জাহমিয়্যাহ অর্থ ‘জাহমের সাথে সম্পর্কিত। জাহ্ম ইবনু সাফওয়ান (মৃত্যু ১২৮ হি.) পারস্যের অধিবাসী ছিলেন। এ ব্যক্তি ইসলামী বিশ্বাসের মধ্যে গ্রীক দর্শন, পারসিক ধর্ম ইত্যাদির মধ্য থেকে অনেক কিছু ঢুকিয়ে দেয়। সে একদিকে ‘জাবারিয়া’ মতে প্রচারক ও প্রবর্তক ছিল। সে প্রচার করত যে, মানুষের কোনোরূপ ক্ষমতা নেই। চাঁদ, সূর্য ইত্যাদি যেমন ইচ্ছাহীনভাবে আবর্তন করে, মানুষও তেমনি ইচ্ছাহীন ক্ষমতাহীনভাবে কলের পুতুলের মত চলমান। পাশাপাশি সে মুরজিয়া মতের প্রচারক ছিল। সে বলত যে, হৃদয়ের জ্ঞান বা মারিফাতই ঈমান এবং অজ্ঞতাই কুফর। সে আরো প্রচার করত যে, জান্নাত ও জাহান্নম এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এছাড়া সে আল্লাহর বিশেষণগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্বীকার বা ব্যাখ্যা করত। সে বলত, যে বিশেষণে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিশেষিত করা যায় সে বিশেষণ আমি আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে রাযি নই। কাজেই আল্লাহকে বিদ্যমান, জ্ঞানী, ইচ্ছাকারী ইত্যাদি কিছুই বলা যাবে না। তবে যে বিশেষণগুলি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সেগুলি তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে, যেমন স্রষ্টা, জীবনদাতা, মৃত্যুদাতা... ইত্যাদি। সে আল্লাহর কালাম বা কথার অনাদিত্ব অস্বীকার করত। সে দাবি করত যে, আল্লাহর কালাম আল্লাহর সৃষ্টি। কাজেই কখনোই বলা যাবে না যে আল্লাহ বলেছেন বা কথা বলেছেন, বরং বলতে হবে যে, আল্লাহ কথা সৃষ্টি করেছেন। এরূপ সকল প্রকারের বিভ্রান্তি সে একত্রিত করে। সে এত বেশি সুস্পষ্টভাবে যুক্তির নামে কুরআনের আয়াতসমূহ অস্বীকার করত যে, তেমন কোনো ব্যাখ্যারও ধার ধারত না। এজন্য ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) ও অন্যান্যুঅনেক ইমাম জাহম ও তার অনুসারীদেরকে সুস্পষ্টরূপে কাফির বলে গণ্য করেছেন। তাঁরা জাহমিয়াদেরকে ‘মুসলিম ফিরকা’ বলে গণ্য না করে ‘অমুসলিম’ বলে গণ্য করেছেন।[2]

পরবর্তীকালে আল্লাহর বিশেষণকে বিকৃত করা বা ব্যাখ্যা করার প্রবণতাকে সাধারণভাবে ‘জাহমিয়্যা’ মতবাদ বলে গণ্য করা হয়।[3] উল্লেখ্য যে, মু’তাযিলা সম্প্রদায় আল্লাহর সিফাত বা বিশেষণ বিষয়ে জাহমী মতবাদের অনুসারী।

[1] দেখুন: বাগদাদী, আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ. ২১১-২১৫।
[2] ড. মুহাম্মাদ আল-খুমাইস, উসূলুদ্দীন ইনদাল ইমাম আবী হানীফাহ, পৃ. ১৮৬-১৯২।
[3] বাগদাদী, আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ. ২১১-২১২।