http://www.bible.ca/canon.htm) এবং ‘খ্রিষ্টীয় বাইবেল, রোমান ক্যাথলিক বাইবেল, গ্রীক অর্থোডক্স বাইবেলের তালিকা: List of books in the Christian Bible, Roman Catholic Bible, Greek Orthodox Bible’ (দেখুন http://www.bible.ca/b-canon-orthodox-catholic-christian-bible-books.htm) থেকে বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় বাইবেলের মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করছি। উল্লেখ্য যে, এসব ওয়েবসাইটে খ্রিষ্টীয়ান বাইবেল বলতে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেল বুঝানো হয়েছে।

 

 

ইংরেজি নাম

বাংলা নাম

 

Christian's Bible (খ্রিষ্টান বাইবেল)

Roman Catholic Bible

(রোমান ক্যাথলিক বাইবেল)

Greek Orthodox Bible

(গ্রীক অর্থোডক্স বাইবেল)

The Septuagint

(সেপ্টুআ-জিন্ট)

  1.  

1 Esdras

১ ইসদরাস

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

Tobit

 তোবিত

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Judith

যুদিথ

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Additions to Esther (103 Vrs)

ইস্টেরে (১০৩ শ্লোক) সংযোজন

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Wisdom of Solomon

সলোমনের প্রজ্ঞাপুস্তক

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Ecclesiasticus

বিন সিরাহ

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Baruch

বারুক

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Epistle of Jeremiah

যিরমিয়ের পত্র

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Song of the Three Children

তিন শিশুর সঙ্গীত

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Story of Susanna

সুসান্নার গল্প

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Bel and the Dragon

 বেল ও ড্রাগন

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Prayer of Manasseh

মনশির প্রার্থনা

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

1 Maccabees

১ মাকাবীয়

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

2 Maccabees

২ মাকাবীয়

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

3 Maccabees

৩ মাকাবীয়

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

4 Maccabees

৪ মাকাবীয়

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

Psalm 151

গীতসংহিতা ১৫১

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

Psalms of Solomon

সলোমনের গীতসংহিতা

নেই

নেই

নেই

আছে

 

পঞ্চমত: আমরা দেখছি যে, ক্যাথলিক বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৪৬ এবং অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৫১। পক্ষান্তরে তারা সকলেই যে মূল গ্রিক সংস্করণ বা সেপ্টুআজিন্টের উপর নির্ভর করেছেন তার মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ৫৩। এভাবে আমরা দেখছি যে, মূল গ্রিক সেপ্টুআজিন্টের মধ্যে ১৪টা পুস্তক বিদ্যমান যেগুলো ইহুদি ও প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানরা বাতিল বলে গণ্য করেছেন। এগুলোর মধ্য থেকে ৭টা পুস্তক ক্যাথলিকরা গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট ৭টার মধ্যে ৫টা অর্থোডক্সরা গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট দু’টা পুস্তক তিন সম্প্রদায়ই বাতিল করেছেন। আমরা আগেই বলেছি যে, ইথিওপীয়, মিসরীয়, সিরীয় ইত্যাদি প্রাচীন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়গুলোর বাইবেলের মধ্যে এ সকল পুস্তক বিদ্যমান।

ষষ্ঠত: প্রটেস্ট্যানটরা ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মের ৭টা পুস্তককে সন্দেহভাজন বা ‘জাল’ বলে গণ্য করেছেন। প্রায় ১৬০০ বছর পবিত্র বাইবলের অন্তর্ভুক্ত আসমানি গ্রন্থ বা ঐশ্বরিক পুস্তক হিসেবে গণ্য হওয়ার পর প্রটেস্ট্যানটরা সপ্তদশ শতাব্দীতে এগুলোকে বাদ দিয়ে তাদের বাইবেল মুদ্রণ করেন। তবে প্রটেস্ট্যান্টদের স্বীকৃত নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর মধ্যে এ সকল জাল বা বাতিলকৃত বইয়ের উদ্ধৃতি পাওয়া যায়।[3]

[1] উপরের বিষয়গুলোর জন্য উইকিপিডিয়া, এনকার্টা, ব্রিটানিকা ইত্যাদি বিশ্বকোষে নিম্নের আর্টিকেলগুলো দেখুন: Septuagint, Old Testament, Development of the Hebrew Bible canon, Development of the Old Testament canon

[2] উইকিপিডিয়া: The Samaritan Pentateuch, ব্রিটানিকা: biblical literature/ The Samaritan canon, এনকার্টা: Samaria.

[3] বিস্তারিত দেখুন: The New Encyclopedia Britannica, 15th Edition, Vol-2, Biblical Literature, pp883, 932-935. উইকিপিডিয়া: Non-canonical books referenced in the Bible.